ট্রাভেলগ

রাখের উপবাস ও লোকনাথ বাবার আশ্রমে এক সন্ধ্যায়

IMG_0695নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ের অন্তর্ভুক্ত গ্রাম বারোদীতে অবস্থিত শ্রী শ্রী লোকনাথ বাবার আশ্রম। গত ৬ নভেম্বর ঘুরে এলাম সেখানে। মূল উদ্দেশ্য ছিল রাখের উপবাস। এই আয়োজন কার্তিক উপবাস হিসেবেও পরিচিত। রাখের উপবাস এক ধরনের মানত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কার্তিক মাসের শেষ দুই মঙ্গল ও শনিবার পালন করে থাকেন। শোনা যায়, এই চার দিনের যেকোনও একদিন উপবাস করা যায়। এই উপবাস হিন্দু ধর্মাবলম্বী যেকোনও নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পালন করতে পারেন।

উপবাস ভাঙার জন্য বারোদীতে অবস্থিত লোকনাথ বাবার আশ্রমে সবাই একত্র হন। শুধু বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ই নয়, উপবাস উপলক্ষে ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে এই আশ্রমে সনাতন ধর্মের অনুসারীরা জমায়েত হয়ে থাকেন।

ঠিক একবছর আগে রাখের উপবাসের কথা প্রথম জানতে পারি। তখন ফেসবুকে ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ গ্রুপে একজন ভ্রমণপ্রেমী নিজের তোলা একটি সুন্দর ছবি প্রকাশ করেন। এটি দেখামাত্রই স্থির করে ফেলি, সেখানে একবার যেতেই হবে। কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। উপবাসের প্রথম দিনেই একাই যাবো বলে ঠিক করি। শুধু একটি উৎসবের জন্য না গিয়ে একদিনেই কয়েক বছর আগে ঘুরে আসা পানাম নগরী ও লোকশিল্প জাদুঘর আরেকবার দেখে আসার পরিকল্পনা ছিল।

IMG_0661নারায়ণগঞ্জের রাস্তাঘাট পুরোপুরি অচেনা আমার। স্থানীয় বন্ধুদের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার পর একজন হৃদয়বান তার গাড়ি ও ড্রাইভারকে পুরোদিনের জন্য বরাদ্দ দিলেন আমাকে। সত্যি বলতে, এই সাহায্যটুকু না পেলে বেশ ঝামেলাই পোহাতে হতো।

IMG_0700উৎসবের স্থায়িত্বকাল বড়জোড় রাত ৮টা পর্যন্ত। সারাদিন পানাম নগরী ও লোকশিল্প জাদুঘর ঘূুরে বারোদীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি বেলা সাড়ে ৩টায়। দীর্ঘ ও বেশ কঠিন পথ পাড়ি দিতে হলো। প্রায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে লোকনাথ বাবার আশ্রমে পৌঁছাই। কিন্তু উপবাস ভাঙার পরে কিছুক্ষণ পূজা করেই সেদিনের মতো অনুষ্ঠান শেষ। জানা গেলো, রাত ১২টার দিকে পূর্ণ অমাবস্যায় একই প্রাঙ্গণে কালীপূজার উৎসব শুরু হবে। 

IMG_0669এই আশ্রম প্রাঙ্গণে শিব, দুর্গা আর কালীমন্দিরও আছে। এছাড়া চোখে পড়লো দুটি বহুতল অতিথিশালা। এই আশ্রমকে ঘিরে সারাবছর ধরেই বেশকিছু স্যুভেনির শপ ও মিষ্টির দোকান থাকে সেখানে।

IMG_0693পূজা শুরুর আগে আশ্রমের সামনের দোকানে গিয়ে লুচি, পরোটা আর সবজি দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিই। খাওয়ার পরে ড্রাইভার ভাই বিশ্রামের জন্য গাড়ির উদ্দেশে চলে যান। আমি ক্যামেরা হাতে উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশ করি। আয়োজক ও উপবাসকারী সবাই বেশ বন্ধুসুলভ ও সহযোগী মনোভাবাপন্ন। উৎসবের প্রস্তুতি পর্ব থেকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইচ্ছেমতো ছবি তুলেও মন ভরেনি।

IMG_0672একসঙ্গে এত রঙ, আলো, ধূপ-মোমবাতি-আগরবাতির ধোঁয়া ও সুগন্ধ আর রঙ-বেরঙের মানুষের সমারোহ ধর্মীয় উৎসব ছাড়া এমনিতেও পাওয়া যায় না। তবে ধোঁয়ার কারণে চোখ মেলে রাখতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে।

ওইদিন উৎসব শেষে গাড়িতে চড়ে রাত ১০টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাই। সেই সঙ্গে নিয়ে আসি মনে রাখার মতো অনন্য স্মৃতি।

IMG_0631যেভাবে যাবেন
গুলিস্তান থেকে বাসে নারায়ণগঞ্জ, তারপর সেখান থেকে অটোতে চড়ে বারোদী সহজেই যাওয়া যায়। আশ্রমের পথ স্থানীয় সবারই চেনা। খরচ নাগালের মধ্যে। সব মিলিয়ে যাতায়াতের জন্য গুনতে হবে ২০০-২৫০ টাকা। তবে মনে রাখবেন, ধর্মীয় ভাবমূর্তিকে আঘাত করে এমন কোনও আচরণ কোনোভাবেই করা যাবে না।

IMG_0638ছবি: লেখক