অস্ত্রোপচারে শিশুর জন্ম বেসরকারি হাসপাতালে বেশি: গবেষণা

বস্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ, শহুরে মানুষের ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ ও বস্তির ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয়। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) এক জরিপ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সারাদেশে তৃতীয় বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে (বিইউএইচএস) ২০২১-এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরে নিপোর্ট।

জরিপে বলা হয়, বিভিন্ন হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্য সেবার আওতায় হওয়া প্রাতিষ্ঠানিক মোট শিশুর বেশির ভাগের জন্ম হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া বস্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর ৭৭ শতাংশ শিশুর জন্মই হয় অস্ত্রোপচারে। এছাড়া শহরে বসবাসরত ৭৫ শতাংশ ও স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া বস্তির জনগোষ্ঠীর মোট জন্মদানের ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। 

এছাড়াও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) পাওয়া গর্ভধারণ সুবিধার তুলনায় বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবায় সবচেয়ে বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে অস্ত্রোপচারে।

জরিপে উঠে আসে গর্ভধারণ স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া বস্তিবাসীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রোপচার হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে। সবচেয়ে কম হয়েছে এনজিওতে, ২৫ শতাংশ।

গর্ভধারণ স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া বস্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর মাঝেও সবচেয়ে বেশি ৮৭ শতাংশ অস্ত্রোপচার হয় বেসরকারি হাসপাতালে। আর বেসরকারি ও এনজিওর সেবা পাওয়াদের ৫১ শতাংশ অস্ত্রোপচারে হয়।

এছাড়া শহরে গর্ভধারণ স্বাস্থ্য সেবা পাওয়াদের ক্ষেত্রে শিশু জন্মদানে সবচেয়ে বেশি (৮৮ শতাংশ) অস্ত্রোপচার হয় বেসরকারি হাসপাতালে। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় সেবা নেওয়া ৩৭ শতাংশ ও এনজিওতে সেবা নেওয়াদের ৪৭ শতাংশের।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সঠিক ডাটা পেলে কোন কাজ কতদূর এগিয়েছে তার চিত্র ফুটে ওঠে। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও করণীয় ঠিক করা সহজ হয়। আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট জনবল। যে পরিমাণ দরকার তার তুলনায় খুবই কম। ফলে স্বাস্থ্যসেবা অর্জনে কষ্ট হয়। বস্তি ও অন্যান্য এলাকায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে মানুষ। একই সঙ্গে বিদ্যুৎও পাচ্ছে। তবে স্যানিটেশনে অনেক পিছিয়ে আছে।

তিনি বলেন, বস্তি এলাকায় জন্মহার কমছে। বস্তি ও দরিদ্র মানুষের মাঝেও বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। সবক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। বস্তি এলাকায় গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার হার বেড়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির হার বাড়লেও তা এখনও কিছুটা পিছিয়ে। সারাদেশে ৪ হাজার ইউনিট আছে। সেখানে ৮ ঘণ্টা নয়, ২৪ ঘণ্টা চালুর ব্যবস্থা করলে এ হার বাড়বে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেবার মান বাড়াতে হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসার জন্য বেসরকারি কোনও হাসপাতালে গেলেই তাদের সিজারিয়ান অপারেশন করিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজন ছাড়া এটি সরকারি হাসপাতালে হয় না। কারণ সিজারিয়ান অপারেশন হলে তাদের আলাদা কোনও লাভ নেই। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে হলেই অতিরিক্ত সুবিধা।

অনুষ্ঠানে অন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহান আরা বানু, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা।