সৌদি আরবের বেশিরভাগ জায়গা মরুভূমি হলেও অনেক সমৃদ্ধ ও জাঁকজমকপূর্ণ শহর রয়েছে সেখানে। সবই যেন নান্দনিকতার অপূর্ব নিদর্শন। ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ও বিখ্যাত স্থাপনা আছে এই পুণ্যভূমিতে। তাই মরুর বুকে সৌদি আরবে ভ্রমণ পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সবসময়ই কাঙ্ক্ষিত।
প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক মুসলমান হজ পালন করতে সৌদি আরবে যান। হজের পাশাপাশি মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেন তারা। ধর্মীয় গুরুত্ব সম্পন্ন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থাপনার পাশাপাশি শপিংমল, হোটেল, প্রাচীন ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ছড়িয়ে আছে সারা সৌদি আরবে।
‘সিটি সাইট সিয়িং’ ডাবল ডেকার বাসহজযাত্রী ও পর্যটকদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দেখাতে পবিত্র নগরী মদিনায় ‘সিটি সাইট সিয়িং’ নামে একটি বিশেষ ডাবল ডেকার বাস সার্ভিস রয়েছে। টিকিটের মূল্য ৮০ সৌদি রিয়াল। বাস থামে মসজিদে নববী, জান্নাতুল বাকি কবরস্থান, আল মানাখায় অবস্থিত মসজিদে গামামাহ বা মেঘের মসজিদ, ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া উহুদ প্রান্তর, আল নূর শপিংমল, সুলতানা শপিং স্ট্রিট, মসজিদে কিবলাতাইন, সালা পর্বতের দক্ষিণে খন্দক যুদ্ধের স্থানে সাত মসজিদ, সাদা মিনার ও বহু খেজুর গাছ সংবলিত ঐতিহাসিক মসজিদে কুবা ও ওসমানীয় আমলের আল হেজাজ রেল স্টেশন জাদুঘর।
হজযাত্রী ও পর্যটকরা মদিনায় ‘সিটি সাইট সিয়িং’ ডাবল ডেকার বাসে চড়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দেখেনকাবা শরিফের কাছেই মক্কা জাদুঘরে প্রবেশ করতে কোনও টিকিট লাগে না। সময়সূচি সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা। এটি মূলত তুর্কি আমলের ব্যবহৃত জিনিপত্রের সংরক্ষণাগার। এখানে আছে সৌদি আরবের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছদ, আসবাবের নমুনা, প্রাচীন ধাতব মুদ্রা, জমজম কূপ থেকে পানি উত্তোলনের পুরনো যন্ত্রপাতি, পুরনো আমলের হাতে লেখা পবিত্র কোরআনের অনেক কপি, মুসলিম ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনেক নমুনা, অনেকদূর থেকে সময় দেখার প্রাচীন আমলের বিশাল ঘড়ি ইত্যাদি।
মসজিদে নববীর আঙিনায় আল-কোরআন মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে লেখা কিছু কোরআন, হস্তাক্ষরে লিখিত ১৫৪ কেজি ওজনের বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোরআন, হরিণের চামড়ায় লিখিত কুরআন। জাদুঘরটি হজ মৌসুমে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা ও বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে।
মক্কায় ঐতিহাসিক স্থান হেরা গুহা, সাওর পর্বত, জান্নাতুল মা’আলা (কবরস্থান), গিলাফ তৈরির কারখানা, লাইব্রেরি ঘোরাঘুরির জন্য জনপ্রিয়। কাবা শরিফের পাশে সাফা-মারওয়া পাহাড়ের সাঈর স্থান থেকে পূর্বদিকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত মক্কা লাইব্রেরিতে অনেক মূল্যবান বই, পাণ্ডুলিপি ও ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। মসজিদে হারাম শরিফের একটি প্রযুক্তিবান্ধব লাইব্রেরি সবার জন্য উন্মুক্ত।
মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ারপবিত্র নগরী মক্কার দক্ষিণ প্রান্তে মসজিদ আল হারামের পেছনেই রয়েছে মক্কা ক্লক রয়েল টাওয়ার। এটি বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতার বহুতল ভবন। আছে ছয়টি সুউচ্চ ভবন নিয়ে নির্মিত বিলাসবহুল আবরাজ আল বায়েত টাওয়ার কমপ্লেক্স। এখানে আছে বিলাসবহুল হোটেল, বিপণি বিতান (শপিং মল), রেস্তোরাঁসহ অনেক কিছু।
মদিনা গেট, সৌদি আরবের অন্যতম প্রসিদ্ধ শহর জেদ্দায় বৃহৎ জাদুঘর আল তায়েবাত ইন্টারন্যাশনাল সিটি, কিংস ফাউন্টেন ঝরনা, ২ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের বিপণি বিতান রেড সি মল, ৯৯ তলাবিশিষ্ট ৯৯২ ফুট উচ্চতার কিংডম সেন্টার, রিয়াদের সেন্ট্রিয়া মল, ১৯৯৫ সালে চালু হওয়া খোবারের আল রাশিদ শপিংমল, পাথর কেটে তৈরি করা রহস্যময় স্থাপনা মেদান সালেহ, প্রাচীন স্থান দুমাত উল জান্দাল, জেদ্দা শহরের আল বালাদ এলাকায় হযরত হাওয়া (আ.)-এর কবর, হোরেব পর্বতমালা, আকাবাত আল বাহার মার্বেল পাথরের গ্রামও জনপ্রিয় স্থান।
মদিনা গেটমিনায় আল-খায়েফ মসজিদ ছাড়াও পরিচিত তিনটি ব্রিজ রয়েছে—বাদশাহ খালেদ ব্রিজ ১৫ নম্বর, বাদশাহ আবদুল্লাহ ব্রিজ ২৫ নম্বর ও বাদশাহ ফয়সাল ব্রিজ ৩৫ নম্বর। মিনা ও মুজদালিফায় তিনটি করে রেলস্টেশন আছে। এছাড়া রয়েছে সুড়ঙ্গপথ, টানেল, পায়ে চলার রাস্তা, হাসপাতাল, মসজিদ, পোস্ট অফিস, মিনার বাদশাহ বাড়ি, রয়েল গেস্টহাউস (রাজকীয় অতিথি ভবন) মোয়াচ্ছাসা কার্যালয়। ইবাদতের বাইরে এগুলোও ঘুরে দেখতে পারেন।