ডেঙ্গু টিকার আরও ট্রায়াল করতে চায় আইসিডিডিআর,বি

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একটি সম্ভাবনাময় ডেঙ্গু টিকার গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের সঙ্গে আইসিডিডিআর,বি’র পরিচালিত এই যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই উপযোগী এই টিকা। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘টিভি-০০৫’। সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি এ টিকার দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। এই টিকার বাণিজ্যিক উৎপাদনের আগে আরও কয়েক ধাপ ট্রায়ালের প্রয়োজন আছে। সেই কাজটাও করতে চাচ্ছে আইসিডিডিআর,বি। 

বুধবার (১ নভেম্বর) মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইসিডিডিআর,বি) টিকার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

আইসিডিডিআর,বি’র জৈষ্ঠ বিজ্ঞানী ও প্রধান গবেষক ডা. রাশেদুল হক বলেন, ‘জাপান ও ইন্দোনেশিয়া এর আগে দুটি টিকার নিবন্ধন পেলেও তা ব্যাপকভাবে কার্যকর নয়। এ বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘টিভি-০০৫’ ডেঙ্গুর টিকার দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষ করেছে বাংলাদেশ। ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ১৯২ জনের মধ্যে ১৪২ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ১৮০ দিন পর ফলাফলে দেখা যায়, টিকাটির বিপক্ষে গুরুত্বর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রমাণ নেই। যেটি সেরোটাইপ ডেন টু এর বিরুদ্ধে ৯৯ শতাংশ, ডেন থ্রির বিরুদ্ধে ৯৬ শতাংশ, ডেন ফোরের বিরুদ্ধে ৮৭ শতাংশ এবং ডেন ওয়ানের বিরুদ্ধে ৮৩ শতাংশ কার্যকর।’

আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই, সব ধাপের ট্রায়াল শেষে বাংলাদেশে উৎপাদন হোক এই টিকা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রয়োজন। এর পেছনে অনেক কর্মযজ্ঞ রয়েছে। সরকারের সহযোগিতায় এটি সম্ভব হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেটাই করবো সেটার উদ্দেশ্য হচ্ছে— সবার কাছে যেন যায়। আমরা ইতোমধ্যে সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা এই কাজটি আরও করতে চাই। কারণ, এই কাজটি করার জন্য ট্র্যাক রেকর্ড দরকার। এখানে যারা আছেন তাদের সেই ট্র্যাক রেকর্ড আছে।’

আইসিডিডিআর,বি’র সংক্রামক রোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র ডিরেক্টর ও স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানী ড. ফিরদৌসী কাদরী বলেন, ‘আমরা এখনও পর্যন্ত যতগুলো টিকার কাজ করেছি, সবগুলো সরকারের সঙ্গে করেছি। আমরা এখন ঠিক বলতে পারছি না যে, পরবর্তী ফেইজে কীভাবে যাবো। যাদের কাছে টিকা তৈরি আছে, তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। ভবিষ্যতে বুঝতে পারবো যে, আমরা কত বড় আকারে পরবর্তী ট্রায়ালগুলো করতে পারবো। সেটা আমাদের চিন্তার মধ্যে আছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ফেইজ-২ বি আরও  বড় আকারের ট্রায়াল। এটিতে টিকা কীভাবে কাজ করছে, সংক্রমণ হচ্ছে কিনা, সেটা দেখা হবে। ফেইজ থ্রিতে বড় ট্রায়াল হয় ১০-২০ হাজার মানুষের ওপর। আমরা সবরকমেরই চিন্তা করছি। বড় আকারের ট্রায়াল আসলে নির্ভর করে কে স্পন্সর করবে, কতটুকু টিকা লাগবে বা কতটুকু এভেইলেবল আছে।’