জাদুঘরের অদ্ভুত সংগ্রহশালা

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনে আছে ১৩ কোটি ৭০ লাখ জিনিসপত্র। দুনিয়ার অদ্ভুত সব জিনিসের আখড়া বলা যায় এই জায়গাকে। ফলে অদ্ভুত সব জিনিসের সংগ্রহশালা পছন্দ করেন এমন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে এটি। এই ইনস্টিটিউটের বিচিত্র কিছু সংগ্রহ জেনে নিন।

01. 16th-Century Mechanical Monkযন্ত্রসন্ন্যাসী
সবসময় যে কেবল মানুষকেই সন্ন্যাসী হতে হবে এমন কথা নেই। যন্ত্রেরও ধর্মকর্ম করার ইচ্ছা জাগতে পারে! এমন চিন্তা থেকেই ১৫৬০ সালে অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যে ১৫ ইঞ্চি (৩৮ সেন্টিমিটার) লম্বা একটি যন্ত্রসন্ন্যাসী তৈরি করেছিলেন রাজা পঞ্চম চার্লসের যন্ত্রবিদ জুয়ানেলো তুরিয়ানো নামের এক ব্যক্তি। অগণিত গিয়ারবিশিষ্ট যন্ত্রটি হাঁটাচলার পাশাপাশি বুকে ক্রুশ আঁকা ও মাথা নোয়াতে পারতো।

02. World`s Longest Beardসাড়ে ১৮ ফুট দাড়ি
নরওয়ে বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক হ্যানস এন ল্যাংসেথ (১৮৪৬-১৯২৭) নামের এক ব্যক্তির দাড়ি ছিল সাড়ে ১৮ ফুট লম্বা। পেশায় মিনেসোটা ও নর্থ ডাকোটার কৃষক ল্যাংসেথ তার বিশাল আকারের দাড়িকে জ্যাকেটের পকেটে ভাঁজ করে রাখতেন। বিভিন্ন সার্কাসে প্রদর্শনও করে বেড়াতেন। তার মৃত্যুর পর স্বজনরা দাড়িগুলো সংরক্ষণের জন্য কেটে নিয়ে স্মিথসেনিয়ান ইনস্টিটিউটে দান করেন।

03. Artificial Heart২৫ ডলারের হৃৎপিণ্ড
উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাসের মাঝে হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাক? তাতে কী! একটা কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড লাগিয়ে নিলেই হলো। দামও আহামরি কিছু নয়। মাত্র ২৪ দশমিক ৮০ ডলার (২ হাজার টাকা)। ১৯৪৯ সালে উইলিয়াম সিউয়েল নামের এক মার্কিন শিক্ষার্থী তার পরামর্শক উইলিয়াম গ্লেনের সঙ্গে এই হার্টপাম্প তৈরি করেন। শিশুদের খেলনা থেকে নেওয়া মোটর ও সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি দিয়েই বানানো হয় এটি। পরীক্ষামূলকভাবে হার্ট পাম্পটি দিয়ে একটি কুকুরকে ৯০ মিনিট বাঁচিয়ে রাখা গিয়েছিল। ১৯৫৯ সালে সিউয়েলের মায়ের কাছ থেকে কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড নিয়ে যায় স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউট।

04. Giant Female Squidঅতিকায় স্কুইড
গভীর সমুদ্রের বাসিন্দা স্কুইড। ২০০৫ সালে একজন স্প্যানিশ জেলের জালে ধরা পড়ে একটি স্ত্রী স্কুইড। এর বয়স ছিল দুই থেকে তিন বছর। লম্বায় ৩৬ ফুট (১১ মিটার) আর চওড়ায় ২২ ফুট (৬ দশমিক ৭ মিটার) স্কুইডটির ওজন ১৫০ কেজি।

05. Original Teddy Bearপ্রথম টেডি বিয়ার
১৯০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপির জঙ্গলে ভালুক শিকারে গিয়েছিলেন শান্তিতে নোবেল জয়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট ওরফে টেডি। কিন্তু সারা দিন চেষ্টা করেও শিকারের জন্য কোনও ভালুকের দেখা পেলেন না তিনি। তাই কয়েকজন কর্মকর্তা একটি ভালুক শাবক ধরে আনে। উদ্দেশ্য ছিল রুজভেল্ট এটাকে শিকার করবেন। ভালুক-শাবকটি দেখে রুজভেল্টের শিকারের ইচ্ছে উবে যায়।

পরদিন সংবাদপত্রে এ খবর ছাপাও হয়। সাধারণ মানুষের চোখে ‘বীর’ বনে যান রুজভেল্ট। তার ডাকনাম অনুযায়ী খেলনা ভালুক বানালো আইডিয়াল টয় কোম্পানি। সেই থেকেই খেলনার জগতে টেডি বিয়ারের আবির্ভাব। ১৯৬৩ সালে একটি টেডি বিয়ার রুজভেল্টের ছেলে কারমিটকে উপহার দেয় প্রতিষ্ঠানটি। সেটাই পরে বাবার অন্যান্য স্মারকের সঙ্গে স্মিথসোনিয়ানে দান করেন রুজভেল্টের ছেলে।

06. Presidential Hairপ্রেসিডেন্টের চুল
বিখ্যাতদের চুল সংরক্ষণের সংস্কৃতি অনেক দিনের। এটাই ধরে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ১৪ প্রেসিডেন্টের চুল সযত্নে আগলে রেখেছে স্মিথসোনিয়ান জাদুঘর।

07. Napoleon`s Napkinনেপোলিয়নের ন্যাপকিন
রাশিয়া আগ্রাসন ও লিপজিগে পরাজয়ের পর ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েন নেপোলিয়ন। ১৮১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এলবা দ্বীপ থেকে এক হাজার সৈন্য নিয়ে ফ্রান্সে পালিয়ে আসেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। এর আগে সেখানে ১০ মাস নির্বাসিত জীবন কাটান তিনি। ওই জায়গা থেকে চলে আসার সময় উইলিয়াম বেয়ার্ড নামে এক ব্যক্তিকে নিজের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত ন্যাপকিনটা দিয়ে যান নেপোলিয়ন। হাত ঘুরে ১৯১৪ সালে সেই ন্যাপকিন চলে আসে ওয়াশিংটনের জাদুঘরটিতে।