বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্মূলে সর্বস্তরের অংশগ্রহণ জরুরি

বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্মূলে সব মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন এ নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা। আগামী ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এ উপলক্ষে বুধবার (২২ মার্চ) ঢাকার বনানীর হোটেল শেরাটনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত ইউএসএআইডি’স অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি)। সেখানে এই মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের ইনফেকশাস ডিজিজ টিম লিড ডা. সামিনা চৌধুরী এবং আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক  ড. তাহমিদ আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য–‘হ্যাঁ! আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি!’ এবারের প্রতিপাদ্যে যক্ষ্মা নির্মূলে নেতৃত্ব, বিনিয়োগ, উদ্ভাবন এবং সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২৩ সাল যক্ষ্মা নির্মূল কার্যক্রমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর, যেহেতু আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যক্ষ্মা বিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্মূলের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করতে সর্বস্তরের কার্যকর ভূমিকা বিশেষভাবে আলোচিত হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার দেশের বর্তমান যক্ষ্মা পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা প্রদান করেন।

ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার উল্লেখ করেন, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং সহযোগী সংস্থাগুলো গত কয়েক দশকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ২৩ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে। ২০১৫ সালে যেখানে প্রতি ১ লাখে প্রায় ৪৫ জন লোকের মৃত্যু হতো, সেখানে ২০২১ সালে যক্ষ্মায় মৃত্যু প্রতি লাখে ২৫ জনে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, ওষুধ-প্রতিরোধী যক্ষ্মার পরিষেবাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে যক্ষ্মা বিষয়ক স্বাস্থ্য সেবা জনসাধারণের হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রচলিত কষ্টকর চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে সম্পূর্ণ মুখে সেবনযোগ্য স্বল্পমেয়াদী ওষুধ-প্রতিরোধী চিকিৎসা পদ্ধতি যক্ষ্মা চিকিৎসায় একটি বড় পরিবর্তন এনেছে।

তিনি বলেন, এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনও যক্ষ্মার উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি হিসেবে পরিগণিত হয়, যেখানে প্রতি মিনিটে একজন ব্যক্তি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২১ সালে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার লোক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয় এবং ৪২ হাজার জন মারা যায়। অর্থাৎ প্রতি ১২ মিনিটে যক্ষ্মার কারণে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির নেতৃত্বে আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত ইউএসএআইডি’স এসিটিবি কার্যক্রম ২০২০ সালের মার্চ মাসে সূচনার পর থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে, যক্ষ্মা রোগ সনাক্তের হার বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। ইউএসএআইডি’স এসিটিবি কিভাবে যক্ষ্মা মোকাবেলায় সাফল্য অর্জন করেছে, তার কিছু গল্প অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে লোকগান-গম্ভীরার তালে তালে পুতুলনাচ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে যক্ষ্মা বিষয়ক তথ্যনির্ভর একটি পরিবেশনাও উপস্থাপন করা হয়। যা শিশুদের যক্ষ্মা বিষয়ে রাজশাহী বিভাগে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছে।

আলোচনা সভায় শিরিন আখতার, সুবর্ণা মুস্তাফা, আরমা দত্ত, রাশেদ খান মেননসহ উপস্থিত ১৮ জন সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য সংসদ সদস্যরা বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্পৃক্ততা এবং অঙ্গীকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন।