চলতি বছরের ১৯ মার্চ থেকে তামাকজাত পণ্যের সবধরনের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দেওয়ার কথা আইনে বলা হলেও তামাক কোম্পানিগুলো এ আইন বাস্তবায়ন নিয়ে গড়িমসি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ ডিসেম্বর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ মঞ্চের আহবায়ক, বস্ত্র ও পাট সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের উপরিভাগে উভয় পার্শ্বে ছবিযুক্ত সতর্কবাণী মুদ্রণ প্রসঙ্গে একটি চিঠি দেন।
তামাক কোম্পানিগুলোর এই অনীহা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কোঅর্ডিনেটর মো. রুহুল কুদ্দুস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৯ মার্চ থেকে বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের মোড়কে ছবিযুক্ত স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নের পাশাপাশি তিনমাস অন্তর মোড়কের সচিত্র পরিবর্তন করতে হবে।এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কোনও ছাড় দেবে না।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশনের (বিসিসিপি) টোব্যাকো প্যাক সার্ভিল্যান্স সিস্টেম টিপ্যাক এ্যাসেস শীর্ষক এক গবেষণায় জানা যায়, সিগারেটের মোড়কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সিগারেটের মোড়কের ৩০ শতাংশ জায়গাজুড়ে সতর্কবাণী মুদ্রণের বিধান থাকলেও ৫৪ শতাংশ মোড়কের ক্ষেত্রেই সেটি মানা হচ্ছে না। অথচ, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ বাণী প্যাকেটের সামনে ও পেছনে ৩০ শতাংশ জুড়ে থাকতে হবে। ৬টি সতর্কবাণী প্রতি ৬ মাস অন্তর বদল করে সিগারেটের প্যাকেটে বাংলায় ছাপাতে হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান জনগোষ্ঠী ১৬০ মিলিয়ন (বিবিএস)। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে- গ্যাটস,২০০৯ অনুসারে বাংলাদেশে ৪৩% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (৪ কোটি ১৩ লাখ) তামাক সেবন করেন। যার মধ্যে ২৩% (২ কোটি ১৯ লাখ) ধূমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করেন। গ্লোবাল ইয়োথ টোব্যাকো সার্ভে ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েদের ৬.৯ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে মারা যায় ৫৭ হাজার মানুষ, পঙ্গুত্ব বরণ করে ৩ লাখ ৮২ লাখ মানুষ।
সিগারেট বা অন্যান্য তামাকের ভয়াবহতায় বিশ্বের অনেক দেশেই তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সংযোজন করেছে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা। ভারতে সিগারেটের প্যাকেটের মোড়কের সামনে এবং পেছনে ৮৫ শতাংশ স্থান জুড়ে সচিত্র সতর্কবার্তা সংযোজন করার আইন হয়েছে। সিগারেটের প্যাকেটের মোড়কে সতর্কবার্তার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে নেপালে ৯০ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৮৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় প্যাকেটের সামনে ৭৫ শতাংশ এবং পেছনে ৯০ শতাংশ, শ্রীলংকায় সামনে পেছনে ৮০ শতাংশ। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশও সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ৬৫ শতাংশ স্থান জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্যবার্তা জুড়ে দিয়েছে।
প্রজ্ঞার মতে,তামাক কোম্পানি আইনের উর্ধ্বে নয়, তারাও রাষ্ট্রীয় আইন মানতে বাধ্য। পরবর্তী সময়ে তামাক কোম্পানিগুলো স্বাস্থ্য সতর্কবাণী সংক্রান্ত আইন ঠিকমত প্রতিপালন করছে কিনা তা সরকার, তামাকবিরোধী সংগঠন এবং এবিষয়ে অভিজ্ঞ গবেষকদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
/এপিএইচ/আপ-এআর/