প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়াল দেশে দেশে

প্রকৃতি মানেই রহস্য। তবে এই রহস্যের দেখা পাওয়া যায় না সবসময়। যখন যায়, তখন রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। কিছু রহস্যের ব্যাখ্যা মানুষ তার নিজের মতো করে বের করেছে। আবার কিছু রহস্য যেন কিছুতেই নিজেকে ফাঁস করবে না! প্রকৃতির এমন কিছু খেয়াল জানা যাক, যা আকৃষ্ট করে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের।

frek-690x388মাছ বৃষ্টি

বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে মাছ বৃষ্টি! প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়াল নয়, ঘূর্ণিঝড়ে হ্রদের মাছ আকাশে চলে যায়, পরে বৃষ্টির সঙ্গে ঝরে পড়ে। এমন ঘটনা হন্ডুরাসে ঘটে নিয়মিত। প্রতি বছর মে থেকে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সেখানে দুই-তিন ঘণ্টা মাছ বৃষ্টি হয়। লোকজন এসব মাছ কুড়িয়ে নিয়ে রান্না করে খায়। ১৯৯৮ সাল থেকে স্থানীয় লোকজন এ ঘটনার ওপর ভিত্তি করে উৎসবের আয়োজন করে আসছে। এর নাম ‘ফেস্টিভ্যাল ডি লুভিয়া পেসেস’ তথা মাছবৃষ্টির উৎসব।

বিজ্ঞানীদের মতে, আটলান্টিকের টর্নেডো মাছগুলোকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে তা বৃষ্টির সময় ঝরে পড়ে। তাই বলে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় হন্ডুরাসের ইওরোতেই মাছ বৃষ্টি হবে এমনটা অনেকেই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না। ১৯৭০ সালে মাছবৃষ্টির খবর নেওয়ার জন্য হন্ডুরাসে প্রতিনিধি পাঠায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি। তারাও জানায় মাছবৃষ্টির খবর গুজব নয়। তবে বৃষ্টিতে যেসব মাছ আকাশ থেকে পড়ে সেগুলো লম্বায় কোনোটিই ৬ ইঞ্চির বেশি নয়।

01-goats-on-a-tree-in-moroccoগাছে চড়া ছাগল
কথায় বলে, পাগলে কিনা করে আর ছাগলে কিনা খায়। কিন্তু মরক্কোর কিছু ছাগলের কীর্তি দেখলে প্রবাদটাকে উল্টে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বলা যায়— ছাগলে কী না করে! দেশটিতে আছে জলপাইয়ের মতো আরগন গাছ। এর চমৎকার স্বাদের ফল খেতে দিব্যি গাছের মগডালে চড়ে বসে ছাগলের দল! ফলের বিচি আবার হজম করতে পারে না। সেই বিচি পড়ে যায় নিচে। আর সেটা কুড়িয়ে নিতে গ্রামের লোকেরা কাড়াকাড়ি লাগিয়ে দেয়। কারণ আরগনের বিচি থেকে তৈরি হয় অনেক দামি একটা তেল। তাছাড়া প্রসাধন তৈরিতেও এটি ব্যবহার করা হয়।

A-Pororocaদীর্ঘতম ঢেউ
ঢেউ দেখতে যাওয়া চাই ব্রাজিলের আমাজন নদীতে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চের মাঝামাঝি আটলান্টিক মহাসাগরের পানি ব্রাজিলের আমাজন নদীর ওপর আছড়ে ফেলে বিশ্বের দীর্ঘতম ঢেউকে। বছরে দু’বার এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় ‘পোরোরোকা’। যার অর্থ ‘বিশাল ধ্বংসাত্মক শব্দ’। ১২ ফুট পর্যন্ত উঁচু এ ঢেউয়ের স্থায়িত্ব হয় আধ ঘণ্টারও বেশি। অর্থাৎ ঢেউ আছড়ে পড়ার আধ ঘণ্টা আগ থেকে এর শব্দ পাওয়া যায়। সার্ফারদের কাছে এই ঢেউ বেশ জনপ্রিয়। ১৯৯৯ সাল থেকে সাও ডমিঙ্গোস দো কাপিমে সার্ফিংয়ের বার্ষিক প্রতিযোগিতাও হয়। তবে তা বেশ বিপজ্জনক। কেননা দীর্ঘ এ ঢেউয়ে থাকে অজস্র ময়লা-আবর্জনা। এর মধ্যে থাকে আস্ত বৃক্ষ!

articles-a-quick-guide-to-the-black-sun-starling-murmurations-in-denmarkকালো সূর্য!
বিশ্বের সবচেয়ে সুখী রাষ্ট্র উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের ডেনমার্ক। সম্ভবত সেখানকার পাখিরাও বেশ সুখী। তাই প্রতি বসন্তে সূর্যাস্তের প্রায় আধ ঘণ্টা আগে কয়েক লাখ ইউরোপিয়ান স্টারলিং পাখি জড়ো হয় আকাশের বুকে। উড়ে উড়েই তারা তৈরি করে বিভিন্ন চিত্র। এ ঘটনা ডেনমার্কে ‘ব্ল্যাক সান’ নামে পরিচিত। পুরো মার্চ ও এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত পশ্চিম ডেনমার্কের আকাশজুড়ে পাখিদের বিচিত্র এই কাণ্ড দেখা যায়।
1667কাটাটুম্বোর বজ্রপাত
ভেনেজুয়েলার মারাকাইবো হ্রদের শেষ প্রান্তে আছে কাটাটুম্বো নদী। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের জন্য এই নদী বিখ্যাত। বছরের অর্ধেকটা সময়ই (১৪০ থেকে ১৬০ দিন) সেখানে বজ্রপাত হয়। যখন হয়, তখন প্রতি রাতে টানা ১০ ঘণ্টা চলতে থাকে আকাশের গুড়ুম গুড়ুম। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮০ বার বিদ্যুৎ চমকাতে দেখা গেছে সেখানে। ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকেও এ বজ্রপাত দেখা যায় বলে বহুকাল ধরেই কাটাটুম্বোকে দিকনির্দেশক হিসেবে দেখে নাবিকরা।
maxresdefaultআগুন রঙধনু

সবাই জানে, রঙধনু দেখতে ধনুকের মতো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোর আকাশে একবার দেখা গিয়েছিল বিচিত্র রঙধনু। তখন যেন আকাশের গায়ে আগুন লেগেছে! ঘটনাটি ২০০৬ সালের ৩ জুনের। ওইদিন কয়েকশ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বিরল এই রঙধনুর ব্যাপ্তি ছিল প্রায় এক ঘণ্টা। সূর্য ৫৮ ডিগ্রি কোণে থাকায় নাকি এমনটা হয়েছিল। এ সময় সূর্যরশ্মি স্বচ্ছ মেঘের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে বলে তৈরি হয় ফায়ার রেইনবো।