ট্রাভেলগ

মধু সিটিতে কাশফুলের বাগান ও নির্মল হাওয়া

1ঢাকার যানজট ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ছোট, বড়, মাঝারি ও ভারী যানবাহনের শব্দদূষণ থেকে একটু রেহাই পাওয়ার মতো রাজধানীবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক জায়গা হাতেগোনা। এর মধ্যে ঢাকার খুব কাছে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর এলাকায় প্রাণ খুলে একটু শীতল নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা খুঁজে পেয়েছে স্বস্তিপ্রিয় মানুষ।
বুড়িগঙ্গা নদীর ধারে মধু সিটি ও মিলেনিয়াম সিটি নামের এই স্থানটি এখন ঢাকার ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। প্রতিদিন বিকালে নির্মল হাওয়া উপভোগের জন্য সেখানে ভিড় করে শিশু থেকে বৃদ্ধ। মধু সিটি ফুড কোর্টসহ বিনোদনপিয়াসীদের জন্য সেখানে গড়ে ওঠেছে বেশকিছু রেস্তোরাঁ। তাজা মাছের বারবিকিউসহ নানান আইটেমের খাবার পাওয়া যায় এগুলোতে।

8নির্মল হাওয়ার রাজ্য
মোহাম্মদপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু কেরানীগঞ্জ ও ঢাকার সঙ্গে একটি সংযোগ স্থাপন করেছে কয়েক বছর আগেই। সেতু নির্মাণের পর এটিকে কেন্দ্র করে ঢাকা-কেরানীগঞ্জ প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় কেরানীগঞ্জের সঙ্গে ঢাকাবাসীর একটি সুশৃঙ্খল যাতায়াত ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর এলাকায় দুটি হাউজিং কোম্পানি মধু সিটি ও মিলেনিয়াম সিটি সেখানকার জমিগুলো প্লট আকারে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে।

6এভাবেই ওই অঞ্চলের বিশাল একটি অংশ চিত্তবিনোদনের স্থানে পরিণত হয়েছে। এ দুটি সিটির মাঝ দিয়েই কেরানীগঞ্জের ভেতরে প্রবেশ করেছে একটি প্রশস্ত রাস্তা। কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের সবুজে ঘেরা কয়েকটি গ্রাম ঘিরে রেখেছে জায়গাটি। সবুজে ঘেরা বিশাল এই ফাঁকা স্থানে গেলেই মনে হবে নির্মল হাওয়ার কোনও রাজ্যে চলে এসেছেন! বিশাল এলাকাজুড়ে কাশফুলের বাগান তাই ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য কাশফুলের সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহের শেষ নেই। যদিও সবে কাশফুল ফুটতে শুরু করেছে।

9মিলেনিয়াম সিটির প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকে কিছুদুর এগোলেই বুড়িগঙ্গা নদীর একটি শাখা। এর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য আবেগী হয়ে পড়ে তরুণ-তরুণীরা। দিনশেষে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানে যান মানুষজন। তবে সপ্তাহের সবদিনের চেয়ে শুক্র ও শনিবার ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। নদীতে নৌকা আছে, তাই মন চাইলে নৌকায়ও চড়া যায়। কেউ কেউ নদীতে নেমে জলকেলিতে মাতেন।

5এখানকার অন্যতম আকর্ষণ মধু সিটির বিশাল অফিস। এটি নির্মাণ করা হয়েছে সড়কের বাঁ-পাশে। ভবনটি গতানুগতিক ডিজাইনের নয়। একঝলক দেখলেই মনে হবে এটি কোনও রাজপ্রাসাদ। তবে বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভবনটিকে পেছনে রেখে ছবি তুলেই ফিরে আসতে হয় ভ্রমণপিপাসুদের। কারণ ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই।

খাবার-দাবার
ঘুরে বেড়ানোর ফাঁকে খাওয়া-দাওয়া না করলে কি চলে! সেখানে মধুসিটি ফুড কোর্ট, মিলেনিয়াম সিটির ভেতরে পেপেরনি রেস্টুরেন্ট ও বেড়া বাড়ি নামে খাবারের দোকান রয়েছে।

4বেড়া বাড়ি: ঢাকা থেকে মধু সিটিতে প্রবেশের আগেই সবার প্রথমে ডান হাতে পড়বে বেড়া বাড়ি রেস্তোরাঁটি। সেখানে ফাস্টফুড আইটেমের সব খাবার পাওয়া যায়। তবে বেড়া বাড়ির বিশেষত্ব হলো বাঁশের বেড়া ও কাঠের অবকাঠামো। বিনোদনপ্রেমীদের জন্য রয়েছে বসার সুন্দর ব্যবস্থা। খাবারের মানও বেশ ভালো।

3পেপেরনি রেস্টুরেন্ট: এটি মিলেনিয়াম সিটির মূল প্রবেশপথের বাঁ-দিকে অবস্থিত। সেখানে বাঙালিয়ানা খাবার সাদা ভাত, নানান পদের ভর্তা, শাক, সবজি, মাছ, মাংসসহ প্রায় সব ধরনের ফাস্টফুড পাবেন ভোজনরসিকরা। খাবারের মানও বেশ ভালো।

2মধু সিটি ফুড কোর্ট: মধু সিটি অফিস ভবনের ঠিক উল্টোপাশে মধু সিটি ফুড কোর্ট। সেখানে সারিবদ্ধভাবে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি খাবারের দোকান রয়েছে। এগুলোর সামনে খোলা স্থানে চেয়ার-টেবিল দিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব দোকানে বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড আইটেমের খাবার পাওয়া যায়। এছাড়া মিলবে কক্সবাজার থেকে আনা কাঁকড়া। অর্ডার করার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রাই করে দেওয়া হয় সেগুলো। এছাড়া চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ টোনা, কোরাল, রূপচাঁদাসহ বিভিন্ন মাছের বারবিকিউ করেও দেওয়া হয়। দামও হাতের নাগালে। এছাড়া এই ফুড কোর্টের ভেতরে আলাদা একটি স্থানে দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি বিনোদনের জন্য লাইভ কনসার্টের ব্যবস্থা থাকে প্রতি শুক্রবার।

7যেভাবে যাবেন
মধু সিটিতে কয়েকটি মাধ্যমে যাওয়া যায়। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি যেতে সিএনজি রিজার্ভ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। বিকল্পভাবে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা নিয়ে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ চার রাস্তার মোড়ে যেতে লাগবে ১০-১৫ টাকা। সেখান থেকে আটিবাজারগামী সিএনজি অথবা লেগুনা কিংবা পরিস্থান নামক বাসে উঠতে হবে। তারপর নামতে হবে ঘাটারচর মোড়ে। ভাড়া পড়বে ১০-১৫ টাকা। ঘাটারচর মোড় থেকে ১৫-২০ টাকা ভাড়ায় রিকশাযোগে চলে যেতে পারেন মধু সিটি ও মিলেনিয়াম সিটিতে। আর নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা থাকলে তো কথাই নেই!
ছবি: লেখক