বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা কে জানে!

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীকে ঘিরেই এ দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতির বিকাশ ও সভ্যতার সূচনা হয়েছে। অবসরে ভ্রমণপিপাসুরা নদীর পাড়ে বেড়াতে যায়। নদীর সৌন্দর্য মানুষকে কাছে টানে চিরকাল। বাংলাদেশের প্রতিটি নদীর রয়েছে বাহারি নাম, বৈচিত্র্যময় রঙ, রূপ ও সংস্কৃতি।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নদী পর্যটনের সম্ভাবনা অপরিসীম। এই নদীই হয়ে উঠতে পারে পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। নদীকে ব্যবহার করেই পর্যটন খাতে আসতে পারে নতুন গতি। এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর (মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড) মতো বাংলাদেশেও নদী হয়ে উঠতে পারে বিদেশি পর্যটকদের আগ্রহের কারণ।

কিন্তু বাংলাদেশে মোট কত নদী আছে? এর কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কেউ বলেন, সেই সংখ্যা হয়তো ৮০০ হবে। কারও মতে, দেশে নদীর সংখ্যা ৪০৫। আবার অনেকে কেউ নদীর সংখ্যা বলছেন ৫৪০। বাংলাদেশের নদীর সৌন্দর্য ও পর্যটন শিল্প বিকাশের ওপর আয়োজিত সেমিনারে এসব তথ্য জানা গেছে।

পদ্মা নদী (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সকালে ঢাবি বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘সমৃদ্ধি ও বৈচিত্র্যে নদী পর্যটন’ শীর্ষক সেমিনার। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘আমরা নদীর কোনও সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারছি না। আমাদের কাছে তা নেই। তবে সিজিএস (চিফ জেনারেল স্টাফ) বলেছে, দেশে নদীর সংখ্যা ৪০৫। আমাদের জেলা ও উপজেলার কমিটিগুলো একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর সংখ্যা বের করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।’

নৌ-পর্যটন বিকাশের জন্য নদী বাঁচিয়ে রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। তার মতে, ‘পর্যটন উন্নয়নের সঙ্গে নদীর উন্নয়ন জড়িত। নদীকেন্দ্রিক পর্যটন ও নদী উন্নয়নের জন্য উচ্চতর গবেষণা প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত তেমন কোনও গবেষণা হয়নি।’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া। হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয়ে নদীর সুনির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যান নেই। কেউ নদীর সংখ্যা বলছেন ৫৪০। তবে সংখ্যাটা হয়তো ৮০০ হতে পারে।’

অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়ার মন্তব্য, ‘আমাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি, আবহমান জীবনধারা সবকিছুই নদীকেন্দ্রিক। তাই নদী বাঁচলেই দেশ বাচবে। একটি নদীর মৃত্যু মানে শুধু একটি জলধারা নয়, বরং দেশের অর্থনীতির মৃত্যু, সভ্যতা-সংস্কৃতির স্থবিরতা। কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাব রয়েছে।’

চাঁদপুরে তিন মোহনায় সন্ধ্যার দৃশ্য (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল ও ফেস্টিভ অ্যান্ড কালচারাল ট্যুরিজম কনসোর্টিয়ামের যৌথ উদ্যোগে আর ঢাবি ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট সেমিনারের আয়োজন করে। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান খান কবির, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম ও ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক এ কে আরিফ উদ্দিন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাবি ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। তার ভাষ্য, ‘গার্মেন্টস শিল্পের পর দেশের অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে পর্যটন শিল্প। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের নদীগুলো হতে পারে পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু। সম্প্রতি নদী পর্যটনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নানান কার্যকরী ও টেকসই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাই এখনই সময় প্রচার-প্রচারণা আর উৎসাহিতকরণের মাধ্যমে নদী পর্যটনকে আরও কার্যকরী করে তোলা। সেই সঙ্গে নদীভিত্তিক ট্যুর পরিকল্পনা ও পরিচালনার মাধ্যমে পর্যটন খাতে নতুন মাত্রা যোগ করা।’