প্রিয়াঙ্কা-নিক যেখানে বিয়ে করেছেন সেই হোটেলের ভেতর-বাহির

উমেদ ভবন প্যালেসক'দিন আগে বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও মার্কিন গায়ক নিক জোনাসের বিয়ের খবর সারা দুনিয়ায় সাড়া ফেলেছে। রাজস্থানের রাজকীয় উমেদ ভবন প্যালেসে সম্পন্ন হয় তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। তাদের জন্য এখানকার বিশাল হল সাজানো হয় গাঁদা ফুলে।

ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বলিউড ও হলিউড তারকারা প্রায়ই ওঠেন উমেদ ভবন প্যালেসে। ২০০৭ সালে ব্রিটিশ অভিনেত্রী এলিজাবেথ হার্লি এখানেই বিয়ে করেন ভারতীয় শিল্পপতি অরুণ নায়ারকে। তখন ভবনের উন্মুক্ত স্থানে টানানো হয়েছিল সাদা মার্বেলের শামিয়ানা। যদিও পরে তাদের সংসার টেকেনি। সাধারণ মানুষের জন্যও হোটেলটিতে থাকার সুযোগ আছে।

VIP treatmentবিস্তৃত এই ভবন গড়ে ওঠে ১৯২৮ থেকে ১৯৪৩ সালের মধ্যে। যোধপুরের রাজপরিবারের বাসস্থান ও বিলাসবহুল পাঁচতারকা হোটেল উভয়ই আছে এতে। এই হোটেলে চোখধাঁধানো শৈল্পিক রুম ও স্যুটের সংখ্যা ৬৪।

The spaহোটেলের বাইরে রয়েছে ২৬ একর নয়নাভিরাম সতেজ বাগান, চমৎকার ডাইনিং সমৃদ্ধ রেস্তোরাঁ ও উচ্চমানের একটি স্পা। রেস্তোরাঁয় রাজপরিবারের রান্নাঘরে বানানো খাবারই পরিবেশন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী ম্যাসাজ থেরাপি থেকে যোগব্যায়ামের ক্লাস আছে স্পাতে। 

The palaceউমেদ ভবন প্যালেসে চেক-ইন করার পর খানসামাদের সেবার পাশাপাশি মিলবে শ্যাম্পেন ও চালকসহ রোল-রয়েস ব্র্যান্ডের দামি চকচকে গাড়ি। যোধপুরের মহারাজার সংগ্রহশালার অংশ এটি। এতে চড়ে যোধপুর বেড়ানো যায়।

447-square-foot bathroomহোটেলটির ভাড়া সারা বছরই বদলায়। তবে বড় আকারের বিছানা আছে এমন রুমের ভাড়া কমপক্ষে ২৮০ পাউন্ড (৩০ হাজার টাকা)। গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটের প্রতি রাতের ভাড়া ১২ হাজার ২৭০ পাউন্ড (১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা)। এই স্যুটের অন্যতম সুবিধা ৪৪৭ বর্গফুটের বাথরুম। এতে আছে একটি গরম জলের টাব, উষ্ণ কক্ষ ও প্রয়াত পোলিশ শিল্পী স্তেফান নর্বলিনের ডিজাইন করা বাথ। এরমধ্যে বাথটি হলো একটুকরো গোলাপি ইতালিয়ান মার্বেল। অন্যান্য রুমের বাথরুমগুলোতে রোদের আলো প্রবেশের সুবিধার্থে আছে বড়সড় জানালা।

105ft golden cupolaব্রিটিশ স্থপতি হেনরি ভন লানচেস্টার ডিজাইন করেছেন উমেদ ভবন প্যালেস। ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকে ইউরোপ-আমেরিকায় যেমন শিল্পসজ্জা জনপ্রিয় ছিল, এই হোটেলে আছে তেমন উপকরণ। একইসঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় কারুশিল্প। হোটেলটির ভেতরে সমদূরত্বে স্থাপিত স্তম্ভগুলো নিপুণভাবে খোদাই করা। এখানে আরও আছে আড়ম্বরপূর্ণ ভাস্কর্য ও ১০৫ ফুটের সোনালি গম্বুজ।

The staffএই হোটেলের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার ভিনসেন্ট রামোস জানিয়েছেন, সব অতিথিকে সর্বোচ্চ ভিআইপি মর্যাদার আতিথেয়তা দেওয়া হয়। এখানেই অন্য হোটেলের চেয়ে এটি স্বতন্ত্র। প্রত্যেক গ্রাহক যেন রাজবংশের মতো সেবা পান সেই লক্ষ্য থাকে খানসামা থেকে শুরু করে হাউস কিপারদের। তাদের অনেকে যোধপুরের রাজা-রানির কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

The hotel gives guests a glass of bubblesসব অতিথিকে উমেদ ভবন প্যালেসে পা রাখার পরপরই ভেঁপু ও ঢাক বাজিয়ে নেচে ঐতিহ্যবাহী রাজকীয় অভ্যর্থনা দেওয়া হয়। মাথার ওপরে থাকে মখমলের শামিয়ানা। গলায় পুষ্পমাল্য পরিয়ে পরিবেশন করা হয় শ্যাম্পেন। সব মিলিয়ে মনে হবে যেন রাজা তার সাম্রাজ্যে ফিরেছে!

fine diningঅবিরাম শ্যাম্পেন পরিবেশনের কারণেই মূলত হোটেলটিতে থাকার খরচ বেড়ে যায়। রোজ সকালে নাশতায় ও বিকাল ৫টায় অতিথিদের শ্যাম্পেন দেওয়া হয়। বিকালে প্যালেসের স্থাপত্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহীদের বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়।

বেশিরভাগ অতিথির দেখাশোনার জন্য নিয়োজিত থাকে একজন করে খানসামা। ফলে রাত যতই হোক এক কাপ কফি থেকে শুরু করে সকালের নাশতা, বিকালে পুলসহ খেয়ালখুশি অনুযায়ী যখন যেটা ইচ্ছে চাওয়া যায়।

A view of the hotel swimming poolসুইমিংপুল থেকে চোখ মেললে কাছের মেহরানগড় দুর্গ দেখা যায় অনায়াসে। পুলে গ্রাহকদের সৌজন্য হিসেবে দেওয়া হয় একটি বড় ঝুড়ি। এতে থাকে বিভিন্ন উপকরণ। যেমন মিষ্টি খাবার, বাদাম, বিস্কুট, কোমল পানীয় ইত্যাদি। শীতল তোয়ালে আর আইসক্রিম নিয়ে আশপাশেই থাকে কর্মীরা। কেউ এসব সেবা না নিতে চাইলে রোদ পোহানোর বিছানার পাশের টেবিলের ওপর সংকেত দিয়ে রাখতে পারে।

bathrooms inside a suiteদিনের শেষে খানসামার পরামর্শ থাকে কোন ধরনের স্নান জুতসই হবে। রানি ও রাজকুমারীদের মতো দুধ দিয়ে গোসলের সুবিধাও রয়েছে। ভারতীয় রাজবংশের জন্য সুগন্ধি বানান এমন একজনের তৈরি করা বিভিন্ন তেল মিলবে হোটেলে।

Designed by British architect Henry Vaughan Lanchesterচাইলে পাশের গ্রামে চড়ুইভাতিও করা যায়। খানসামাকে বললে সেখানে হোটেল থেকে নেওয়া খাবার সাজিয়ে দেবে টেবিলে। উমেদ ভবন প্যালেসের খাবার আতিথেয়তার একটি বড় অংশ। খাবারের কারণে কোনও অতিথির যেন অস্বস্তি না লাগে সেদিকে সজাগ থাকেন কর্মীরা।

সূত্র: মেইল অনলাইন ট্রাভেল