বান্দরবানে আমাদের আগামী দুই দিনের আবাস ঠিক হয়েছে যেখানে, সেটি বেশ বিলাসী মানুষদের জায়গা। হলফ করে বলতে পারি, পাহাড়ে এসে কখনও এত দামি জায়গায় থাকিনি। এখানে এলে সবারই নয়ন জুড়িয়ে যায়। বাংলোর ব্যালকনিতে দাঁড়ালেই আদিগন্ত পাহাড়ের সারি। একটু ওপরে ওঠার পর দূরে বান্দরবান শহরের একাংশ দেখা যাচ্ছে।
সময়টা ভরা শরৎ। পাহাড়ে এমন সময় এই রোদ্দুর এই বৃষ্টি। কিছুক্ষণ আগেও আকাশ ছিল ঘন নীল। এর মধ্যে একপাশ ধরে মেঘেরা এসে তাদের দখল করে নিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, আরেক পাশে কিন্তু রোদ আছে! তক্কে তক্কে বসে আছি। ঝুপ করে শুধু বৃষ্টি নামতে বাকি। হলোও তাই। পাঁচ মিনিটের ঝুম বৃষ্টি। তারপর শুরু হলো রঙের জাদু।
বর্ষার স্পর্শ পেয়ে এখন সবুজ বরণ উপত্যকার প্রতিটি ভাঁজ। রংধনু বিলীন হলো সেই সবুজ ক্যানভাসে। কিন্তু তার রেশ থেকে গেলো। দিগন্তে মিশে গিয়ে তৈরি করেছে এমন রঙিন কোলাজ, যার দিকে তাকিয়ে না থেকে পারা যায় না। আমার ঘণ্টাখানেক লাগলো ঘোর কাটতে। ধীরে ধীরে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে পাহাড়ে।
আকাশে বিশাল চাঁদ। তার আলোয় ভেসে যাচ্ছে চরাচর। পাহাড়ে এমন পরিবেশ পাওয়াও রোমাঞ্চকর ব্যাপার। শহুরে চাঁদের কাছ থেকে এমন অনুভূতি কখনও পাবেন না। এটা মোটামুটি নিশ্চিত! একটানা ঝিঁঝির সমবেত সংগীত সেই আগুনে ঘি ঢেলে দিলো। পাহাড়ের আরেকটু গহীনে এমন একটা রাত কাটানোর জন্য মনটা আকুপাকু করলেও এবার অন্তত এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই মনে হলো।
সকালে একটু দেরি করে ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলতেই জানালোর পর্দাটা সরালাম। মুহূর্তে ফিরে এলো ঠিক আগের রাতের মুগ্ধতা। চাঁদ ছিল আগের কুশীলব, আর এখন মেঘ! চোখের সামনে দিগন্ত অবধি সাদা মেঘ চাদর বিছিয়ে ঢেকে দিয়েছে চরাচর। ফাঁকে ফাঁকে কিছু পাহাড়ের চূড়া মাথা গলানোর চেষ্টা করছে। প্রথম সূর্যটা ঠিক মেঘের ওপরে।
পাহাড়ে আর ক’দিনই থাকি। কিন্তু শহুরে ব্যস্ত সময়গুলোতে যখন এসব ছবি মানসপটে ভেসে ওঠে, সেখান থেকেই ভালোবাসার পাহাড়ে ফেরার প্রণোদনা পাই।
ছবি: লেখক