ট্রাভেলগ

৫৬৬০ টাকায় হয়ে গেলো দার্জিলিং ভ্রমণ

ভারতের দার্জিলিং ট্যুর নিয়ে অনলাইনে বেশ কিছু ব্লগ ও রিভিউ দেখেছি অনেকের। এসব দেখে দার্জিলিং যাওয়ার আগ্রহ জন্মায় আমাদের। এরপর চারজন মিলে অল্প খরচে ঘুরে এলাম। অনেক সুন্দর একটি জায়গা। নভেম্বরে দার্জিলিংয়ের সবকিছুই ভালোভাবে দেখা যায়। থাকা-খাওয়াসহ আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৬৬০ টাকা।

ভ্রমণের সময় সঙ্গে পাসপোর্ট ও ভিসার পাঁচটি করে ফটোকপি রাখা জরুরি। বিভিন্ন সময়ে এগুলো কাজে লাগে। শীতের জন্য মোটা কাপড় নিয়ে যেতে হবে। আমরা রাতে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি পেয়েছিলাম।

IMG_20181103_103411দার্জিলিংয়ের স্থানীয় খাবার অসাধারণ লেগেছে। জিনিসপত্রও সস্তা মনে হয়েছে। সেখানকার চা পাতাও দারুণ। একটু পরপরই ময়লা ফেলার ঝুড়ি পাওয়া যাবে।

IMG_20181031_173605সমস্যা হলো, দার্জিলিংয়ে বাংলাদেশিদের সাধারণত হোটেল রুম ভাড়া দিতে চায় না কেউ। কী কারণে এই অনাগ্রহ তা অবশ্য জানতে পারিনি। তবে দুশ্চিন্তার কারণ নেই, একটু সময় নিয়ে ‍খুঁজলে হোটেল পাওয়া যাবে।

IMG_20181101_061502ভারতে আমাদের এন্ট্রি পোর্ট ছিল চেংড়াবান্দা। তাই যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে হানিফ কাউন্টার থেকে নন-এসি বাসের টিকিট কেটেছি। গাবতলী থেকে জনপ্রতি ভাড়া ছিল ৬৫০ টাকা। রাত ৯টার বাসে রওনা হলাম উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে। ভোর ৭টায় পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু অত্যধিক জ্যামের কারণে বেজে গেছে সকাল ৯টা।

IMG_20181101_075400বুড়িমারি সীমান্ত পেরিয়ে অল্প একটু পথ পায়ে হেঁটে বাসে উঠলাম। এবারের গন্তব্য ময়নাগুড়ি। বাসে যেতে সময় লাগলো আধঘণ্টা। জনপ্রতি খরচ হলো ২০ রুপি। সেখান থেকে এবিএসটিসি বাসে চড়ে পৌঁছালাম শিলিগুঁড়ি। জনপ্রতি ভাড়া দিতে হলো ৫৪ রুপি।

IMG_20181103_082433শিলিগুঁড়ি জংশন থেকে জিপে গেলাম দার্জিলিং। সেখানে পৌঁছাতে লাগলো তিন ঘণ্টা। অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এই পথ শেষ হলো। অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করায় জনপ্রতি ভাড়া লাগলো ১৫০ রুপি।

দিনের সৌন্দর্যের সঙ্গে সন্ধ্যার রূপও ছিল দারুণ উপভোগ্য। দার্জিলিংয়ে চূড়া থেকে নিচে তাকালে মনে হবে বুঝি লক্ষ তারার মেলা! মূলত দূর থেকে বিভিন্ন ভবনের রুমের লাইটগুলো এমন লাগছিল।

IMG_20181103_103251সেখানে অনেক ধরনের খাবারের হোটেল আছে। মুসলিমদেরও আছে বেশ কয়েকটি। আমরা ইসলামিয়া নামের হোটেলে খেয়েছি বেশিরভাগ সময়। ৭০ রুপিতে খেয়েছি গরুর মাংস আর ভাত, সঙ্গে ছিল ডাল।

দার্জিলিংয়ে কোনও যানবাহন নেই। সবখানে পায়ে হেঁটেই যেতে হয়। আমাদের আগে দুইজন একেবারে পাহাড়ের চূড়ায় হোটেলে রুম নিয়েছিলেন। উপরে থাকলেও চলাচলে কষ্ট করতে হয়। চারজনের জন্য দেড় হাজার রুপি দিয়ে রুম ভাড়া করলাম। জানালা খুললেই যেন কাঞ্চনজঙ্ঘা হাতে ধরা যাবে!

IMG_20181103_120242পরদিন ভোর ৪টায় ওয়াচ টাওয়ারের সামনে থেকে বেরিয়ে পড়ি। সব স্পট দেখানোর চুক্তিতে ১ হাজার ৬০০ রুপিতে গাড়ি রিজার্ভ করেছিলাম। ফলে নিজেদের ইচ্ছেমতো বেড়াতে পেরেছি। সেখানে ছিলাম দুই রাত।

এরপর সকাল ১১টায় কালিম্পংয়ের উদ্দেশে রওনা হলাম। সেখানেও শেয়ারে জিপে চড়ে যাওয়া যায়। আমরাও তাই করলাম, জনপ্রতি গুনতে হলো ১৫০ রুপি। তিন ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে কালিম্পং পৌঁছাই। সেখানে একরুমে চারজনের জন্য ভাড়া ১ হাজার রুপি।

IMG_20181031_173036আগের রাতেই গাড়ি ঠিক করে ফেললাম, যেন সকালে উঠেই ঘুরতে যেতে পারি। কালিম্পংয়ের ১১টি স্পট ঘুরে দেখার জন্য কার রিজার্ভ করলাম। ভাড়া নিলো ১ হাজার ২০০ রুপি। এখানকার অনেক গাড়িচালক ডেলো ও সায়েন্স সিটি যেতে চায় না। তাই তাদের সঙ্গে আগেই আলোচনা করে নেওয়া ভালো।

IMG_20181103_082035দিলুতে প্যারাগ্লেডিং করা অনেক পর্যটকের স্বপ্ন। কালিম্পংয়ে দুইজন নেপালি মসজিদের কাছে মুসলিম হোটেল পরিচালনা করেন। যদিও খাবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত পাওয়া যায়। ৭০ রুপির প্যাকেজে থাকে ভাত, গরুর মাংস, ডাল।

IMG_20181103_102121এবার আমাদের ফেরার পালা। কালিম্পং থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে বাস ধরতে হয়। কালিম্পং স্টেশন থেকে ভাড়া নিলো ১১১ রুপি। শিলিগুঁড়ি জংশন পৌঁছাতে লাগলো তিন ঘণ্টা। সেখান থেকে চেংড়াবান্দা বাইপাস আসার ভাড়া গেলো ৬৯ রুপি। সীমান্ত পার হওয়ার সময় ঘড়ির কাঁটায় দেখি সন্ধ্যা ৬টা। এরপর নন-এসি বাসে বুড়িমারি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলাম।
IMG_20181103_124024ছবি: লেখক