শরতের ঝলমলে আকাশের নীল যেন মিশেছে রেমাক্রির জলে। আমরা বিদেশি ভূ-স্বর্গের গালগপ্পো শুনি। দেখি স্রোতস্বিনী পাহাড়ি নদী, বন আর পাহাড়ের মেলবন্ধনের অপার্থিব সব দৃশ্য। এখন মনে হচ্ছে, আমি সেই ভাগ্যবান যে নিজের দেশেই ভূ-স্বর্গের দেখা পেয়েছে।
থুইসাপাড়া থেকে আড়াই ঘণ্টার ট্রেকের পর অবশেষে শোনা গেলো নাফাখুমের গর্জন। আমরা পেছন থেকে আসছি। পা টিপে টিপে সেই সৌন্দর্যের সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমি নিশ্চিত, এখানে এসে থামতে বাধ্য হবেন কবি। মহাবিশ্বের সব প্রাণশক্তি ভর করেছে ঝরনাধারায়। অবিরত এর গর্জন শুনিয়ে যাচ্ছে জীবনের গান। আমরা সেই জীবনসুধা পান করলাম সর্বোচ্চ মাত্রায়।
আবার রেমাক্রি ধরে বাজারের দিকে এগোনো। টানা চারদিন ধরে হাঁটছি। শেষের দিকে যত এগোচ্ছিলাম তত যেন ক্লান্তি এসে ভর করছে। সত্যি বলতে, যে পথ চারদিনে ফেলে এসেছি সেটি সাধারণভাবে আরও দুই দিন বেশি লাগতো। এভাবে একসময় নিজেকে আবিষ্কার করলাম রেমাক্রি মুখের সামনে। এবার একটু রেমাক্রি নিয়ে বলি।
ধাপে ধাপে পাথুরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসা জলের ক্যানভাস এখানে সৃষ্টি হয়েছে জলপ্রপাতে। রেমাক্রি মুখও এই রুটের কাঙ্ক্ষিত একটি জায়গা। এখান থেকে বাজারে যেতে হলে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। প্রচণ্ড রোদে আমরা রেমাক্রি মুখে খানিক অপেক্ষার পর একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে বাজারে এসে পৌঁছালাম প্রায় আড়াইটায়। ঘাটে নেমেই আগে মন ভরে খেয়ে নিলাম ভাত, মুরগির মাংস ও ডাল। এত তৃপ্তি করে বোধহয় বহুদিন খাইনি! পরের দিন থানচি ফেরার নৌকাও এখান থেকেই ঠিক করলাম।
কটেজে ব্যাগ-প্যাক রেখে একছুটে চলে গেলাম ঘাটে। পুরো চারদিন যত ময়লা জমেছিল শরীরে, শঙ্খের পুণ্য জলে সব ধুয়ে শুদ্ধ করে নিলাম। জীবনের এ এক আশ্চর্য আনন্দ! শঙ্খের কোলে শরীর গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে সূর্যস্নানের সময় মনে হলো, আমার আর কোথাও না গেলেও চলবে! সখ্য হলো দুই পাহাড়ি শিশুর সঙ্গেও। তারা গাছের লাল পেয়ারা খাওয়ালো।
সন্ধ্যা হলো। জমজমাট রেমাক্রিতে চরম আড্ডাবাজির সঙ্গে হলো সুপারমুন দর্শন। চাঁদের আলো কুয়াশার জলে মিশতে মিশতে শুনিয়ে গেলো হারিয়ে যাওয়ার ইন্দ্রধ্বনি। ক্লান্তিতে আমাদেরও ঘুমের দেশে হারিয়ে যাওয়ার সময় হলো।
ঢাকা থেকে বান্দরবানগামী বাসের ভাড়া ৬২০ টাকা। বান্দরবান শহর থেকে এক ঘণ্টা পরপর বাস ছেড়ে যায় থানচির উদ্দেশে। ভাড়া ২০০ টাকা। বান্দরবানে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দেবে থানচি বাসস্ট্যান্ড। অবশ্যই সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা যেকোনও আইডি কার্ডের কয়েকটি ফটোকপি রাখবেন। থানচি থেকে রেমাক্রি বাজার পর্যন্ত নৌকা ভাড়া আসা-যাওয়া ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। থানচি থেকে গাইডের খরচ প্রথম দিন ৮০০ টাকা, পরবর্তী দিনে ৭০০ টাকা করে। রেমাক্রি বাজার থেকে স্থানীয় গাইড নেবে ৫০০ টাকা।
ছবি: লেখক