কোন জেলার নামকরণ কীভাবে

জয়পাল রাজার নামে জয়পুরহাট

জয়পুরহাট শহর (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত।

দেশের আট বিভাগে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ) ৬৪ জেলা। পণ্য, খাবার, পর্যটন আকর্ষণ কিংবা সাংস্কৃতিক বা লোকজ ঐতিহ্যে বাংলাদেশের জেলাগুলো স্বতন্ত্রমণ্ডিত। প্রতিটি জেলার নামকরণের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। এসব ঘটনা ভ্রমণপিপাসু উৎসুক মনকে আকর্ষণ করে। তাই বাংলা ট্রিবিউন জার্নিতে ধারাবাহিকভাবে জানানো হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে রোয়াইর দীঘি (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)জয়পুরহাট জেলা
রাজশাহী বিভাগের অধীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ছোট্ট জেলা জয়পুরহাট। এর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক নান্দনিক ও ঐতিহাসিক স্থান। জেলার দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ফসলের মাঠ যেকোনও ভ্রমণপিপাসুকে মুগ্ধ করবে। ফলে এখানে পর্যটন শিল্প বিকাশে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। লতিরাজ কচু ও সোনালি মুরগি জয়পুরহাটকে অন্নপূর্ণা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

ভারতবর্ষের ইতিহাস থেকে জানা যায়, গৌড়ের পাল ও সেন রাজার রাজত্ব ছিল জয়পুরহাটে। ধর্মপালের পর তার দ্বিতীয় ভ্রাতৃদ্বয় দেবপাল রাজা হয়। দেবপালের পর তার পালরাজ সাম্রাজ্যের রাজা হয় জয়পাল। এই জয়পাল রাজার নামেই জয়পুরহাট জেলার নামকরণ হয় ১৮০০ সালে। এর আগে স্থানীয় নাম ছিল বাঘাবাড়ি, পরবর্তী সময়ে কাগজপত্রে গোপেন্দ্রগঞ্জ লেখা হতে থাকে।

কাদিয়া বাড়ি দুর্গ (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)১৮৫৭ থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তা মোকাবিলার জন্য ১৮৮৪ সালে জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতা পর্যন্ত ২৯৬ মাইল রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়। মালামাল রফতানির জন্য ৪ থেকে ৭ মাইল পর পর ছিল স্টেশন। জয়পুর গভর্নমেন্ট ক্রাউন স্টেটের নামানুসারে পরবর্তী সময়ে রেলস্টেশনটির নাম রাখা হয় জয়পুরহাট। রেলস্টেশন ও পোস্ট অফিসের নাম রাখা হয় জয়পুরহাট। এরপর থেকে এলাকাটি ‘জয়পুরহাট’ নামে পরিচিত হতে থাকে। রাজস্থানের জয়পুরের সঙ্গে পার্থক্য বোঝানোর জন্যই মূলত জয়পুরের সঙ্গে হাট যুক্ত করে ‘জয়পুরহাট’ স্টেশন নাম রাখা হয়। স্টেশনের পাশেই বসতো মূল বাজার। এই বাজারকে বলা হতো যমুনার হাট। সেজন্য হাট শব্দটি যুক্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জয়পুরহাট।

জয়পুরহাটে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হলো বারশিবালয় মন্দির, পাগলা দেওয়ান বদ্ধভূমি, ভীমের পান্টি, পাথরঘাটা নিমাই পীরের মাজার, লকমা জমিদার বাড়ি, গোপীনাথপুর মন্দির, হিন্দা কসবা জামে মসজিদ। জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে শিশু উদ্যান, বাস্তবপুরী, নান্দাইল দিঘি, আছরাঙা দিঘি, দুয়ানী ঘাট।