ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত।
দেশের আট বিভাগে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ) ৬৪ জেলা। পণ্য, খাবার, পর্যটন আকর্ষণ কিংবা সাংস্কৃতিক বা লোকজ ঐতিহ্যে বাংলাদেশের জেলাগুলো স্বতন্ত্রমণ্ডিত। প্রতিটি জেলার নামকরণের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। প্রতিটি স্থানের নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু জনশ্রুতি রয়েছে। এসব ঘটনা ভ্রমণপিপাসু উৎসুক মনকে আকর্ষণ করে। তাই বাংলা ট্রিবিউন জার্নিতে ধারাবাহিকভাবে জানানো হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেরপুরকে ৬১তম জেলা ঘোষণা করেন। কিন্তু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তা স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালে শেরপুরকে মহকুমা ও ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত করা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধ হতে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত শেরপুরবাসীর রয়েছে দীর্ঘ ১০০ বছরের সংগ্রামের ইতিহাস।
শেরপুর পৌরসভার দক্ষিণ সীমান্তে মৃগী নদী হতে জামালপুর ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৮-৯ মাইল প্রশস্ত ব্রহ্মপুত্র নদের নাম ছিল লৌহিত্য সাগর। নদের দুই পাড়ের নিকটবর্তী লোকদের প্রায়ই নৌকায় যাতায়াত করতে হতো। তারা খেয়াঘাটের ইজারাদারের সঙ্গে যাতায়াতের মাশুল হিসেবে বার্ষিক চুক্তি অনুযায়ী দশ কাহন কড়ি প্রদান করতো। সেই হিসেবে এই অঞ্চলের নাম হয় দশকাহনিয়া। তখন কড়ির মাধ্যমে বেচাকেনা বা আর্থিক লেনদেন করা হতো।
বাংলার নবাবি আমলে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী দশ কাহনিয়া অঞ্চল দখল করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। এই শের আলী গাজীর নামে দশ কাহনিয়ার নাম হয় ‘শেরপুর’। বর্তমান গাজীর খামার ইউনিয়নের গিদ্দা পাড়ায় ফকির বাড়িতে শের আলী গাজীর মাজার ও নকলা উপজেলার রুনী গাঁয়ে গাজীর দরগাহ অবস্থিত।
শেরপুরের ঐতিহ্যগুলো হলো ঘাগড়া খান বাড়ি মসজিদ, মাই সাহেবা মসজিদ, গড়জরিপা বারদুয়ারী মসজিদ, পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি, রংমহল, গোপীনাথ ও অন্নপূর্ণা মন্দির, লোকনাথ মন্দির ও রঘুনাথ জিওর মন্দির, জিকে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, বারোমারি গীর্জা ও মরিয়ম নগর গির্জা। দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে গজনী অবকাশ কেন্দ্র, মধুটিলা, রাজার পাহাড় ও বাবেলাকোনা, নয়াবাড়ির টিলা, পানিহাটা-তারানি পাহাড়, কলাবাগান, সুতানাল দীঘি।