কায়াক চালাতে প্রথমবার পানিতে বৈঠা ফেলতেই মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি খেলে যায়। মনে হচ্ছিল, জীবনে বুঝি প্রথমবারের মতো নৌকাবাইচ করছি! কায়াকের নিচে লেকের স্বচ্ছ নীল জলরাশির সুবাদে আনন্দ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তার ওপর সূর্য তখন গোধূলি লগ্নে। নিচে অথৈ নীল জল, পশ্চিমে অস্তমান সূর্য; এর মধ্যে পানিতে ভাসমান কায়াকে বৈঠা হাতে থাকা দারুণ সুখকর ব্যাপার।
মহামায়া কায়াক পয়েন্টের স্বত্বাধিকারী শামীম ভাই পূর্বপরিচিত। তাই আমাদের জন্য আগেই বিশেষভাবে রাখা ছিল চারটি কায়াক। বিকাল ৫টার দিকে সবাই গিয়ে লেকের ফটকে পৌঁছালাম। আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন মহামায়া কায়াক পয়েন্টের ম্যানেজার রানা। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সবাইকে দেওয়া হলো লাইফ জ্যাকেট।
তার ওপর ক্রমাগত জোরে বৈঠা মারার কারণে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ঘাম ছোটার অবস্থা। তাই কায়াকের গতি কমিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। সূয্যিমামা ততক্ষণে অস্ত যাওয়া শুরু করেছে। তার রেখে যাওয়া লাল আবহ লেকের পানিতে প্রতিফলিত হচ্ছে। লেকের নীল পানি আর আকাশের লাল বর্ণের সন্ধিক্ষণের সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যাবে কেবল সামনে থেকে দেখলে!
পশ্চিমমুখী আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছি আর প্যাডেল মেরে ঘাটের দিকে এগোচ্ছি। অন্যরা তখনও কায়াকের আনন্দে মশগুল। সূর্য অস্ত যাওয়ায় চারদিক ক্রমে অন্ধকার হয়ে আসছে। লোকে লোকারণ্য মহামায়া লেকে কিছুক্ষণের মধ্যে নেমে আসবে রাতের নিস্তব্ধতা। কালবিলম্ব না করে দ্রুত প্যাডেল মেরে ঘাটে এসে তরী ভেড়ালাম।
সেদিন স্মরণীয় একটি বিকাল কেটেছিল মহামায়া লেকে। শুধু নিজে আনন্দ পেয়েছি তা নয়, বন্ধুরাও প্রাণভরে কায়াকিংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করেছে। সাধ্যের মধ্যে এমন চমৎকার বিনোদনের ব্যবস্থা করায় মায়ামায়া কায়াক পয়েন্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। আপনারাও একদিন মহামায়া লেকে কায়াকিং করে আসতে পারেন। কে জানে, জীবনের সেরা মুহূর্ত হয়তো পেয়ে যাবেন সেখানে!
মহামায়া লেকে ঢাকা থেকে গেলে চট্টগ্রামগামী ইউনিক, হানিফ, শ্যামলী, সৌদিয়া কিংবা এনা বাসে উঠে পড়ুন। ভাড়া নেবে ৪৮০ টাকা। এসির ক্ষেত্রে এনা, হানিফ, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, দেশ ট্রাভেলস, সিল্ক লাইন, প্রেসিডেন্ট ট্রাভেলসে যেতে পারেন। বাসের মানভেদে ভাড়া নেবে ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মীরসরাইয়ের ঠাকুরদীঘি বাজারে নেমে সেখান থেকে সিএনজিতে করে মহামায়া লেকের ফটকে চলে যান। এরপর ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে ঢুকে পড়ুন লেকের ভেতরে।