ট্রাভেলগ

সিঙ্গাপুরে শেষ বিকেলে ফেসবুক অফিসে

ফেসবুক অফিসের ভেতরে লাইক দেয়াল। দেয়াল জুড়ে লাইক চিহ্ন। এই দেয়ালের গায়ে রাখা চেয়ারে বসাও যায়।মাস তিনেক আগের কথা। এশিয়ান ফেস্টিভ্যাল অব চিলড্রেনস কন্টেন্টে যোগ দিতে ৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা থেকে উড়াল দিলাম। উৎসব হবে ৬ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর। হাতে দেড় দিন সময়। মেসেজ পাঠালাম অ্যারোনকে। তার বাড়ি হংকং। ২০১৭ সালে আমাদের পরিচয়। অ্যারোনের বান্ধবী লেখালেখি করেন। সিঙ্গাপুরে। সেই সূত্রে। আর অ্যারোন এখন চাকরি করেন ফেসবুকের সিঙ্গাপুর অফিসে। মেসেজ পাঠানোর কয়েক সেকেন্ড পরেই অ্যারোনের উত্তর। তিনি সিঙ্গাপুরে ফেসবুক অফিস ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানালেন। চটজলদি লুফেও নিলাম।

কাজের ফাঁকে এখানে এসে জিরিয়ে নেওয়া যায়। চাইলে উল্টানো যায় বইয়ের পাতা।৫ সেপ্টেম্বর বিকালে অ্যারোনের দেওয়া তথ্য ধরে চলে গেলাম ৭ স্ট্র্রেইট ভিউ, ওয়েস্ট টাওয়ার, মেরিনা ওয়ানের রিসিপশনে। এ কী! অ্যারোন আমার অপেক্ষায় বসে আছেন। ঘড়ির ছোট কাঁটাটি যখন চার-এর ঘরে তখন অ্যারোন আমাকে নিয়ে লিফটে উঠলেন। এই মেরিনা ওয়ানের নাম অনেক শুনেছি। স্থাপত্যশৈলীর জন্য জগৎজোড়া খ্যাতি। অনেক পুরস্কারও জিতেছে মেরিনা ওয়ান।

এই স্ক্রিনে নিবন্ধন করে মূল অফিসে প্রবেশ করতে হয়।অ্যারোন নিজ দায়িত্বে ওয়েস্ট টাওয়ারের লিফটের বাটন চাপলেন। আমরা উঠে গেলাম ১৮ তলায়। নাম এন্ট্রি করলাম। আগেই আমার সব তথ্য দেওয়া ছিল। নাম এন্ট্রির পর ছবিসহ ডিজিটাল আইডি কার্ড দেওয়া হলো। সেই কার্ড গলায় ঝুলিয়ে পা-বাড়ালাম।

অফিসে প্রবেশের আগে এখানে অপেক্ষা করতে হয় দর্শনার্থীদের। যদিও আমাকে এখানে বসতে হয়নি।সুসজ্জিত ফেসবুক অফিস। যেদিকে চোখ যায় অবাক হই। চোখ যেন সবখানেই আটকে যায়! অ্যারোন বললেন, ‘আসেন, এদিক থেকে শুর“ করি।’ জানতে চাইলাম, কতক্ষণ সময় আমার? তার উত্তর, ‘চাইলে আপনি থেকেও যেতে পারেন আজ।’ বুঝলাম, রসিকতা ভালোই জানেন তিনি।

বারান্দার এই চেয়ারে বসে দেখা যায় সাগরের নীল জলরাশি।সামনে এগোতোই চোখে পড়লো ইনস্টাগ্রামের ইয়াবড় টিভি। এতবড় টিভি দেখে অবাক হইনি। কারণ, ফেসবুক নিজেই তো তার সৃষ্টি আর কাজ দিয়ে আমাদের অবাক জগত থেকে অনেক দূরে টেনে নিয়ে গেছে। টিভির পর্দা থেকে চোখ টেনে নিয়ে গেলো সাগর। ফেসবুক অফিসের কাচের দেয়াল গলিয়ে দৃষ্টি চলে যায় নীল সাগরে। অন্যরকম ভালোলাগা খেলা করে মনে। চোখের ক্লান্তি দূর করতে বড্ড পটু সাগর। আমারও সব ক্লান্তি যেন দূর হয়ে গেলো।

ফেসবুক অফিসের বিশাল ইনস্ট্রাগ্রাম টিভিফেসবুক অফিসে এসে বাইরের দুনিয়া দেখে সময় নষ্ট না করার তাড়া দিলেন না অ্যারোন। তবে চুপিচুপি এসে হাতে ধরিয়ে দিলেন মার্কার। তারপর ইশারা করলেন ফেসবুক ওয়ালের দিকে। ফেসবুক আর গুগলে অনেক ছবি দেখেছি এই ওয়ালের। এবার নিজেই সেই সাদা ওয়ালের সামনে দাঁড়ানো। কী লিখবো? ভাবনার কিছু নেই। বাংলায় লিখে দিলাম— ভালোবাসি বাংলাদেশ! ফেসবুক ওয়ালজুড়ে ইংরেজির ছড়াছড়ি। কেবল একটা লেখাই বাংলা। তখন নিজের ভাষার জন্য খুব গর্ব অনুভব হয়।

এটি মিনি থিয়েটার। থিয়েটার জুড়ে মনিটর। স্ক্রিনে টাচ করতেই মিউজিক, সেই সঙ্গে বাবলের ওড়াওড়িফেসবুক অফিসে এসে পড়েছে শেষ বিকালের আলো। যাকে বলে, কনে দেখা আলো। সেই আলোরও একটা ভাষা আছে। সবকিছু কেমন অন্যরকম হয়ে ধরা দেয় এই আলোতে।

অফিসের দেয়াল জুড়ে এমন বাণী...অ্যারোন আমাকে কফি বারে নিয়ে গেলেন। সেলফ সার্ভিসে কফি নিয়ে বিকালের আলোয় সাগর দেখতে দেখতে অ্যারোনের ফেসবুক অফিসে যোগ দেওয়ার গল্প শুনলাম।

নোটিশ বোর্ড। এখানে পাওয়া যায় অফিসিয়াল বিভিন্ন খবরফের হাঁটা। এবার যে পথ ধরে চলতে শুরু করলাম সেই পথের পাশের দেয়ালে আত্মবিশ্বাসী সব কথা। কেউ ভেঙে পড়লে, নিজের প্রতি হতাশা কাজ করলে এই দেয়ালের সামনে এসে দাঁড়ালে সব হতাশা মুহূর্তেই উধাও হয়ে যাবে!

৭ স্ট্র্রেইট ভিউ, ওয়েস্ট টাওয়ার, মেরিনা ওয়ান। এখানেই ফেসবুকের নতুন অফিসতারপর ছোট্ট মিনি থিয়েটার। থিয়েটার জুড়ে মনিটর। স্ক্রিনে টাচ করতেই মিউজিক, সেই সঙ্গে বাবলের ওড়াওড়ি। একপর্যায়ে বাবলগুলো একেকটি দেশ হয়ে ভাসতে থাকে। যেসব দেশে ফেসবুক ব্যবহার হয় সেসব দেশের নাম বাবলের গায়ে লেখা। সেখানেও খুঁজে ফিরি বাংলাদেশ। দেশকে পেয়ে নিজেকে কলম্বাসের চেয়েও বড় মনে হয় তখন! অ্যারোনকে বললাম, ‘অ্যাই দেখুন আমার দেশ।’ তিনিও খুব আগ্রহ নিয়ে দেখলেন।

অফিসের কর্মীরা নিজেদের কাজ নিজেরাই করেন এখানে। কাজের ফাঁকে এখানেও আছে বসার ব্যবস্থা।মিটিং রুম, গেস্ট রুম, ট্রেনিং রুম, সবুজ বাগান ঘুরিয়ে অ্যারোন এনে বসিয়ে দিলেন লাইক হাউসে। তারপর নিজেই ছবি তুলে দিলেন আমার। সন্ধ্যা নেমে এসেছে বাইরে। কিন্তু ফেসবুক অফিসে আলোর ঝলকানি। সেই আলোতে ‘ভালোবাসি বাংলাদেশ’ লেখাটা রেখে এলাম। অ্যারোনকে বলে এলাম, দেখো রাখবেন বাংলাদেশ!
ছবি: লেখক