পরিকল্পনার বৃত্তে রাঙামাটির পর্যটন সম্ভাবনা

Rangamati Parzatan pic (9)১৯৬০ সালে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর এর সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে রাঙামাটির পর্যটনকে দাঁড় করাতে নানান পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু শুধু একটি ঝুলন্ত সেতু ছাড়া অর্ধশতাব্দীতে এখানে তেমন আর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় পর্যটনের উন্নয়ন করার দায়িত্ব আসে জেলা পরিষদের কাছে। ফলে পর্যটনের বিকাশে দেখা দেয় নতুন সম্ভাবনা। কিন্তু দুই দশকেও কোনও উদ্যোগ নিতে পারেনি জেলা পরিষদ।

Rangamati Parzatan pic (5)সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটির পর্যটন বিকাশে দুই বছর আগে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছিল রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। পরামর্শদাতা সংস্থা নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় এত টাকা বরাদ্দ দিতে অপারগতা জানিয়ে তা কাটছাটের পরামর্শ দেয়। এরপর জেলা পরিষদ থেকে প্রকল্প কাটছাট করে ৩০০ কোটি টাকার ডিপিপি পুনরায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

Rangamati Parzatan pic (2)এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ও পর্যটনের আহ্বায়ক অমিত চাকমা রাজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের চাওয়া অনুযায়ী ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্পের বরাদ্দ পেলে আমরা কাজ শুরু করতে পারবো। ইতোমধ্যে ফিশারি বাঁধ, সুবলং ঝরনা ও বালুখালি হর্টিকালচার, পর্যটন করপোরেশন এলাকাসহ আরও ছোট ছোট কাজ হয়েছে।’

Rangamati Parzatan pic (4)রাঙামাটির প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে মনে করিয়ে দিয়েছেন, পর্যটনের উন্নয়ন ঘটাতে গিয়ে পাহাড় যেন কাটা না হয়। তার মতে, প্রকৃতিকে ঠিক রেখেই পর্যটনের উন্নয়ন করার কথা ভাবা জরুরি। তিনি বলেন, ‘যেসব সম্ভাবনার কথা মাথায় নিয়ে কাপ্তাই লেক সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে পর্যটনের উন্নয়ন অন্যতম। অথচ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এ নিয়ে এগোনো যাচ্ছে না।’

Rangamati Parzatan pic (3)জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু পর্যটন স্পট তৈরি হলেও পর্যাপ্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার কারণে সেগুলোও বেশি সুবিধা করতে পারছে না। শহরের বাইরে কাপ্তাই যাওয়ার পথে আসাম বস্তি ব্রিজ, বেরান্না ও বরগাংয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু বিদ্যুতের সুবিধা না থাকায় জেনারেটর চালিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। এ কারণে অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

Rangamati Parzatan pic (1)বেরান্না রেস্তোরাঁর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অনিল চাকমার হতাশা, ‘প্রতি মাসে জেনারেটর চালাতে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো তেল খরচ করতে হয়। অথচ আমার প্রতিষ্ঠান থেকে দুই-তিন কিলোমিটার দূরেই কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় প্রত্যাশামাফিক মুনাফা আসছে না। এই সুবিধা পাওয়া গেলে কটেজ করা যেতো। পর্যটকরা রাতে লেকের পাশে কটেজে জোছনার আলো উপভোগ করতে পারতো।’

Rangamati Parzatan pic (11)স্বপ্ন নিয়ে পর্যটন ব্যবসা শুরু করেছিলেন নতুন উদ্যোক্তা গরবা রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী বাদশা ফয়সাল। তার আশা ছিল, জেলা পরিষদের ১ হাজার ২০০ কোটির প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে, হাজার হাজার পর্যটক রাঙামাটিতে ভিড় করবে। ফলে ব্যবসাও ভালো হবে। কিন্তু তার অভিযোগ, ‘গত দুই বছরে ১২ টাকার উন্নয়নও হয়নি। এভাবে পুরনো কিছু স্থাপনা দেখতে পর্যটকরা রাঙামাটি আসবেন কেন? তবে নতুন ও আকর্ষণীয় স্থাপনা তৈরির মাধ্যমে পর্যটকদের আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

Rangamati Parzatan pic (10)একই মন্তব্য হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাঈন উদ্দিন সেলিমের। তিনি বলেন, ‘পর্যটকরা রাঙামাটি এলে লেকে ঘোরার পর তাদের আর কোনও বেড়ানোর জায়গা থাকে না। তাই শহর ও শহরের বাইরে নতুন পর্যটন স্পট তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে সজাগ হওয়া প্রয়োজন।’

Rangamati Parzatan pic 12 (2)তবে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী শোনালেন ইতিবাচক খবর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ফুটপাতে টাইলস বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। তিনি মনে করেন, ‘জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ড মিলে কাজ করলে রাঙামাটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পর্যটনবান্ধব শহর হিসেবে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা সম্ভব।’