পদ্মার চরে কাশফুলের শুভ্রতা

Madaripur Kashbon Photo (01)‘শরত রানি যেন কাশের বোরখা খানি খুলে, কাশবনের ওই আড়াল থেকে নাচছে দুলে দুলে’— পদ্মার পাড়ে এলে এখন কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘কাশফুলের কাব্য’ কবিতা মনে পড়বে। নদীর জল বয়ে যাচ্ছে। ওপরে নীল আকাশ। চারপাশে মাঠের পর মাঠ শুভ্র কাশবন। পদ্মার ছোট-বড় প্রায় ১৫-১৬টি চরে এখন এমন দিগন্ত বিস্তৃত শুভ্রতা। শেষ বিকালের আলোয় কাশবনের সাদা ফুলের ওপর লালচে আভা ভ্রমণপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়।

চরের মানুষের জনবসতি ও জীবনযাত্রায় শুভ্র আমেজ ছড়িয়ে দিয়েছে কাশবন। নদীতে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। এর মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ডালি শরতের কাশবনে পর্যটক সমাগম চোখে পড়ার মতো।

Madaripur Kashbon Photo (04)কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌ-রুট হয়ে রাজধানীতে যায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী। লঞ্চ, ফেরি ও স্পিডবোটে যাতায়াতের সময় পদ্মার পাড়ে কাশফুলের শুভ্রতা উপভোগ করেন তারা। কাশবনে সৌন্দর্য দেখতে মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলার ভ্রমণপ্রেমীরাও ভিড় জমান। অনেকে দলবেঁধে নৌকা বা ট্রলার নিয়ে বেড়াতে যান চরে। কাশফুল কাছে পেলেই স্মার্টফোন অথবা ক্যামেরায় ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায় সবার মধ্যে।

ঢাকাগামী লঞ্চযাত্রী মাদারীপুরের কালকিনি সিনিয়র মাদ্রাসার ফাজিল তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলামের বেশ ভালো লেগেছে চরে। তার কথায়, ‘কাশবন অনেক সুন্দর। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। চারপাশে কাশফুল, কোনও কূল-কিনারা নেই। সব মিলিয়ে চমৎকার দৃশ্য।’

Madaripur Kashbon Photo (16)একই লঞ্চের আরেক যাত্রী লাবণী আক্তারের আক্ষেপ, ‘এমন সুন্দর দৃশ্য! কাশবনের ভেতরে গিয়ে ছবি তুলতে পারলে অনেক ভালো লাগতো।’

এই রুটের গোপালগঞ্জগামী যাত্রী মনোয়ার হোসেন লঞ্চে নদী পার হওয়ার সময় বেশকিছু ছবি তুললেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একসঙ্গে এতটা জায়গা জুড়ে কাশফুল দেখিনি কখনও। আগের চেয়ে এবার পদ্মায় অনেক বেশি কাশফুল দেখলাম।’

Madaripur Kashbon Photo (18)নদীর নতুন পলিমাটিতে কাশবন ভালো জন্মে বলে জানালেন শরীয়তপুরের নাওডোবা এলাকার শাহরুখ হোসেন খালেক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘প্রতি বছরই পদ্মাপাড়ে অনেক কাশবন হয়। এবার পদ্মায় ড্রেজিং করে মাটি চরে ফেলায় কাশবন বেশি হয়েছে।’

Madaripur Kashbon Photo (11)পদ্মার পাড়ে শরতের কাশবন তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে দেখা যায় বলে জানালেন মাদারীপুরের পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সুবল বিশ্বাস। তিনি মনে করেন, এখানে মৌসুমি পর্যটন কেন্দ্র করা যেতে পারে। তার বক্তব্য হলো, ‘এবার পদ্মায় কাশবন অনেক বেশি হয়েছে। কাশফুলের শুভ্রতা ভ্রমণপিপাসু মানুষের মনে দোলা দেয়। তাই অনেকে এখানে বেড়াতে আসে। নৌ-যান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ পর্যটন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধান থাকলে পদ্মার চর হয়ে উঠতে পারে ব্যতিক্রম বিনোদন কেন্দ্র।’

এদিকে কাশফুল শুকিয়ে যাওয়ার পর কাশবনের অংশ কেটে রাখছেন স্থানীয় কৃষকরা। ইতোমধ্যে ছোট-বড় ট্রলার নিয়ে কাশ সংগ্রহ শুরু হয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষের রান্না-বান্নার জ্বালানি হিসেবে এগুলোর কদর আছে।

Madaripur Kashbon Photo (14)এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পানের বরজের ছাউনি তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে এই কাশের বহু ধরনের ব্যবহার আছে। কৃষকরা কাশ কেটে নদীর চরে শুকিয়ে নৌকায় করে নিয়ে আসন কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের পশ্চিম প্রান্তে। ইউনিয়ন পরিষদের পাশে। এরপর বরিশালের বিভিন্ন পানের বরজে বিক্রির জন্য ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়। কম দামে পাওয়ায় পাটখড়ির চেয়ে কাশের কদর বেশি।