জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চিকিৎসকদের কাছে আমরা ঋণী: সেলিনা হোসেন

বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেছেন, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা চিকিৎসকদের কাছে ঋণী হয়ে থাকি। চিকিৎসকরা আমাদের ভালো রাখেন। কখনও নতুন জীবন দেন। সনাতনরা বলতেন, বৈদ্যিরূপী নারায়ণ। পশ্চিমে বলে, সেকেন্ড গড। কথাটা কিন্তু সত্য।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম পুনর্মিলনী সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আমার জীবনে এ রকম কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। ছোটবেলায় আমি একবার ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। সবাই ধরে নিয়েছিল, আমি হয়তো বাঁচবো না। কিন্তু আমি বেঁচে আছি। একজন দেবতুল্য চিকিৎসক ছিলেন আমার সেই বেঁচে থাকার নেপথ্যে। বয়স হয়েছে, এখনও আমাকে চিকিৎসকদের সেবা, পরামর্শ নিতে হয়। আমার দিন কাটে ডাক্তার, নার্স আর নানারকম ওষুধ-পথ্যের সান্নিধ্যে। ডাক্তাররা ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট। মানুষের জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়াবার সৌভাগ্য সবার হয় না। প্রকৃতি যাকে যোগ্য মনে করে সে-ই এই সৌভাগ্য পায়।’

আমাদের দেশের চিকিৎসকরা অনেক সীমাবদ্ধ সুবিধায় সেবা দিয়ে থাকেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা শুধু চিকিৎসাই দেন তা নয়। আমাদের সব জাতীয় আন্দোলনে তারা ছিলেন অগ্রভাগে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন সবখানেই চিকিৎসকরা ছিলেন সামনের সারিতে। ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. মিলন– আমাদের ইতিহাসের একেকটা রক্তস্নাত উজ্জ্বল নাম। আমাদের দেশের চিকিৎসকরা অনেক সীমাবদ্ধ সুবিধায় সেবা দিয়ে থাকেন। এত সীমাবদ্ধতার ভেতর এমন সেবা দেওয়া কঠিন। আয়তনের তুলনায় এ দেশের মানুষ অনেক বেশি। রোগ-শোকও বেশি। তবু তারা কাজ করে যাচ্ছেন।’

সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে যে কয়েকটি খাতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার পেয়েছেন তার বেশিরভাগই স্বাস্থ্য খাতে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘চিকিৎসকরা বিশেষজ্ঞ হন আমাদের আরও ভালভাবে সেবা দেওয়ার জন্য, আরও বিশেষায়িত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশে ডাক্তারদের উচ্চশিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান দেশের প্রথম পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জাতির জনকের নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, কাজী নজরুল ইসলামসহ দেশের অনেক বরেণ্য মানুষ।’

বাংলা একাডেমির সভাপতি আরও যোগ করেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। তার প্রথম পুনর্মিলনী একটি ঐতিহাসিক আয়োজন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা, যারা সারা দেশের মানুষকে সেবা দিচ্ছেন, তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন এই মিলনমেলায়। এই আনন্দঘন মুহূর্ত সবার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। নিশ্চয়ই আপনাদের কঠিন কর্মময় জীবনে এই আনন্দটুকু রসদ হয়ে কাজ করবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও অ্যালানাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য জাকিয়া সুলতানা।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ। অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন–সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, বর্তমান উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ শিকদার, অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন মিয়া, বর্তমান ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, অধ্যাপক ডা. দেবতোষ পাল, ইউজিসির অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জী, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল প্রমুখ।