আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর,বি অত্যাধুনিক নেক্সট-জেনারেশন সিকোয়েন্সিং (এনজিএস)-ভিত্তিক ক্যানসার নির্ণয় সেবাদান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) থেকে আইসিডিডিআর,বি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে এই সেবা। বাংলাদেশে সঠিক ও সহজলভ্য ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করে আইসিডিডিআরবি।
দেশের ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘদিনের একটি চাহিদা ছিল— বিদেশে না পাঠিয়ে দেশেই যেন অত্যাধুনিক নির্ভরযোগ্য জিনোম সিকোয়েন্সিং-ভিত্তিক ক্যানসার পরীক্ষা চালু করা সম্ভব হয়। বর্তমানে অনেক রোগীকে ক্যানসার পরীক্ষার জন্য বিদেশে নমুনা পাঠাতে হয় ও রিপোর্টের জন্য ৪-৫ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়, যা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। আবার অনেক ক্ষেত্রে ফলাফলও নির্ভরযোগ্য হয় না।
আইসিডিডিআর,বি জানায়, জিনোম সেন্টার আন্তর্জাতিকভাবে প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে অত্যাধুনিক এনজিএস মেশিন ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, এবং দুই সপ্তাহের মধ্যেই মানসম্পন্ন রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তিভিত্তিক চিকিৎসা ব্যাবস্থাপনায় চিকিৎসকদেরকে সহায়তা করবে। রিপোর্টে ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসায় সম্ভাব্য কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতির নির্দেশনাও যুক্ত থাকবে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করবে বলা আশা করা যায়। দেশেই জিনোম সিকোয়েন্সিং-ভিত্তিক ক্যানসার নির্ণয় ব্যক্তিভিত্তিক চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ| অতীতে এটি সম্ভব ছিল না।
আইসিডিডিআর,বি-র সংক্রামক রোগ বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী ও ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র পরিচালক ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নির্ভুল ও সহজলভ্য ক্যানসার নির্ণয়ের লক্ষ্যে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছি। বিশ্বমানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদার কর্মীর দিয়ে অত্যাধুনিক অবকাঠামো প্রয়োগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও সর্বোচ্চ গুণমান নিশ্চিত করে আমরা নেক্সট-জেনারেশন সিকোয়েন্সিং-ভিত্তিক ক্যানসার নির্ণয়ের সক্ষমতা অর্জন করেছি। আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো— ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ও রোগীদের জন্য সময়োপযোগী ও নির্ভরযোগ্য ফলাফল প্রদান করা, যা ক্যানসার চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।’
আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদের অনুপ্রেরণায় এই জীবন রক্ষাকারী এই সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভবপর হয়েছে। ড. তাহমিদ আইসিডিডিআর,বি জিনোম সেন্টারকে দেশের ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সহায়তা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে কৌশলগত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
ড. তাহমিদ বলেন, ‘নির্ভুলভাবে ক্যানসার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এর প্রয়োজনীয়তা আমরা উপেক্ষা করতে পারিনি। আমাদের লক্ষ্য হলো, ক্যানসারের মতো জটিল সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ফলাফলের জন্য যেন কারও সপ্তাহের পর সপ্তাহ উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করতে বা বিদেশে যেতে না হয়। আমরা দেশের ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি— রোগীদের চিকিৎসায় এই সেবাটির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে। এটি শুধু একটি সেবা নয়— এটি ক্যানসার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসক ও রোগী সব পক্ষের জন্য আশা, আস্থা এবং নির্ভুল ফলাফল প্রদানের একটি প্রতিশ্রুতি।’
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্যানসার কংগ্রেসে অংশ নিতে আসা সার্ক দেশের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, দ্য ল্যানসেট অনকোলজি এডিটোরিয়াল বোর্ডের সদস্য এবং বাংলাদেশের অনকোলজি ক্লাবের একটি প্রতিনিধিদল আইসিডিডিআর,বি-র জিনোম সেন্টার পরিদর্শন করেন। তারা আইসিডিডিআর,বি-র বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা ও জিনোম সিকোয়েন্সিং-ভিত্তিক ক্যানসার নির্ণয়ের সক্ষমতার প্রশংসা করেন।
আইসিডিডিআর,বি জিনোম সেন্টার ক্যানসারের দ্রুত ও নির্ভুল নির্ণয়ের মাধ্যমে এর ভয়াবহতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে মনে করে। জিনোম সেন্টারে স্তন, ফুসফুস, কোলন, ডিম্বাশয় ও রক্তের ক্যান্সারের জিনোম সিকোয়েন্সিং-ভিত্তিক অত্যাধুনিক পরীক্ষা করা হবে এবং তা চিকিৎসকদের সময়মতো কার্যকর চিকিৎসা দিতে সহায়তা করবে। রোগীদের সুবিধার্থে, মহাখালী, মিরপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি, উত্তরা, নিকেতন, গুলশান এবং বারিধারায় অবস্থিত আইসিডিডিআর,বি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।