অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কমাতে ভ্যাকসিনের গুরুত্ব নিয়ে কর্মশালা

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গ্লোবাল অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স পার্টনারশিপের (জিএআরপি)  সহযোগিতায় আইসিডিডিআর-বি’র উদ্যোগে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অ্যান্ড ভ্যাকসিনস’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর গোল্ডেন টিউলিপ হোটেলে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

এতে জানানো হয়, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি— যা সম্ভাব্যভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতির কার্যকারিতা হ্রাস করে। ভ্যাকসিনগুলো রোগ সংক্রমণ হ্রাস করার মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হ্রাস করে এএমআর  প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

জিএআরপি বাংলাদেশের চেয়ার ও আইসিডিডিআর-বি’র বিজ্ঞানী ড. ওয়াসিফ আলী খান অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়ে  ২০১৬ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে জিএআরপি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাফল্য তুলে ধরেন। বাংলাদেশে এএমআর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাধান খুঁজতে সবাইকে আলোচনায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ভারতের ওয়ান হেলথ ট্রাস্টের জ্যেষ্ঠ গবেষণা বিশ্লেষক ঋষিরাজ ভগবতী ‘এএমআর মোকাবিলায় ভ্যাকসিনের গুরুত্ব জানানো:বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট থেকে’ শীর্ষক একটি উপস্থাপনা দেন। তিনি জিএআরপি উদ্যোগের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে বলেন, ‘জিএআরপি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে রোগ প্রতিরোধ ইস্যুর সঙ্গে এএমআর’কে যুক্ত করার দিকে মনোনিবেশ করছে। টিকাদানের মাধ্যমে শুধু রোগের বোঝা কমানো যায় না, জনসংখ্যার মধ্যে এএমআর  কমানো যায়।’

বিএসএমএমইউ'র ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বাংলাদেশের এএমআর পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করেন।

আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘প্রাণীর পাশাপাশি মানুষের মধ্যেও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ব্যাপক, যা উপেক্ষা করা যায় না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এএমআর  নিয়ে কাজ করছি। আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে, আমরা জানি যে ফাঁকগুলো কোথায় রয়েছে। তবে আমরা এখনও জানি না— কীভাবে এগুলো মোকাবিলা করা যায়। আমাদের নীতিনির্ধারকদের এখনই অবহিত করা দরকার, যাতে আমরা এএমআর  নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. তানভীর হোসেন বাংলাদেশে ইপিআই এবং এএমআর-এ টিকাদানের ভূমিকা সম্পর্কে উপস্থাপন করেন এবং ক্রমবর্ধমান এএমআর উদ্বেগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন প্রবর্তনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশে এএমআর  নিয়ন্ত্রণে করণীয় তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এএমআর-সিডিসির  ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. অনিন্দা রহমান এএমআর, এএমআর সার্ভিলেন্স, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল স্টুয়ার্ডশিপ গাইডলাইন সম্পর্কিত কৌশলগত পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি জানান, আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআর-বি দেশে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরির প্রশিক্ষণ জোরদারে কাজ করছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ তার বক্তব্যে ভবিষ্যৎ চিকিৎসকদের শিক্ষিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সিডিসি’র উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক চিকিৎসক আছেন, যারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের নৈতিক ব্যবহার সম্পর্কে অবগত নন। ইন্টারেক্টিভ আলোচনা থেকে এটি খুব স্পষ্ট যে, তাদের শিক্ষিত এবং সচেতন করা দরকার।

ওয়ান হেলথ ট্রাস্টের অর্থায়নে আয়োজিত এই কর্মশালায় বিশেষজ্ঞ, গবেষক, নীতিনির্ধারক এবং সরকারি প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।