X
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
১১ আষাঢ় ১৪৩২

মহামারিতে বেশি ক্ষতির শিকার অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবী নারীরা: গবেষণা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৫ জুন ২০২৫, ১৮:০৪আপডেট : ২৫ জুন ২০২৫, ২১:৩২

বাংলাদেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি কর্মজীবী নারী অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, যারা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন। মহামারির কারণে নারী-পুরুষ উভয়ের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শহুরে বস্তি এবং পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীদের মহামারি মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশের শহরের অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলোতে বসবাসকারী কর্মজীবী নারীদের মধ্যে বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতির জন্য সিস্টেম শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে এমন তথ্য জানানো হয়। বুধবার (২৫ জুন) গবেষণার তথ্য উপাত্ত নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে আইসিডিডিআর,বি। এতে সহযোগিতা করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কানাডার সিককিডস। এই গবেষণায় আর্থিক সহায়তা দিয়েছে কানাডার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার।

আইসিডিডিআর,বি-র মহাখালীর সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই সেমিনারে ‘ওম্যান রাইজ’ গবেষণার মূল ফলাফল এবং নীতিগত সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও নীতিনির্ধারকরা আলোচনায় অংশ নেন।

ডা. সোহানা শফিকের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘ওম্যান রাইজ’ গবেষণাটি মহামারির আগে, চলাকালীন এবং পুনরুদ্ধারের সময় বস্তি ও কারখানায় কর্মরত নারীদের অভিজ্ঞতা গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছে। ঢাকা ও গাজীপুরে আইসিডিডিআর,বি-র আরবান হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সারভেইল্যান্স সিস্টেম সাইট এবং গাজীপুরের ছয়টি তৈরি পোশাক কারখানায় এই গবেষণা চালানো হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সীমিত সম্পদের শহুরে পরিবেশে জেন্ডার, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যের পারস্পরিক প্রভাব বোঝা। মহামারি প্রতিরোধের সক্ষমতা বাড়াতে একটি বিশেষ কৌশল তৈরি ও তার কার্যকারিতা মূল্যায়নে সিস্টেম থিংকিং এবং জেন্ডার-সংবেদনশীল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, আমি বিশ্বাস করি এই গবেষণার ফলাফল আমাদের সবাইকে ভবিষ্যতের যেকোনও মহামারির জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে। আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা আবারও বাড়ছে। তবে এটি আমাদের চলমান কাজগুলোকে আরও পরিশুদ্ধ ও সমৃদ্ধ করারও একটি সুযোগ।

এরপর ড. সোহানা গবেষণার মূল দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি দেখান, কীভাবে কোভিড-১৯ মহামারিতে বস্তি ও কারখানায় কর্মরত নারীরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে পড়েছিলেন এবং শহুরে স্বাস্থ্যসেবায় কী ধরনের ফাঁকফোকর ছিল। পাশাপাশি, গবেষণার মাধ্যমে প্রয়োগ করা বিশেষ উদ্যোগগুলো কীভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তাও তিনি বিস্তারিত জানান।

কেস স্টাডি হিসেবে মিরপুর বস্তির এক ২৮ বছর বয়সী গৃহকর্মী জানান, মহামারির সময় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে খরচের চাপে তাকে কানের দুল বিক্রি করতে হয়েছে এবং ঋণ নিতে হয়েছে, যার ফলে তার মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এর পরোক্ষ প্রভাব হিসেবে কর্মসংস্থান কমেছে এবং খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সুনির্দিষ্ট হস্তক্ষেপের ফলে বেশকিছু ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এসেছে। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের বিস্তার পথ সম্পর্কে জ্ঞান সামগ্রিকভাবে ২৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের মধ্যে ৩৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা সার্বিকভাবে ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের মধ্যে ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান সামগ্রিকভাবে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আনুষ্ঠানিক খাতের ১৮ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ কর্মী উপকৃত হয়েছেন। হাত ধোয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে জ্ঞানও আনুষ্ঠানিক খাতের ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের ২৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ কর্মীদের মধ্যে বেড়েছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অনুশীলনও সামগ্রিকভাবে ১৫দশমিক ৯৫ শতাংশ উন্নতি হয়েছে, যা আনুষ্ঠানিক খাতের ১৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতের ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ উভয় ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান। কর্মজীবী নারীদের মধ্যে খাদ্যের বৈচিত্র্য সামগ্রিকভাবে ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে আনুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের মধ্যে এটি বৃদ্ধি পেয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী এবং নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র ফ্যাকাল্টি ড. হালিদা হানুম আখতার।

মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, আমি অনুরোধ করবো, এই গবেষণার ফলাফল নীতিনির্ধারকদের কাছে পাঠানোর জন্য, যাতে আমরা আমাদের উদ্যোগগুলোর যথাযথ পর্যালোচনা করতে পারি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সহযোগিতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে আমরা পুরো সিস্টেমকে আরও উন্নত করতে পারি।

আইসিডিডিআর,বি-র হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. সারাহ স্যালওয়ে ধন্যবাদ জানান। আইইডিসিআর-এর পরিচালক এবং এই গবেষণার সহ-প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন সমাপনী বক্তব্যে ভবিষ্যতের মহামারি মোকাবিলায় প্রমাণ-ভিত্তিক ও সহযোগিতামূলক পদ্ধতির গুরুত্ব তুলে ধরেন। এছাড়া, সরকারি অংশীজনদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং শহরের দরিদ্র কর্মজীবী নারীদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার পরিধি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

/এসও/এপিএইচ/ 
সম্পর্কিত
বিজনেস পিচ কম্পিটিশন: পুরস্কার পেলেন তিন নারী উদ্যোক্তা
প্লাস্টিক-দূষণ রোধে ও নগর স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে আইসিডিডিআর,বি’র উদ্যোগ
নারীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে: ড. দেবপ্রিয়
সর্বশেষ খবর
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালকে নিয়ে যা জানালো ডিবি
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালকে নিয়ে যা জানালো ডিবি
পিরোজপুর আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
পিরোজপুর আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
ইতালিয়ান ক্লাবে যাচ্ছেন মদরিচ, বেতন কত জানেন?
ইতালিয়ান ক্লাবে যাচ্ছেন মদরিচ, বেতন কত জানেন?
‘মব জাস্টিস’ মানবতার শত্রু: তারেক রহমান
‘মব জাস্টিস’ মানবতার শত্রু: তারেক রহমান
সর্বাধিক পঠিত
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
মেধাবীদের টানতে যুক্তরাজ্যের বিশেষ প্রকল্প, বাংলাদেশিদের জন্য সম্ভাবনা
মেধাবীদের টানতে যুক্তরাজ্যের বিশেষ প্রকল্প, বাংলাদেশিদের জন্য সম্ভাবনা
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
বদলির আদেশ ছিঁড়ে এনবিআরে প্রতিবাদ
বদলির আদেশ ছিঁড়ে এনবিআরে প্রতিবাদ