কোন জেলার নামকরণ কীভাবে

ঠাকুরবাড়ি থেকে লোকজনের মুখে মুখে ‘ঠাকুরগাঁও’

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত।

দেশের আট বিভাগে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ) ৬৪ জেলা। প্রতিটি জেলার নামকরণের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। এসব ঘটনা ভ্রমণপিপাসু উৎসুক মনকে আকর্ষণ করে। তাই বাংলা ট্রিবিউন জার্নিতে ধারাবাহিকভাবে জানানো হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

বালিয়া মসজিদ (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)ঠাকুরগাঁও জেলা

হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য ও পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার সম্মিলনে ঠাকুরগাঁও হলো প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জনপদ। এর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী অসংখ্য স্থাপনা। জেলার অতি প্রাচীন পুকুর ও গড়গুলোর অস্তিত্ব সুপ্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন তুলে ধরে।

ঠাকুর-অর্থাৎ ব্রাহ্মণদের সংখ্যাধিক্যের কারণে স্থানটির নাম ঠাকুরগাঁও হয়েছে। ১৮৬০ সালে এটি মহকুমা হিসেবে ঘোষিত হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের আদি নাম ছিল নিশ্চিন্তপুর। নামটি উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিশ্চিন্তে বসবাসের উপযোগী কোনও জনপদের ছবি।

রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)ঠাকুরগাঁওয়ের নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, বর্তমানে যেখানে জেলার অফিস-আদালত অবস্থিত সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে আকচা ইউনিয়নের একটি মৌজায় নারায়ণ চক্রবর্তী ও সতীশ চক্রবর্তী নামে দুই ভাই বসবাস করতেন। সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির সুবাদে তাদের খুব নামডাক ছিল। সেখানকার লোকজন চক্রবর্তী বাড়িকে ঠাকুরবাড়ি বলতেন। পরে স্থানীয় লোকজন এই জায়গাকে ঠাকুরবাড়ি থেকে ‘ঠাকুরগাঁও’ বলতে শুরু করে। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ঠাকুরগাঁও।

লোকসাহিত্য, লোকনৃত্য, ধামের গান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, বাউল, মুর্শিদি, মারফতি, পালা গান, কবিগান, বিচার গান, কোয়ালী গান, বিষহরি গান, সত্যপীরের গান, কীর্তন, বিয়ের গান, যাত্রা, আদিবাসীদের গান, জারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁওয়ের লোকসংস্কৃতির অবদান রয়েছে।

জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)এই জেলার দর্শনীয় স্থান ও পুরাকীর্তির মধ্যে রয়েছে রাণীশংকৈল (রাজা টংকনাথের) জমিদার বাড়ি, হরিপুর রাজবাড়ি, হরিণমারী শিবমন্দির, গোরক্ষনাথ মন্দির, কূপ ও শিলালিপি, রাজভিটা, জগদল রাজবাড়ি, মালদুয়ার জমিদার বাড়ি, মহালবাড়ি মসজিদ, সনগাঁ শাহী মসজিদ, ফতেহপুর মসজিদ, জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ, শালবাড়ি মসজিদ ও ইমামবাড়া, ছোট বালিয়া জামে মসজিদ, মেদিনী সাগর জামে মসজিদ, গেদুড়া মসজিদ, রামরাই দীঘি, খুনিয়া দীঘি, শাপলা পেয়ালা দীঘি, খুরুম খুয়া দীঘি, প্রাচীন রাজভিটা, প্রাচীন জনপদ নেকমরদ, নাথ মন্দির, গোরক্ষনাথ মন্দির ও তৎসংলগ্ন কূপ ও শিলালিপি, গোবিন্দনগর মন্দির, খোলাহাট মন্দির, কোরম খানের গড়, বাংলা গড়, বলাকা উদ্যান, টাঙ্গন ব্যারেজ, বালিয়াডাঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী সূর্যপুরী আমগাছ, পীর নাছিরউদ্দীন শাহের মাজার শরিফ।