খাগড়াছড়িতে ঈদে পর্যটকের আশায় নতুন সাজ

খাগড়াছড়ি জিলা পরিষদ পার্কঈদুল আজহা উপলক্ষে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন স্পট, হোটেল, মোটেল ও কটেজগুলোকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হচ্ছে। পাহাড় ধস, পাহাড়ি ঢল ও হঠাৎ বন্যার কারণে গত ঈদুল ফিতরের সময় পর্যটক সমাগম কম হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেটি পুষিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই জেলার পর্যটন খাতে এসেছে নতুন সাজ। তবে এখনও প্রত্যাশিত পর্যটকের সাড়া মেলেনি। কারণ পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অপহরণ, খুন, গুম ও চাঁদাবাজির কারণে অস্থিরতা বিরাজের প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতে। যদিও নিরাপত্তাসহ পরিবেশ-পরিস্থিতি ঠিক থাকলে আসছে ঈদে প্রচুর পর্যটকের উপস্থিতি দেখা যাবে বলে আশা হোটেল ব্যবসায়ীদের।

ঈদে প্রত্যাশিত পর্যটক পাওয়ার আশায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাজানো হচ্ছে আলুটিলা পর্যটন এলাকা, রিছাং ঝরনা, হেরিটেজ পার্ক, জেলা পরিষদ পার্ক, দেবতার পুকুর, সাজেক, তৈদুছড়া ঝরনাসহ সব পর্যটন স্পট। লক্ষ্য একটাই— আসন্ন ঈদে মৌসুমে পর্যটকদের আকর্ষণ করা ও গত ঈদের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, খাগড়াছড়ি পুলিশ প্রশাসন, খাগড়াছড়ি হোটেল মালিক, খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়— জেলায় ছোটবড় সব মিলিয়ে ১২০টি হোটেল-মোটেল-কটেজ রয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে আছে ৩০টি। বাকি আট উপজেলায় সেই সংখ্যা ৪০। আর সাজেকে আছে অর্ধশত।

খাগড়াছড়ি দাশোবল বুদ্ধবিহারব্যবসায়ীরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ি জেলায় সবুজাভ পাহাড়ের ছড়াছড়ি। এর সঙ্গে পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া চেঙ্গি, মাইনি ও ফেনী নদী এই জেলাকে সাজিয়েছে অপরূপ সাজে। চারদিকে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সবুজ পাহাড়, গিরি-ঝিরি-ঝরনা ও ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন-সংস্কৃতির সুবাদে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে খাগড়াছড়ি। এখানকার পর্যটন স্থানগুলো দেখতে আসার পর পর্যটকরা যদি কম খরচে ঘোরাফেরা, নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশে থাকা, পরিচ্ছন্ন ও ঐতিহ্যবাহীসহ সুস্বাদু খাবার খেতে পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্টরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন হোটেলে রাখা হয়েছে ১৫-২০ শতাংশ ছাড়। এতকিছুর পরেও দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন তারা।

হোটেল গাইরিংয়ের মালিক ও খাগড়াছড়ি জেলা হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ‘যতদূর জানি, ঈদ উপলক্ষে হোটেলগুলোতে খুব একটা বুকিং নেই। গত ঈদুল ফিতরের সময় পাহাড়ি ঢল, বন্যা, পাহাড় ধসের কারণে পর্যটক পাইনি। সেই ক্ষতি এখনও পূরণ হয়নি। এই ঈদে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে হোটেল-মোটেল-কটেজগুলো নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব হোটেলে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তারপরও এখন পর্যন্ত পর্যটকদের সাড়া নেই।’

খাগড়াছড়ি হেরিটেজ পার্কঈদ পরবর্তী সময়ে পর্যাপ্ত পর্যটক আসতে পারেন বলে ধারণা করছেন খাগড়াছড়ি জেলা শহরের অত্যাধুনিক হোটেল অরণ্য বিলাসের মালিক স্বপন চন্দ্র দেবনাথ। তার বক্তব্য হলো, ‘ঈদ উপলক্ষে আমাদের হোটেল নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দঘন করতে সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও রুম বুকিং হয়নি।’

হতাশার কথা শোনালেন আরেক হোটেল মালিক মো. সেলিম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে ছয় মাস ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। এবারের কোরবানি ঈদে নিরাপত্তার কারণে অনেক পর্যটক বুকিং বাতিল করেছে। চলমান অস্থির পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পর্যটকদের মাঝে। এ কারণে আমার মতো পর্যটন ব্যবসায় জড়িতরা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।’

খাগড়াছড়ি পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউনুছ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান— খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের যানবাহন সুবিধার জন্য প্রায় ২০০ বাস, সিএনজি, টেম্পু, পিকআপ, মাইক্রো ও প্রাইভেট কার রয়েছে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে বসে থাকা ছাড়া আর কাজ পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে পরিবহন খাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে সবাইকে।

খাগড়াছড়ি বনলতা লেকআঞ্চলিক সংগঠনগুলোর বিরোধে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও অস্থির বলে স্বীকার করেছেন খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান। তবে তার দাবি, প্রতিটি পর্যটন স্পট নিরাপদ আছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘বরাবরের মতোই পর্যটন স্পটগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে যেসব পর্যটক খাগড়াছড়ি আসবেন, তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় পোশাকধারীর পাশাপাশি ডিবি ও সাদা পোশাকে পুলিশ সবসময় দায়িত্ব পালন করবে। পর্যটকদের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। কোনও পর্যটক চাইলে তাকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’