ময়মনসিংহের পুরনো ব্রহ্মপুত্র পাড়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন জাদুঘর সংলগ্ন পার্কের ভেতর জয়নুল উদ্যান গড়ে তুলেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। ব্যস্ত নগরবাসীসহ ভ্রমণপিপাসুদের নির্মল আনন্দ দিতে এই জায়গাকে নতুনরূপে সাজানো হয়েছে বলে জানান মসিকের প্রশাসক ইকরামুল টিটু।
মূল পার্কের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে জায়গাকে ‘জয়নুল উদ্যান’ নামে সংরক্ষিত করেছে সিটি করপোরেশন। উদ্যানে ব্রহ্মপুত্রের বুকে আবহমান বাংলার ছবির পাশাপাশি শিশু-কিশোরসহ নানান বয়সী মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, মিনি চিড়িয়াখানা, দোলনা, ট্রেন, ম্যাজিক নৌকাসহ বিভিন্ন রাইড। উদ্যানের বাইরে নাগরদোলা, চরকি, ঘোড়ার গাড়ি টমটমে ঘুরে বেড়ানো যায়।
মিনি চিড়িয়াখানায় আছে ভালুক, বানর, সজারু, খরগোশ, ময়ূর, উটপাখি, ধনেশ, কুমিরছানা, হরিণ, অজগর সাপ, ঘুঘু, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি। মিনি চিড়িয়াখানার টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। রাইডগুলোতে চড়তে হলে ৩০ থেকে ৫০ টাকার টিকিট কাটতে হয়।
ভেতরে-বাইরে রয়েছে অসংখ্য চটপটি, ফুসকা ও চা-কফির দোকান। উদ্যানের ভেতরে শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে দোলনায় চড়াসহ বিভিন্ন বিনোদনের সুযোগ। শিশুদের খেলনাসহ নানান পণ্য সামগ্রীর পসরাও সাজিয়ে বসেছে অনেক হকার।
ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ব্রহ্মপুত্র পাড়ের এই পার্ক ছাড়া নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের কোনও বিকল্প জায়গা ছিল না। জয়নুল উদ্যানসহ পার্কটিকে নতুনভাবে সাজিয়ে সিটি করপোরেশন তাদের স্বস্তি দিয়েছে।
একসময় কাচিঝুলি সাহেব কোয়ার্টার সংলগ্ন এই জায়গার নাম ছিল উমেদ আলী পার্ক। ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের নৈসর্গিক পরিবেশের এই পার্কের পাশেই ছিল ময়মনসিংহ কালেক্টরটে কর্মরত ইংরেজ সাহেবদের বাসভবনগুলো। সেই থেকে সাহেব কোয়ার্টার হিসেবে পরিচিতি পায় এলাকাটি। ময়মনসিংহ নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বরাবর পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার পেরিয়ে সড়কটি চলে গেছে সার্কিট হাউস মাঠ হয়ে কাচিঝুলি মোড়ে। এর মধ্যে কাচারি ফেরিঘাট থেকে কাচিঝুলির শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন জাদুঘর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র পাড়ের প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গাই উমেদ আলী পার্ক হিসেবে বিবেচিত।
শহরের চরপাড়া এলাকা থেকে বেড়াতে আসা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা হাদিকুল আলম জায়গাটির নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তার দৃষ্টিতে, পালতোলা নৌকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভেসে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা। শিল্পাচার্যের শিল্পকর্ম দেখে মুগ্ধ এই কর্মকর্তা মনে করেন, তরুণ ও নতুন প্রজন্মের জন্য এই জাদুঘর গুরুত্বপূর্ণ।