‘পানিতে ডুবে প্রতিটি মৃত্যুই প্রতিরোধযোগ্য’

বাংলাদেশে বছরে ১৪ হাজারেরও বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। যা এটিকে একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত করেছে। ‘বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে সচেতনতা বাড়াতে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, কমিউনিটি ও ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ। সোমবার (২৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, এটি হৃদয়-বিদারক যে বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে এত মানুষ প্রাণ হারায়। আমরা জানি এ মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্রতিটি শিশুর ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যক্তি, কমিউনিটি ও সরকারকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর পানিতে ডুবে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টি ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে— যেখানে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। বাংলাদেশে, যেখানে প্রতি বছর বন্যায় স্থলভূমির বিশাল একটি অংশ তলিয়ে যায়, সেখানে সচেতনতা ও সাঁতারে দক্ষতার অভাব জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। গ্রামীণ এলাকার শিশুরা— যারা জলাশয়ের আশেপাশে বেড়ে ওঠে, তারাও প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. বারদান জং রানা বলেন, পানিতে ডুবে যাওয়া একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য উদ্বেগ এবং বিশ্বব্যাপী দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ।

তিনি জানান, ডুবে যাওয়া রোধে ডব্লিউএইচও বিভিন্ন কৌশল ও পদক্ষেপ সুপারিশ করে একটি মাল্টিসেক্টরাল উদ্যোগ প্রচার করে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে, আমরা এই ট্র্যাজেডি রোধ করতে পারি।

ইউনিসেফ জানায়, খুব সহজেই পানিতে ডুবে যাওয়া রোধ করা যায়। পরিবার ও কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা, প্রাক-স্কুলের শিশুদের জন্য শিশুযত্ন কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বিনিয়োগ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

সারাবিশ্বে পানিতে ডুবে যাওয়াকে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা করে।