পৃথিবীর ১৪টি ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ সড়ক (ফটোস্টোরি)

‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো’— ভ্রমণে এই গান গুনগুন করে সবার মনে। যেতে যেতে চারপাশের দর্শনীয় দৃশ্য জার্নিকে করে তোলে উপভোগ্য। তবে সব চলার পথ কিন্তু একরকম নয়। কোনও কোনও পথ এককথায় ভয়ংকর সুন্দর! এগুলোর ছবি দেখলেই চুল খাড়া হয়ে যেতে পারে অনেকের। এমনই ১৪টি অবিশ্বাস্য পথ ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। বুকে সাহস না থাকলে ভুলেও এসব সড়কে যাবেন না!

Skardu Road, Pakistanস্কার্দু রোড, পাকিস্তান
পাকিস্তানের বালতিস্তানের জিলজিত নামক স্থানে রয়েছে দর্শনীয় ও বিপজ্জনক পাহাড়ি পথটি। এটি ১০৪ মাইল দীর্ঘ। সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে ৪ হাজার ৯০০ ফুট উঁচুতে সিন্ধু নদীর পাশে জিলজিতের কারাকোরাম হাইওয়েতে শুরু হয়েছে সড়কটি। এই পথের গন্তব্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ৩০৩ ফুট ওপরে স্কার্দু জেলার একটি শহর। ১৯৮২ সালে চীনা প্রকৌশলীদের সহযোগিতায় সড়কটি গড়ে তোলেন পাকিস্তান সেনা প্রকৌশলীরা এবং চীনের প্রকৌশলীরা রাস্তাটি যৌথভাবে তৈরি করেন।

North Yungas Road, Boliviaনর্থ ইয়ুঙ্গাস রোড, বলিভিয়া
বলিভিয়ার ইয়ুঙ্গাস অঞ্চলের লা পাজের ৩৫ মাইল উত্তর-পূর্বকোণে অবস্থিত পথটি। লা পাজ থেকে এটি চলে গেছে কোরাইকোর দিকে। ২০০৬ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, এই সড়কে প্রতি বছর ২০০ থেকে ৩০০ যাত্রী নিহত হয়। এমনকি কিছু কিছু জায়গায় ‘বিপদ সংকেত’ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। বর্ষাকালে বৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে পথ দেখার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটে। তখন বৃষ্টির পানি সড়কটিকে পরিণত করে কর্দমাক্ত পিচ্ছিল মাঠে! গ্রীষ্মকালে পাহাড়ধস হয় ঘনঘন। এছাড়া যানবাহন চলাচলে সৃষ্ট ধুলার কারণে সামনে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়েও দেখা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়!

St. Gotthard Pass, Switzerland1সেন্ট গথার্দ, সুইজারল্যান্ড
আল্পস পর্বতমালার সুইস অংশের উত্তর-দক্ষিণ রুটে যাওয়ার দুটি মূল রুটের একটি হলো সেন্ট গথার্দ। এটি দেখতে দীর্ঘ সরীসৃপের মতো। সুইস ইতিহাসে মধ্যযুগে পরিবহনের ক্ষেত্রে গথার্দের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রাস্তাটির বেশিরভাগ অংশই সুরক্ষিত নয়। তাই চলার পথে সামান্য ভুলে ঘটতে পারে বড় বিপদ।

Untitled3লেক থুন, সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের আরেকটি সড়কের কথা না বললেই নয়। থুন হ্রদের সঙ্গে বয়ে গেছে এটি। এর একপাশে ছড়িয়ে আছে বিপজ্জনক পর্বতমালা। সেখানকার চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করতে হলে ঢাল, সুড়ঙ্গ ও আঁকাবাঁকা মোড়ের বাধা-বিপত্তি পেরোতে হবে। পাশে বয়ে চলা শান্ত থুন হ্রদের আছে আপন রহস্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সুইস সরকার অব্যবহৃত তিন হাজার টন সামরিক ভাণ্ডার ফেলে দেয় সেখানে।

Zoji La mountain pass, Indiaযোজি লা, ভারত
লাদাখ ও কাশ্মির উপত্যকা মাঝে এই সড়কটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১ হাজার ৫৭৫ ফুট ওপরে। সড়কটি এতই সরু যে, দেখলে বিশ্বাস হবে না এখান দিয়ে পাশাপাশি দুটি গাড়ি একসঙ্গে চলাচল করতে পারে। গবাদি পশু চলাচলের জন্যও ব্যবহার হয় এই পথ। তাই পথে যদি গরু, ছাগল ও ভেড়ার পাল চলে আসে তাহলে সেগুলো চলে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

Hana Highway, Hawaiiহানা হাইওয়ে, হাওয়াই
চারপাশে প্রচুর বাঁশবাগান, পাহাড়-পর্বত ও ঝরনাসহ মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। হানা হাইওয়েতে গেলে চোখে পড়বে এসব দৃশ্য। হাওয়াইয়ান দ্বীপপুঞ্জের অংশ মাউই দ্বীপের প্রায় ৬০টি সেতুর সঙ্গে এই রাজপথ সংযুক্ত। গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি হলে ডুবে যায় এটি। এছাড়া ঘটে ভূমিধস। প্রচুর বাঁক থাকা এই পথে পথযাত্রীদের সাহস না থাকলে যাওয়া ঠিক হবে না। ভাগ্য ভালো থাকলে নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত আলাস্কা থেকে আসার সময় দেখা হয়ে যেতে পারে নীল তিমির সঙ্গে!

Guoliang Tunnel, Chinaগোয়াইলিয়াং টানেল, চীন
ওপরের ছবিই বলে দিচ্ছে, এই সুড়ঙ্গ পথ কতটা ভয়ংকর সুন্দর! এর বয়স কিন্তু নেহায়েৎ কম নয়। সেই সত্তর দশকে প্রতিবেশী গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের সুবিধার্থে এটি বানিয়েছে। সুড়ঙ্গ পথটি পুরোপুরি অন্ধকার হলেও পাহাড়-পর্বত থেকে যানবাহন পড়ে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। সুড়ঙ্গ থেকে বের হওয়ার পর সাবধানে চলতে হয়। কারণ এটি মাত্র ১৩ ফুট চওড়া।

Passage du Gois, Franceপ্যাসেজ দ্যু গোয়া, ফ্রান্স
ফ্রান্সের আটলান্টিক উপকূলে নোয়ামুতি দ্বীপে যেতে মানুষ আগে জাহাজ ও নৌকা ব্যবহার করতো। পরে সেখানে তৈরি হয় একটি সংকীর্ণ সড়ক, যা পরে সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা তা উন্মুক্ত থাকে। কারণ জোয়ারের সময় পুরো সড়ক ডুবে যায়। ফলে এই পথে যেতে জানা থাকতে হয় জোয়ার-ভাটার সময়কাল।
Passage du Gois, France-1কখনও কখনও বলা নেই কওয়া নেই, হুট করেই জোয়ার বাড়তে থাকে। তখন দ্বীপে পৌঁছানো অসম্ভব। এ কারণে জরুরি প্রয়োজনে মানুষ যেন আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য বেশকিছু উদ্ধার ভবন গড়ে তোলা হয়েছে ওই রুটে। কিন্তু যানবাহনকে ঠিকই চলে যাবে জলের গভীরে!

Untitled4তারোকো গর্জ রোড, তাইওয়ান
ঝড় ও ঝরনা সবসময়ই হানা দেয় এই পথে। এর দু’পাশেই রয়েছে পর্বত। দুইয়ে মিলে সেখানে প্রায়ই ঘটে ভূমিধস। যদিও ভূমিকম্পই কেবল এমন খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এসব কিছু মাথায় রেখে পাড়ি দিতে হয় এই বন্ধুর পথ।

The Himachal Pradesh Road in Indiaরোহতাং সড়ক, হিমাচল প্রদেশ, ভারত
হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সৌন্দর্যের মুখোমুখি হওয়া অন্যরকম এক অনুভূতি। সেখানে যেতে হলে পাড়ি দিতে হয় রোহতাং সড়ক। সেখানে মিলবে চমৎকার হিমবাহ। বরফে অবরুদ্ধ থাকার কারণে নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক রাস্তাটি সাধারণত বন্ধই থাকে। তবে বন্ধুর এই পথ পাড়ি দেওয়ার সুযোগ পেলে তিব্বতীদের স্পিতি জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়।

Paso de Los Caracoles, Chile-Argentinaপাসো দে লোস কারাকলিস, চিলি-আর্জেন্টিনা
স্প্যানিশ শব্দ ‘পাসো দে লোস কারাকলিস’-এর বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘শামুকের সড়ক’। ছবিতে তাকালেই বোঝা যায় কেন এই নাম। চোখ ছানাবড়া করে দেওয়ার মতো বাঁকের কারণে রাস্তাটি রূপ নিয়েছে শামুকের আকৃতিতে। এর ভয়ংকর দিক হলো, তুষারপাতের কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় এঁকেবেঁকে যাওয়া সড়কটির অধিকাংশ বাঁক ঢাকা থাকে বরফে। তাই পথ খুঁজে নিয়ে পাড়ি দেওয়া রোমাঞ্চকর ব্যাপার। তবুও মানুষ যে এই পথে যায় না তা নয়। পাসো দে লোস কারাকলিসে ট্রাক এমনকি চিলি ও আর্জেন্টিনার ডাবলডেকার ট্যুরিস্ট বাসও যাতায়াত করে।

Untitled2আটলান্টিক রোড, নরওয়ে
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর দিয়ে রয়েছে এই সড়ক। সেখানকার ঢেউয়ের গর্জন প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটকের মন কাড়ে। সেজন্যই নরওয়ের জাতীয় পর্যটন রুট ও সংস্কৃতি ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে আটলান্টিক রোড। এই পথে যেতে আটলান্টিক মহাসাগরের মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সমস্যা শুধু একটাই— জোয়ার বা ঝড়ের সময়ে বাহন ভেসে যেতে পারে সমুদ্রের অতলে!

Col de la Bonette, Franceকোল দো লা বোনেট, ফ্রান্স
আঁকাবাঁকা পথ আর কাকে বলে! আল্পস পর্বতমালার ফরাসি অংশে থাকা কোল দো লা বোনেট অনেক উঁচু গিরিপথ। এসব মোড় পেরোনোর সময় ভ্রমণকারীদের স্নায়ুর ভালো পরীক্ষা হয়ে যায়। সে যাক গে, রুটটি সাইক্লিস্টদের বেশ প্রিয়। তাদের প্রতিযোগিতা ট্যুর ডি ফ্রান্সে চারবার এই পথ ব্যবহৃত হয়েছে।

Untitled1তিয়ানমেন মাউন্টেন রোড, চীন
সাত মাইল দীর্ঘ এই পাহাড়ি পথে খুব বেশি নয়, মাত্র ৯৯টি বাঁক রয়েছে! এগুলোর প্রতিটিই পাহাড়ে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে এসেছে! পথটিতে যেতে যেতে চোখে পড়বে বিশাল গুহা। এর পরিচয় হলো ‘স্বর্গের দুয়ার’। পাহাড়ের বিশাল একটি অংশ আপনাআপনি ভেঙে তৈরি হয়েছে এই প্রাকৃতিক স্বর্গের দরজা!

Untitledইশিমা ওহাশি সেতু, জাপান
ছবিতে যে রাস্তা দেখছেন, এটি মূলত একটি সেতু। নাম ‘ইশিমা ওহাশি’। এর ডিজাইন ধনুকের মতো বাঁকানো। কারণ নিচে বয়ে চলা মাঝসমুদ্রে চলাচল করে বিশাল বিশাল আকৃতির জাহাজ। রোলারকোস্টারের মতো দেখালেও এই পথ যত বিপজ্জনক মনে হচ্ছে আদতে তা কিন্তু নয়। ফলে সেখানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে গাড়িচালকদের মোটেও হিমশিম খেতে হয় না।