বাংলাদেশি নারীদের ভ্রমণ সহজ করতে আন্তর্জাতিক খেতাবের সদ্ব্যবহার করবো: প্রিয়তা

প্রিয়তা ইফতেখার (ছবি: নুরুন্নবী চৌধুরী)‘ফ্ল্যাগ গার্ল’ পরিচয়টা তুলে ধরলেই প্রিয়তা ইফতেখারকে চেনা যায় সহজে। তার আরও কয়েকটি বিশেষ পরিচয় আছে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকতার অগ্রদূত নূরজাহান বেগমের নাতনি। আর তার নানা হলেন কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খান (দাদাভাই)।

সবশেষ প্রিয়তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মিস কালচার ওয়ার্ল্ডওয়াইড পরিচয়টি। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় মুকুট জেতেন তিনি। বুধবার (১৬ জানুয়ারি) বিকালে বাংলা ট্রিবিউন ফেসবুক লাইভে এসে জানালেন, ফাইনালের দিন নকশীকাঁথার একটি গাউন পরে মঞ্চে উঠেছিলেন। এর আগে মিস ট্যুরিজম ওয়ার্ল্ড, মিস ল্যান্ডস্কেপস ইন্টারন্যাশনাল ও মিস মাল্টিন্যাশনাল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।

শ্রীলঙ্কায় প্রথম বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন প্রিয়তা ইফতেখার। ইতোমধ্যে বিশ্বের ২০০’রও বেশি শহরে বেড়ানো হয়েছে তার। তবে শুরুর দিকে পারিবারিকভাবে অত সমর্থন পাননি। কারণ তিনিই পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য। ছোটরা বেশি আদর পায়। চিন্তাও বেশি থাকে তাকে ঘিরে। তার কথায়, ‘ছোটবেলা থেকে একটু চঞ্চল ছিলাম। কোনও কিছুতে না বললে আরও বেশি করতাম! একটা পর্যায়ে তারা বুঝতে পারেন, এই মেয়েকে বলেও লাভ নেই। তবে পরে মা ও নানি অনেক সমর্থন দিয়েছেন আমাকে। নানুই আমার রোল মডেল।’

দেশের মিশ্র সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা মানুষ প্রিয়তা। দাদা-দাদির বাড়ি মাদারীপুর। নিজেকে মাদারীপুরের মেয়ে হিসেবেই ভাবেন তিনি। তার নানা রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। মা ছোটবেলা থেকে পুরান ঢাকায় ছিলেন। ‘পুরান ঢাকায় আমাদের আরেকটা বাড়ি। ছুটি পেলেই আমরা নারিন্দায় চলে যেতাম’— বেশ আনন্দ নিয়েই বললেন প্রিয়তা।

২০০৮ সালে ‘দ্য ফ্ল্যাগ গার্ল’ নামের একটি নেটওয়ার্ক গড়েন প্রিয়তা। এর মাধ্যমে ভ্রমণ বিষয়ে নারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের ভ্রমণপিপাসুরা এই নেটওয়ার্কের সদস্য। বাংলাদেশের পর্যটন খাত নিয়ে বিদেশিদের মধ্যে আগ্রহ কেমন? তার উত্তর, ‘অনেক আগ্রহ দেখেছি। দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কথা শুনেছে অনেক বিদেশি। বাংলাদেশের মানুষ অতিথিপরায়ন, সেটাও জানে তারা। রোহিঙ্গাদের জন্য দুয়ার খুলে দিয়ে আমরা অনেক পরিচিতি পেয়েছি বহির্বিশ্বে। ক্রিকেটের জন্যও অনেক দেশ আমাদের চেনে।’

প্রিয়তা ইফতেখার (ছবি: নুরুন্নবী চৌধুরী)জিম্বাবুয়ের তথ্য প্রতিমন্ত্রী এনার্জি মুতোদির সঙ্গে দুই দেশের পর্যটন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন প্রিয়তা। এছাড়া জিম্বাবুয়ের পর্যটন প্রধান জি কোটির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তার, ‘তিনি জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার। অনেকবার বাংলাদেশে আসা হয়েছে তার। চট্টগ্রাম ও সিলেটের কথা বিশেষভাবে বলছিলেন আমাকে। দুই দেশের পর্যটনের প্রসারে কী করা যায় সেই ব্যাপারে অনেক কথা বলেছেন তিনি।’

বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ সহজীকরণের উপায় কী? প্রিয়তার মন্তব্য, ‘ভিসা-অন-অ্যারাইভাল সুবিধা যত বাড়বে বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে তত বাংলাদেশের পাসপোর্ট শক্তিশালী হবে। অনেকে না বুঝে বা ভুল নির্দেশনা পেয়ে বিদেশে থেকে যায়। যারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন তারা যদি ভালো উদাহরণ দেখাতে পারেন তাহলেও কিন্তু চিত্রটা বদলাবে। বাংলাদেশিরা কোনও দেশে গেলে থেকে যাবে না, এই বিশ্বাসটা ফেরাতে হবে। আগামীতে যেখানেই যাই, মিস কালচার ওয়ার্ল্ডওয়াইডের আন্তর্জাতিক খেতাবকে বাংলাদেশের জন্য সদ্ব্যবহারের চেষ্টা করবো।’

* বাংলা ট্রিবিউন ফেসবুক লাইভে প্রিয়তা ইফতেখার: