২০১৮ সালের সেরা ১০ সমুদ্র সৈকত, শীর্ষে গ্রিস

সোনালি, সাদা কিংবা গোলাপি বালি, কাঁচের মতো স্বচ্ছ জল, চারপাশে মনোরম পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নিরালা পরিবেশ— বিশ্বের সেরা সাগরতীরগুলো এমন প্রাচুর্যময়। সৈকতের অতুলনীয় সৌন্দর্য, জনশূন্য আর বালি ও জলের গুণমান বিচার করে ২০১৮ সালের তেমন সেরা ৫০টি সৈকতের একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। ১২০০’রও বেশি পর্যটন বিষয়ক সাংবাদিক, সম্পাদক, ব্লগার ও সংস্থার মতামত নিয়ে এই তালিকা তৈরি করেছে কানাডার ভ্রমণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট নেটওয়ার্ক।

আইসল্যান্ডের কৃষ্ণবালি, থাইল্যান্ডের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক রূপ, বাহামাসের গোলাপি বালি— কোনটা ছেড়ে কোনটাতে যাবেন! এমন দ্বিধায় পড়া স্বাভাবিক। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে ২০১৮ সালের সেরা সৈকতের তালিকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১০ সাগরপাড়ের কথা জেনে নিন।

Navagio Beachনাভাগিও বিচ
জাকিনতস দ্বীপের নাভাগিও বিচে আছ জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। এজন্যই এটি বিখ্যাত। বেলাভূমিতে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে এই সাগরপাড়ে ভিড় করে পর্যটকরা। জনশ্রুতি রয়েছে, এমভি পানাগিওতিস নামের জাহাজটি নারী পাচার ও সিগারেট-মদ চোরাচালানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। ভূমধ্যসাগরই নাভাগিও বিচে যাওয়ার একমাত্র পথ। বছরে ২৭৫ দিনই সেখানে রোদ্দুর ডানা মেলে। সাংবাদিক ইরিন মিলার বলেন, ‘এই ছোট্ট সৈকত স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। স্বচ্ছ জলের প্রাচুর্যের সঙ্গে বালিতে জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় সেখানে। আক্ষরিক অর্থে জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসার মতো সাগরপাড় এটি।’

Whitehaven Beachহোয়াইট হ্যাভেন বিচ
চার মাইল দীর্ঘ জনহীন এই সৈকতের শুভ্র বালি আর স্বচ্ছ জলরাশি এককথায় চোখজুড়ানো। এটি আছে তালিকার দুই নম্বরে। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন শহর থেকে ৯০০ মাইল উত্তরপূর্বকোণে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের উপকূলে হুইটসানডে দ্বীপে গেলে মিলবে হোয়াইট হ্যাভেন বিচ। গড়ে বছরে ২৯২ দিন সূর্যের দেখা মেলে সেখানে। সাগর পাড়ি দিয়ে কিংবা আকাশযানে চড়ে এই বেলাভূমিতে যাওয়া সম্ভব। আমেরিকার রিডারস ডাইজেস্ট ম্যাগাজিনের গ্রেগ বার্টন মনে করেন, এটি চিত্রকর্মের মতো দেখতে মরুদ্যান। পরিবারের সঙ্গে সৈকত উপযোগী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের জন্য হোয়াইট হ্যাভেন বিচ হতে পারে আদর্শ। রাতে উপভোগ করতে পারেন বারবিকিউ।

El Nido or Hidden Beachএল নিদো
সৈকতটিকে ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে ‘হিডেন বিচ’। এর বাংলা করলে দাঁড়ায় লুকিয়ে থাকা সাগরপাড়। সৌন্দর্য ও গুণমানের দিক দিয়ে ফিলিপাইনের পালাওয়ান দ্বীপের এই সৈকত রয়েছে তালিকার তিন নম্বরে। সারি সারি পাম গাছের ছায়া আর সুউচ্চ পাহাড়ের সম্মিলনে এ এক দারুণ প্রাকৃতিক নিসর্গ। প্রতি বছর ২৩১ দিন রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া থাকে সেখানে। ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ শচীন আগারওয়ালের মতে, ‘বুনো, গাছগাছালিতে মোড়া রঙ-বেরঙের পাথর আর স্বচ্ছ জলের এই সৈকতে গেলে মনে হবে যেন কোনও চলচ্চিত্রের দৃশ্যে ঢুকে পড়েছেন!’

Praia do Sanchoপ্রাইয়া দ্যু সেন্তু
ফারনান্দো ডি নোরোনহা নামের ছোট্ট দ্বীপ ব্রাজিলের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে একঘণ্টার দূরত্বে। সেখানে রয়েছে প্রাইয়া দ্যু সেন্তু। এটি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বের সেরা ৫০ সৈকতের তালিকার চার নম্বরে। নিরিবিলি এই সাগরপাড়ে যাওয়ার পথ অনেক দুর্গম। কেবল পাহাড় টপকে সেখানে যেতে পারেন ভ্রমণপিপাসুরা। কিন্তু একবার যেতে পারলে পথের ক্লান্তি নিমিষে ভুলিয়ে দেবে সোনালি বালি আর নীল জল। বছরের ২৬৮ দিন রোদের আলো থাকে প্রাইয়া দ্যু সেন্তুতে। মার্কিন ব্যবসা সংক্রান্ত ম্যাগাজিন ফোর্বসের অ্যান আবেল বলেন, ব্রাজিল ও আফ্রিকার মধ্যে ফারনান্দো ডি নোরোনহা একটি দ্বীপমালা। সেখানে পর্যটনের সুবিধা সীমিত আর প্রকৃতি আদিমযুগের। চোখধাঁধানো বালিই শুধু নয়,

Tulum Beachতুলুম বিচ
তালিকার পাঁচ নম্বরে আছে মেক্সিকোর তুলুম বিচ। সেখানে গড়ে বছরে ১৭৫ দিন সূর্যের দেখা মেলে। ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ লিসা রাইটের মতে, গুঁড়ো সাদা নরম বালি ও চোখধাঁধানো পরিষ্কার নীল জলের এই সাগরপাড় বেশ শান্ত। এজন্যই পর্যটকদের জন্য বিশ্বের সেরা সৈকতের তালিকায় এটি অন্যতম।

Grace Bayগ্রেস বে
২০১৭ সালে বিশ্বের সেরা সমুদ্র সৈকত নির্বাচিত হয়েছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক এলাকা টার্ক অ্যান্ড সায়কোসের ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের গ্রেস বে। এ বছর এটি নেমে গেছে ছয় নম্বরে। আটলান্টিক মহাসাগরের প্রোভিডেনসিয়ালেস দ্বীপের এই সৈকতে বছরের ৩১৯ দিনই থাকে সূর্যের পরশ। ট্রাভেল ব্লগার স্টুয়ার্ট ব্রাউন লিখেছেন, ‘খাঁটি সাদা বালি থেকে শুরু করে প্রাচুর্যময় নীল জল, সব মিলিয়ে এটি পুরোপুরি অনবদ্য। ছবির মতো দেখতে এর চেয়ে অন্য কোনও জায়গা কল্পনায় আসবে না।’

Seven Mile Beachসেভেন মাইল বিচ
ক্যারিবীয় সাগরে আরেক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক এলাকা কেমেন দ্বীপের সেভেন মাইল বিচ আছে তালিকার সাত নম্বরে। এই জায়গা বছরের ২৪২ দিন রোদের পরশ পায়। ব্লগার নিকোলেট অরলেম্যান্স বলেন, পানির নিচে ডাইভিংয়ের জন্য জুতসই সৈকত এটি। পাম গাছের সারি বালিতে সীমানা সাজিয়ে রেখেছে। সব মিলিয়ে সেভেন মাইল বিচ ছবির মতো। এর সাদা বালিতে পায়চারি করলে সব দুর্ভাবনা মিলিয়ে যাবে অনায়াসে!’

Anse Source d’Argentআঁস সোর্স দারজ্যঁ
পূর্ব আফ্রিকার সিসিলির লা ডিগ দ্বীপের আঁস সোর্স দারজ্যঁ সৈকত রয়েছে তালিকার আট নম্বরে। সেখানে রয়েছে পাহাড়ের অনবদ্য রূপ। সাগরপাড়টিতে বছরের ৩২৫ দিন সূর্য আলো ছড়ায়। নৌকায় চড়ে যাওয়া যায় এই কোলাহলমুক্ত সৈকতে। লেখক আলেক্সান্ডার লোবরানো বলেন, ‘২৫ বছর আগে প্রথম আঁস সোর্স দারজ্যঁর বেলাভূমিতে গিয়েছিলাম। নারিকেল গাছের ছায়ায় সাদা বালিতে বসে কাটানো সময় আজও স্বপ্নে দেখি।’

Maya Beachমায়া বিচ
থাইল্যান্ডের কোহ ফি ফি লে দ্বীপের মায়া বিচ বেশ বিখ্যাত। নয় নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে এটি। হলিউড অভিনেতা লিউনার্দো ডিক্যাপ্রিওর দ্য বিচ ছবিতে ব্যবহার হয়েছে এই সৈকত। যদিও সম্প্রতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে মায়া বিচ পর্যটকদের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে বছরের ৩৫২ দিন সূর্যের আলো ডানা মেলে। এপ্রিল কোল লিখেছেন, সাগরের মাঝখানে বিখ্যাত থাই সৈকতটির চারপাশে ১০০ মিটার উঁচু পর্বত দাঁড়িয়ে আছে। এর নিদারুণ সৌন্দর্যে ডুবে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব!’

Varadero Beachবারাদেরো বিচ

কিউবার বারাদেরো বিচের নাম নিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বিশ্বের সেরা সৈকতের ১০ নম্বর জায়গা। এই সাগরপাড়কে প্রায়ই বিশ্বের সেরা দ্বীপগুলোর অন্যতম বর্ণনা করা হয়। চমৎকার সাদা বালি ও বুদবুদ করা নীল জলের প্রাচুর্য আছে সেখানে। ব্লগার শিয়া পাওয়েলের মত, কোনও সৈকতে স্বপ্নের মতো অবকাশযাপনের জন্য সবকিছুই আছে বারাদেরোতে। কিউবান সংস্কৃতি, নিটোল প্রকৃতি ও আরামদায়ক পরিবেশ; কী নেই সেখানে! আবারও এই সৈকতে যেতে মুখিয়ে আছি।’

সূত্র: ডেইলি মেইল