জোছনা উৎসবে মাতবে শুভসন্ধ্যা সৈকত

জোছনা উৎসব‘এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে, এসো না গল্প করি’— এমন গানের সুরে সুরে জলতরীতে ভেসে উৎসবে মাতবে হাজারও জোছনাপ্রেমী মানুষ। দেশের সর্বদক্ষিণের উপকূলীয় জেলা বরগুনার খরস্রোতা পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় নবগঠিত তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ সৈকত ‘শুভসন্ধ্যা’য় এই চিত্র দেখা যাবে। শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) এই স্নিগ্ধ বেলাভূমিতে চতুর্থবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে জোছনা উৎসব। ইতোমধ্যে সৈকতে বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবারের জোছনা উৎসবে বরগুনা থেকে দুটি দ্বিতল লঞ্চ সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুর দেড়টায় বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে এগুলো ছেড়ে যাবে। বরগুনার খাগদন নদী হয়ে বাইনচটকীর স্নিগ্ধ বনভূমির পাশ দিয়ে কুমীরমারা আর গোড়াপদ্মার নয়নাভিরাম বনবনানীর কোল ঘেঁষে বিকাল পাঁচটার দিকে লঞ্চ পৌঁছাবে শুভসন্ধ্যার চরে।
বিস্তীর্ণ বালুচরে শেষ বিকালের ঘোরাঘুরির পর রাতভর জোছনার গান, রাখাইন নৃত্য, বাউল সংগীত, মোহনীয় বাঁশি, পুঁথি ও কবিতা আবৃত্তির সঙ্গে জলজোছনায় অবগাহন করবে ভ্রমণপিপাসুরা। লটারিতে পুরস্কার জেতার সুযোগও আছে। চাঁদনি রাতে তিন নদীর জলমোহনায় দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকছে ভাড়ায় চালিত ছোট ছোট ট্রলারের সুব্যবস্থা। গভীর রাত পর্যন্ত জোছনাস্নাত হয়ে রাত ৩টায় পুনরায় বরগুনার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়বে। সকাল ৬টা নাগাদ লঞ্চ ভিড়বে বরগুনার ঘাটে।

এবারের জোছনা উৎসবে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ রাজধানী ঢাকা ও দেশ-বিদেশের ২০ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক ভিড় জমাবেন বলে আশা আয়োজক কমিটির। তবে শীতের হিম হাওয়ার কথা মাথায় রেখে উৎসবে ১০ বছরের কমবয়সী শিশুদের নিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের প্রয়োজনীয় মাদুর, বিছানার চাদর, শীতের কাপড়, বিশুদ্ধ পানি, গামছা বা তোয়ালে, টিস্যু পেপার ও হালকা খাবার সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য আয়োজক কমিটি অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া দরকারি সব ওষুধ সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

জলজোছনার উৎসবআয়োজকরা বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি নারী ও পুরুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা করেছে। নারী ও শিশুদের জন্য বিশ্রামাগার থাকছে। র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেবে সৈকতে।
বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি নির্ধারিত হটলাইন নম্বর জানিয়ে দেওয়া হয়েছে (০১৩১৮৬৫৫৬৩৬, ০১৩১৮৬৫৫৬৩৬)। এগুলোতে ফোন করে উৎসবের নিবন্ধনসহ জোছনা উৎসব সংক্রান্ত সব তথ্য জানা যাবে। একইসঙ্গে জোছনা উৎসব সংক্রান্ত তথ্যউপাত্ত দিয়ে খোলা হয়েছে একটি ফেসবুক পেজ। এতে জোছনা উৎসব সংক্রান্ত সব তথ্যসহ বিভিন্ন তথ্যচিত্র শেয়ার করা হয়েছে।

জোছনাপ্রেমীদের এই উৎসবে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এর উদ্যোক্তা বরগুনার তরুণ সাংবাদিক সোহেল হাফিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্থানীয় সমমনা বন্ধুদের নিয়ে উৎসবটি শুরু করেছিলাম আমরা। এখন এটি সর্বস্তরের মানুষের প্রিয় উৎসবে পরিণত হয়েছে।'

বরগুনার জেলা প্রশাসক ও জোছনা উৎসব আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কবীর মাহমুদের মন্তব্য, ‘বরগুনা হলো এমন একটি জেলা যেখান থেকে নৌপথে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ও বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের দূরত্ব মাত্র ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার। এছাড়া বরগুনায় রয়েছে নয়নাভিরাম স্নিগ্ধ বনভূমি আশারচর, লালদিয়ারচর, হরিণঘাটার বন, টেংড়াগিরির বনভূমি ও শুভসন্ধ্যা সৈকতসহ অনেক আকর্ষণীয় বনবনানী ও নদনদীর মোহনা। বরগুনার এসব আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা গেলে পর্যটন শিল্প বিকাশের পাশাপাশি এখানকার অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’