শুরুর দিকে রাস্তা প্রায় সমতল। তাই কারও তেমন কষ্ট হয়নি। জগন্নাথ মন্দিরের কাছে যেতেই চোখে পড়লো চন্দ্রনাথের চূড়া। সেখান থেকে বিরুপাক্ষ মন্দিরও দেখা যায়। একদিকে খাড়া ঢালু, আরেকদিকে সামনে সুউচ্চ পাহাড়। দেখতে বেশ চমৎকার। সেখানে একটি দোকান দেখে খানিকটা জিরিয়ে নিলাম। এখনও মূল ট্রেকিং শুরু হয়নি। ওপরে ওঠার জন্য ক্লান্তি দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর আবারও শুরু হলো আমাদের পথচলা। অল্প কিছুদূর সামনে যেতেই খাড়া সিঁড়ি। সেখানে পথটা দু’ভাগ হয়ে গেছে। আমরা বেছে নিলাম বাঁ-দিকের পথ। কারণ, এই পথে সিঁড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম। সিঁড়ি ধরে এগোচ্ছি। দু’পাশের প্রকৃতি যেন আমাদের অভ্যর্থনা জানালো। ওদিকে মাথার ওপর সূর্য তখন ক্রমে চড়ে বসেছে।
সিঁড়ির দু’পাশে দেখার মতো তেমন কিছু ছিল না। তাই আমরা অবিরাম ওপরে উঠতে লাগলাম। ততক্ষণে সবার পোশাক ঘামে ভিজে একাকার। দুর্বল হয়ে পড়ার উপক্রম। তাই এবার পানির সঙ্গে মেশানো হলো স্যালাইন। পাহাড় ট্রেকিংয়ে স্যালাইন শরীরের পানিশূন্যতা দূরীকরণে বেশ কাজে দেয়।
একটু সামনে যেতেই শেষ হলো একঘেঁয়ে সিঁড়ি জার্নি। এর চেয়ে খাড়া মাটি বেয়ে ওপরে ওঠা অনেক সহজ। সিঁড়ি শেষ হতেই পাহাড়ের একদিকের ঢাল চলে এলো সামনে। ততক্ষণে আমরা অনেক ওপরে উঠে গেছি। ওপর থেকে পাহাড়ের ঢাল দেখতে খুব সুন্দর লাগে। পুরো ঢাল পল্লব আচ্ছাদিত। ওপর থেকে নিচে তাকাতেই আমরা বিস্মিত ও বিমোহিত। সেখানে অল্প সময়ের জন্য যাত্রাবিরতি দিয়ে ছবি তোলায় মেতে উঠলো সবাই।
ক্লান্তি কাটাতে সিঁড়িতেই শুয়ে পড়লাম। বিরুপাক্ষ মন্দির থেকে চারদিকের দৃশ্যাবলি দারুণ। পশ্চিমে তাকালে সীতাকুণ্ড বাজার পেরিয়ে বঙ্গোপসাগর দেখা যায়। তিনদিকে পাহাড়ি ঢাল নিচে নেমে গেছে অনেকখানি। এই ঢালের সৌন্দর্য দেখলে আপনাআপনি প্রশান্তি চলে আসে। মন্দিরের আরেকদিক দিয়ে চন্দ্রনাথের চূড়ার রাস্তা চলে গেছে। চূড়ায় আরোহণকারী অভিযাত্রীরা বিরুপাক্ষ মন্দিরকে বেজক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করেন। লম্বা খাড়া পথ পেরিয়ে এখানে এসে দীর্ঘ সময় বিশ্রাম নেন সবাই। আমরা প্রায় আধঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দির অবস্থিত। মন্দিরে পুরোহিতরা প্রার্থনা করছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের জন্য কল্যাণ কামনায় ধ্যানমগ্ন। মন্দিরের একপাশে বিশ্রামাগার। সেখান থেকে তিনদিকের পরিবেশ দেখা যায়।
নিরিবিলি প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছু মুহূর্ত কাটাতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। যদিও পাহাড়ে উঠতে কিছুটা কষ্ট হবে। কিন্তু চূড়ায় ওঠার পর মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।