‘আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের ব্র্যান্ডিং জরুরি’

কাজী আসমা আজমেরীশুরুটা থাইল্যান্ডে। একাই ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেই শুরু। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে একে একে বিদেশ ভ্রমণে সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন কাজী আসমা আজমেরী। সবশেষ মধ্য এশিয়ার তুর্কমেনিস্তানে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে ১০০ দেশে যাওয়ার লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছে তার।

সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলা ট্রিবিউন ফেসবুক লাইভে এসে নিজের অনুভূতি শেয়ার করেন কাজী আসমা আজমেরী। তিনি বলেন, ‘এটা আমার ৯ বছরের কষ্টের ফল। একটা মেয়ে হয়ে এই অর্জনে আমি উচ্ছ্বসিত।’

তুর্কমেনিস্তানে ইউরোপের অনেক দেশের নাগরিক ভিসা পায় না। সেখানে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসা পেয়ে গর্বিত কাজী আসমা।

তবে ১০০ দেশ ঘোরার মাইলফলক স্পর্শ করার পূর্বপরিকল্পনা ছিল না কাজী আসমার। একদিন তার এক বন্ধুর অভিভাবক মন্তব্য করেন, ছেলেদের মতো মেয়েরা বেশি দেশ ঘুরতে পারবে না। তখন কী বলেছিলেন কাজী আসমা? ‘তাকে বলেছিলাম আমি ৫০টা দেশে ঘুরবো। এরপর নিজের গহনা বিক্রি করে সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখি। কারণ ব্যাংক স্টেটমেন্টে পর্যাপ্ত টাকা দেখাতে না পারলে অনেক দেশের ভিসা মেলে না।’

ব্রাজিলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের ৫০ দেশের লক্ষ্য পূরণ করে ফেলেন কাজী আসমা। তখন বিশ্বকাপ ফুটবল চলছিল সেখানে। বেলজিয়াম বনাম আলজেরিয়ার খেলা চলাকালীন স্টেডিয়ামে বসে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন তিনি।

কাজী আসমা ফুটবেলপ্রেমী মানুষ। এজন্য রাশিয়া বিশ্বকাপে ১০০ দেশের মাইলফলকে পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে তুর্কমেনিস্তান সরকারের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানেই বিদেশ ভ্রমণে সেঞ্চুরি করেন তিনি।

এত দেশ ঘুরলেও ফ্রান্স দূতাবাস থেকে এখনও ভিসা পাননি কাজী আসমা। এজন্য তিনি দায়ী করেন অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাকে। এছাড়া অনেকে ভিসা পেয়ে গিয়ে আর ফেরে না। এসব কারণে ইউরোপে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে একটা নেতিবাচক মনোভাব আছে বলে মনে হয় তার। তাই অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়াকে নিরুৎসাহিত করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বেড়াতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীনও হয়েছেন কাজী আসমা। ঘটনা দুটি ভিয়েতনাম ও সাইপ্রাসের। এর মধ্যে সাইপ্রাসের ঘটনা শেয়ার করলেন তিনি, ‘সাইপ্রাসে যাওয়ার পর একজন ভিসা অফিসার মনে করলেন, আমি আর দেশে ফিরবো না! অন্যজন মনে করছিলেন, আমি পর্যটক হিসেবেই গিয়েছি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বৈতমত চলছিল। এ কারণে অনেকক্ষণ আটকে থাকতে হয়েছে।’

বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন কাজী আসমা। তিনি জানান, আমেরিকানরা ভূটানে গেলে ২৫০ ডলার দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশিদের ভূটানে যেতে কোনও ভিসা দরকার হয় না।

বাংলাদেশেও বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন কাজী আসমা। মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি, বান্দরবান, নীলগিরি, সাজেক, সিলেটের চা বাগান, কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিনের কথা আলাদাভাবে বললেন। তার কথায়, ‘সিলেটের চা বাগান অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা। আমার মনে হয় এটা বিদেশিদের কাছে একটা প্যারাডাইস হয়ে যেতে পারে।’

১০০ দেশ বেড়ানোর সময় বাংলাদেশের পর্যটন খাত নিয়ে বিদেশিদের মধ্যে আগ্রহ কেমন দেখেছেন? কাজী আসমার উত্তর, ‘আমার কোরিয়ান ও জাপানি বন্ধুদের মধ্যে বাংলাদেশে বেড়ানোর ব্যাপারে দারুণ আগ্রহ আছে। অনেকে আমাকে বলেছেন, বাংলাদেশে বেড়িয়ে ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের আতিথেয়তা দেখে অনেকেই মুগ্ধ।’

বাংলাদেশের পর্যটন খাতের প্রচারণা সেভাবে হচ্ছে না বলে কাজী আসমার মন্তব্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে ১৪৩ বর্গকিলোমিটারের সৈকত (কক্সবাজার), সুন্দরবনের মতো অনেক দারুণ পর্যটন স্পট আছে। তাই আন্তর্জাতিকভাবে এগুলোর ব্র্যান্ডিং করা জরুরি।’

বাংলাদেশের পর্যটনে প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে কাজী আসমা বলেন, ‘আমরা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলি। পর্যটন স্পটগুলোর বেলায় যদি আমরা এ বিষয়ে সচেতন হই তাহলে দেশটা আরও সুন্দর হতে পারে। দেশটা তো আমাদেরই, তাই আমার দেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মূল্যবোধ থাকতে হবে সবার মধ্যে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

ভিসা বিষয়ক তথ্য দিয়ে বাংলাদেশিদের সহযোগিতার জন্য লোনলি প্লানেট নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালান কাজী আসমা। বাংলাদেশের আরও অনেক মেয়ে দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে আলোচিত পরিব্রাজক হবে, এই প্রত্যাশা তার।