প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল

13-09-18-PM_Opens Intercontinental Hotell Dhaka-33১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দুই দফা আক্রমণ চালিয়েছিলেন সেক্টর দুইয়ের অধীন ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ খ্যাত গেরিলারা। মুক্তিযোদ্ধারা বাঙালি জাতির মুক্তি ও পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঢাকায় প্রথম গেরিলা অপারেশন চালাতে আসেন। এর নাম ছিল ‘অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-হিট অ্যান্ড রান’। অত্যন্ত সফল এ অভিযানের মাধ্যমেই মূলত বাঙালির প্রতিরোধ যুদ্ধ সম্পর্ক জানতে সক্ষম হয় পুরো পৃথিবী।

বাংলাদেশে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার নতুনভাবে যাত্রা শুরুর সময় এমন কিছু স্মৃতিচারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে রমনা পার্ক সংলগ্ন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পাঁচ তারকা এই হোটেল উদ্বোধন করেন তিনি। তার মন্তব্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের নাম।

13-09-18-PM_Opens Intercontinental Hotell Dhaka-28প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সঙ্গে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনার সাক্ষী এই হোটেল।’

ইন্টারকন্টিনেন্টাল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তার ভাষ্য, ‘১৯৭০-এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরা ক্ষমতা দেয়নি। তখন এটাই ছিল একমাত্র ভালো মানের হোটেল। তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা এখানে উপস্থিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও সেই ভাষণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যখন শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেন, সেই সময়ে এখানে সাংবাদিকদের আনাগোনা শুরু হয়।’

13-09-18-PM_Opens Intercontinental Hotell Dhaka-10প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যেসব বিদেশি সাংবাদিক ছিল, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অ্যাকশনে যাওয়ার আগে তাদের হোটেলে আটক করে ফেলে। আর বের হতে দেয়নি। সায়মন ড্রিং তখন অল্প বয়সী ছিলেন। তিনি লুকিয়ে হোটেলের কিচেন দিয়ে কর্মচারীদের সহযোগিতায় বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। তিনিই ছিলেন প্রথম সাংবাদিক যিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগের কারণে ঢাকার রাজপথে পড়ে থাকা লাশের ছবি তুলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। কাজেই এই হোটেলের সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িত।’

13-09-18-PM_Opens Intercontinental Hotell Dhaka-29এই হোটেলের কাছে একসময় কৃষ্ণচূড়ার সারি, নাগালিঙ্গম ফুলের গাছ ও ক্যাননবল ফলের গাছ থাকার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, সংস্কারের মাধ্যমে ৬০ বছরের পুরনো ভবন নতুন রূপে সেজেছে। ভবনের মূল কাঠামো ঠিক রেখে যুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মোগল স্থাপত্যশৈলী। সঙ্গে আধুনিক সময়ের চাহিদা মেটাতে আনা হয়েছে অবকাঠামোগত পরিবর্তন। আন্তর্জাতিক মান রক্ষার জন্য হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ইন্টারকন্টিনেন্টালে যেমন সেবা ও সুবিধা থাকে, এই হোটেলও সেভাবে অতিথিদের জন্য নতুনভাবে সাজানো হয়েছে।

13-09-18-PM_Opens Intercontinental Hotell Dhaka-8জানা গেছে— ২২৬ কক্ষ বিশিষ্ট হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এখন ২০১টি প্রিমিয়াম ডিলাক্স রুম, ১০টি ডিলাক্স সুইট, ৫টি সুপিরিয়র স্যুট, ৫টি ডিপ্লোম্যাটিক স্যুট ও ৪টি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট আর অনেক ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ আছে।
ছবি: ফোকাস বাংলা