কক্সবাজার থেকে কাকভোরে রিজার্ভ বাসে চলে গেলাম দমদমিয়া জেটিতে। এলসিটি কুতুবদিয়া জাহাজের টিকিট কাটা ছিল আগেই। এটি ঐতিহ্যবাহী ক্ল্যাসিক জাহাজ। নির্ধারিত সময়ে জাহাজ ছাড়লো। মুহূর্তেই দু’পাশে সিগালের ওড়াওড়ি চোখে পড়লো। নাফ নদীর মোহনা ধরে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। সমানতালে সামনে এগোচ্ছে সিগাল। কেউ কেউ তাদের দিকে খাবার ছুড়ে দিচ্ছে। খাবার পানিতে পড়ার আগেই কেউ না কেউ লুফে নিচ্ছে। জাহাজ ধীরগতিতে এগোতে এগোতে নদী পেরিয়ে সাগরে নামলো।
আরেকটু সামনে যেতেই শুরু হলো তুমুল ঢেউ। তবে মোটেই ভয় পাচ্ছিলাম না। বরং জাহাজের সঙ্গে সাগরের ঢেউয়ের মিতালী দেখতে চমৎকার লাগছিল। ঢেউ কাটাতে কাটাতে আমরা সেন্টমার্টিনের জেটির দিকে এগোচ্ছি। মাঝসাগর থেকে সবুজ গাছপালা ঘেরা দ্বীপটি দেখতে বেশ ভালোই লেগেছে।
সাগরের উত্তাল রূপ দেখে কাটলো পুরো বিকাল। যত দেখেছি ততই মুগ্ধ হয়েছি। সন্ধ্যায় হোটলে ফিরে এসে আবারও সৈকতে পা ফেললাম। কিছুক্ষণের মধ্যে চাঁদমামা মাথার ওপর থেকে স্নিগ্ধতা ছড়াতে লাগলো। সেদিন ছিল পূর্ণিমা, তাই চাঁদটা একটু বেশিই আলো দিচ্ছিল। ভরা জ্যোৎস্নার সঙ্গে সাগরের গর্জন, এ যেন সার্থক এক রজনী। এসব দেখে আম্মাও আনন্দে আত্মহারা। তাকে এত কষ্ট দিয়ে সেন্টমার্টিন নিয়ে যাওয়া বিফলে যায়নি মনে হচ্ছে।
পরদিন সকালে যাই ছেড়া দ্বীপে। সেখানে প্রবালের সংখ্যা অনেক বেশি। হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখেছি পুরো এলাকা। ছেড়া দ্বীপে ট্রলার ঘাটের পানি দেখে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছি। স্বচ্ছ নীল পানি। ওপর থেকে পানির নিচের সবকিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। মনে হলো, একটি সুঁই পড়লেও তা খুঁজে বের করে আনা যাবে। মন চেয়েছে, পানিতে নেমে দাপাদাপি করি। এমন লোভনীয় পরিবেশে নিজেকে ধরে রাখা মুশকিল। কিন্ত সঙ্গে অতিরিক্ত কাপড় না থাকায় ইচ্ছেটাকে জলাঞ্জলি দিতে হলো।
সেন্টমার্টিন ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে বিকালে আবারও সাগরপাড়ের দিকে বেরিয়ে গেলাম। আম্মা দেখি বেশ উপভোগ করছে। একেকটা ঢেউ যেন মুক্তার মতোই দ্যুতি ছড়ায়। ঢেউয়ের তোড়ে সাম্পানগুলো নাচে। আহা কী এক অপূর্ব দৃশ্য!
এখনও মনে গেঁথে আছে হোটেল কর্তৃপক্ষের অমায়িক ব্যবহার, সাগরের তাজা মাছ ও জ্যোৎস্না রাতে সমুদ্র দর্শন। সেন্টমার্টিনে বসে জ্যোৎস্না উপভোগ করতে চাইলে এবারই শেষ সুযোগ। কারণ আগামী বছরের ১ মার্চ থেকে সেখানে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ। তার আগেই একবার ঘুরে আসুন।