মক্কা-মদিনায় বেশকিছু বাংলাদেশি হোটেল আছে। মক্কার রেস্তোরাঁগুলোর নাম ঢাকা, এশিয়া, চট্টগ্রাম, জমজম ইত্যাদি। এসব হোটেলে ভাত, দেশীয় পদ্ধতিতে রান্না করা সামুদ্রিক মাছের তরকারি, মাংস, সবজি, ডালসহ সব ধরনের বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। হোটেল থেকে পার্সেলে একজনের খাবার কিনলে বাড়িতে বসে অনায়াসে দু’জন খাওয়া যায়।
পাইকারি দামে বাংলাদেশি সবজি, ফল বা মাছ কিনতে চাইলে যেতে হবে মক্কার নাক্কাসা এলাকায়। মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ইব্রাহিম খলিল রোড ধরে দুই কিলোমিটার দূরেই নাক্কাসা। সেখান থেকে সবকিছু সুলভে কার্টন ধরে কিনতে হয়।এই বাজারে কেনাকাটার সময় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করা যাবে।
নাক্কাসার রাস্তাঘাট, ফুটপাতের দোকান, কাঁচাবাজার, হোটেলগুলো বাংলাদেশের মতোই। কাঁচাবাজারে দেশি মাছ, সামুদ্রিক মাছ, মাংস, আলু, বেগুন, পটোল, লতি, ধনেপাতা, ঝিঙে, কাচামরিচ, ফুলকপি, পাতাকপি, মিষ্টি কুমড়া, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি মেলে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সবই এখানে পাওয়া যায়। সেগুলো একেবারে দেশি। দোকানদাররা সবাই বাংলাদেশি। বাজারে বড় বড় মুরগি পাওয়া যায়। কেটে পরিষ্কার ও টুকরো করে দেওয়া হয়। প্রতিটি মুরগির মূল্য ১০ রিয়াল।
বিভিন্ন দেশের ফলমূল পাওয়া যায় নাক্কাসায়। তরমুজ, আম, কিউই, আলুবোখারা, শাম্মাম, আপেল, আঙুর, নাশপতি, কমলা, কলাসহ বিভিন্ন ফল কম দামেই মিলবে। বিকালে সেখানে পাওয়া যায় ছোলা, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, কাবাব, চপসহ অনেক পদের নাশতা।
আনুষঙ্গিকতার জন্য অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে অবস্থান করতে হয়। সেক্ষেত্রে সঙ্গে রাখতে পারেন কেক, বিস্কুট, কলা, আপেল, নাশপাতি, খেজুর, কিশমিশ, আলুবোখারা, শুকনা মিষ্টি, বাদাম, জুস, দুধ ইত্যাদি। সকালে নাশতার জন্য রাতের বাসি খাবার বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা করবেন না। নাশতার জন্য পাউরুটি জাতীয় শুকনা খাবার রাখতে পারেন।
যাদের ভাত-রুটি কম খাওয়ার অভ্যাস আছে তারা মাছ, মাংস, ডাল, দুধ অর্থাৎ আমিষ জাতীয় খাবার একটু বেশি খাবেন। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা সঙ্গে রাখতে পারেন চিড়া ভাজা, মুড়ি, ভুট্টার খই, ডায়াবেটিস বিস্কুট, দুধ ইত্যাদি। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার আশঙ্কা থাকলে সঙ্গে জুস রাখতে পারেন।
মক্কার পথে পথে পানবিক্রেতা চোখে পড়বে। দুই বা তিন খিলি পানের দাম পড়বে ১ রিয়াল। মদিনায় বাঙালিদের অবস্থান যেখানে, সেখানে মুড়িসহ বাংলাদেশের অনেক খাদ্যপণ্য পাওয়া যায়। মক্কা-মদিনায় অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন, তাই ভাষাগত কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেনাকাটার সময় দরদাম করে কেনা ভালো। এছাড়া হিন্দি ভাষা প্রায় সবাই বোঝেন। প্রয়োজনে কাজে লাগবে।
কোরবানি বা দম দেওয়ার জন্য (৪৭৫ সৌদি রিয়াল) ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সৌদি সরকারের স্বীকৃত ব্যবস্থা। এতে সময় যেমন বাঁচে, তেমনই নিরাপদ। এর বাইরে টাকা দেওয়া হলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশে থাকাকালীন হজ প্যাকেজের সুবিধাদি যেমন মক্কা-মদিনায় থাকা, খাওয়া, কোরবানিসহ অন্য সুবিধার কথা হজ এজেন্সির কাছ থেকে লিখিতসহ খুব ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। এরপর সৌদি আরব গিয়ে তা মিলিয়ে দেখা দরকার। অনেক সময় দেখা যায়, কোনও কোনও মোয়াল্লেম হাজিদের অনেকের নাশতার দায়িত্ব নেন না। এ কারণে মক্কা-মদিনায় গিয়ে তারা বেশ বিপাকে পড়েন। ট্রাভেল এজেন্সি যথাযথ সুবিধাদি (দেশ থেকে থাকা-খাওয়াসহ অন্য যেসব সুবিধার কথা বলেছিল) না দিলে মক্কা ও মদিনার বাংলাদেশ হজ মিশনকে জানানো দরকার। এরপরও সন্তুষ্ট না থাকলে সৌদির ওয়াজারাতুল হজকে (হজ মন্ত্রণালয়) লিখিত অভিযোগ করা যায়।