পৃথিবীজুড়ে প্রাকৃতিক আশ্চর্যের কমতি নেই। এরমধ্যে এমন কিছু বিস্ময় আছে, যেগুলোর সামনে গেলে আস্ত মানুষই যেন জমে যাবে! এমন স্তব্ধ পানিপ্রবাহ দেখতে প্রতি বছর দুনিয়ার বিস্ময়কর সব হিমশীতল গন্তব্যে ভিড় করেন বিপুলসংখ্যক পর্যটক। এমন কিছু প্রাকৃতিক বিস্ময় সম্পর্কে চলুন জানা যাক।
ওপর থেকে জল গড়িয়ে পড়লে তবেই না জলপ্রপাত। কিন্তু সামনে গিয়ে যদি দেখেন জল পড়ছে না, ঠায় দাঁড়িয়ে আছে! বিরল এ দৃশ্য শীতপ্রধান দেশের জলপ্রপাতে দেখা যায়। তবে চীনের বেইজিংয়ের উত্তর-পূর্বের মায়ান কাউন্টির বরফ জলপ্রপাতের সৌন্দর্য পুরোপুরি আলাদা। সেখানে জল গড়িয়ে পড়তে পড়তে হুট করে কখন যে বরফ হয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। এই স্তব্ধ জলরাশি দেখতে প্রতি বছর শহরটিতে ভিড় জমায় লক্ষাধিক পর্যটক।
অস্ট্রিয়ার ওয়েরফেনে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক বরফের গুহা। এর তাপমাত্রা সবসময় থাকে শূন্য ডিগ্রির নিচে। ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ গুহাটি দেখতে প্রতি বছর ভিড় করে অন্তত দুই লাখ পর্যটক। প্রতি বছরের ১ মে থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই গুহা।
প্রকৃতির এক চমৎকার ও অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে পানিতে বরফের বৃত্ত। শীতপ্রধান দেশের নদী ও লেকে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। নদীতে মৃদু স্রোতের কারণেই এমনটা হয়। বরফ বৃত্তের ব্যাস ৫০০ ফুটও হতে পারে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ডেভন নদী, সাইবেরিয়ার বৈকাল হ্রদ ও উত্তর আমেরিকার নদীগুলোতে এমন বৃত্ত দেখা যায় বেশি।
প্রকৃতির আরেক রহস্য বরফের স্পাইক। চিলির আন্দিজে এমন স্পাইক দেখা যায়। দেখে মনে হবে বিশাল একটা মাঠে বুঝি বরফের তৈরি কয়েক হাজার ছুরি সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
মধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নামতে শুরু করে বিশাল সব বরফের চাঁই। এসব হিমশৈল তৈরি হয় হাজার বছর ধরে, তুষার জমে জমে। মেরুর বাস্তুসংস্থানে এর গুরুত্ব অনেক। কারণ, এগুলোই হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির সবচেয়ে বড় আধার। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এখন এই হিমশৈল গলে যাচ্ছে।
হিমায়িত বিস্ময়ের নাম বরফ ফুল। তুষারের ক্রিস্টাল ধর্মের কারণেই এমন আকৃতি দাঁড়ায়। বরফের চাঁইয়ের ফাটল থেকে বেরিয়ে আসা জলকণা যখন শীতল বাতাসের সংস্পর্শে আসে, তখনই তা রূপ নেয় ক্রিস্টালে। পরে সেই ক্রিস্টালের চারপাশে আরও জলকণা যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে দাঁড়ায় একটি নান্দনিক নকশা।
ঢেউ আবার জমাট বাঁধে নাকি! না, এটা সত্যিকারের স্রোত নয়। বরফ এমন আকৃতি নিয়েছে যেন দেখলে মনে হবে স্রোত জমাট বেঁধে আছে। গলে যাওয়া মাত্রই যেন আছড়ে পড়বে একগাদা হিম জল।
অ্যান্টার্কটিকার নীল, সবুজ, বাদামি, কালো আর হলুদ রঙের ডোরাকাটা তুষারস্তূপের অপরূপ রূপমাধুরীতে মুগ্ধ হয় সবাই। বিভিন্ন ধরনের জলজ কণা ও লবণাক্ত পানির ওপর শীতল বাতাসের প্রভাবেই এমন হয়।