বিএসএমএমইউ’তে চালু হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু ক্যানসার সেন্টার’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শিগগিরই চালু করা হবে আন্তর্জাতিক মানের ‘বঙ্গবন্ধু ক্যানসার সেন্টার’। ক্যানসার রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও প্রতিরোধে গবেষণার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাপানে ক্যানসার ‘রোগের চিকিৎসা ও ক্যানসার প্রতিরোধে গবেষণা’ বিষয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে এই কথা জানান। জাপানের টোকিওতে অবস্থিত বিশ্বমানের ক্যানসার গবেষণায় পথিকৃৎ ‘ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টার’-এ প্রথম বাংলাদেশি গবেষক ও চিকিৎসক হিসেবে ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ লেকচার প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে শারফুদ্দিন আহমেদ ‘বাংলাদেশের ক্যানসার পরিস্থিতি ও ক্যানসার চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা’ শীর্ষক লেকচার দেন। হাইব্রিড পদ্ধতির এ লেকচারে জাপানিজ গবেষক ছাড়াও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্যানসার গবেষকগণ, গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীরা ও বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। তারা লেকচার পরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশের ক্যানসার চিকিৎসা ও গবেষণার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন।

লেকচার পরবর্তী এক বিশেষ গোল টেবিল বৈঠকে উপাচার্য ক্যানসার চিকিৎসার উন্নয়নে ‘গবেষণা ও আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা’ নিশ্চিতকল্পে শিগগিরই ‘বিএসএমএমইউ’তে 'বঙ্গবন্ধু ক্যানসার সেন্টার' প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। এ বিষয়ে তিনি জাপানের ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টারের সহযোগিতা কামনা করেন এবং পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে ক্যানসার বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ ও ক্যানসার রেজিস্ট্রি চালুর ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছান।

গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাপানের ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টারের ‘ডিভিশন অব প্রিভেনশন’- এর প্রধান ড. মানামি ইনোউয়ে, ডিভিশন অব ইন্টারন্যাশনাল হেলথ পলিসি রিসার্চ-এর প্রধান ড. তমোহিরো মাৎসুদা, সেকশন হেড (ডিভিশন অব প্রিভেনশন) ড. সারাহ কে আবে, ডিভিশন অব ইন্টারন্যাশনাল হেলথ পলিসি রিসার্চের স্টাফ সায়েন্টিস্ট ড. লরেলিন গ্যাটেলিয়ার, হামামাৎসু ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. শাফিউর রহমান, হিতোৎসুবাশি ইন্সটিটিউট ফর এডভান্সড স্টাডি’র রিসার্চ এসোসিয়েট ড. রাশেদুল ইসলাম ও ইউনিভার্সিটি অব টোকিও'র পিএইচডি ফেলো ড. তাজবীর আহমেদ।

এছাড়াও ক্যানসার নিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় 'ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টার হসপিটালের ডিরেক্টর (ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ক্লিনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট) ড. কেনিচি নাকামুরা শারফুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনায় ‘এশিয়ান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস নেটওয়ার্ক ফর ক্যানসার প্রোজেক্ট’ এর আওতায় ক্যানসার গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা বিষয়ে তিনি উপাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং প্রশাসনিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

এ সময় ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশি চিকিৎসকদের জন্য আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং জাপানের ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টার হসপিটালের সঙ্গেও সমন্বিতভাবে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা ও গবেষণা বিষয়ে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও দেশকে তুলে ধরতে ও গবেষণা কার্যক্রমে সকলকে সম্পৃক্ত করতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই আমেরিকা, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্সটিটিউটের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছি। জাপানের ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এ আলোচনা-সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।’

বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসা ও গবেষণার মানোন্নয়নে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের’ বঙ্গবন্ধু ক্যানসার সেন্টার' গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।