কোন জেলার নামকরণ কীভাবে

রানি রাসমনির নাতির নামের সঙ্গে মিলিয়ে গোপালগঞ্জ

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত।

দেশের আট বিভাগে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ) ৬৪ জেলা। পণ্য, খাবার, পর্যটন আকর্ষণ কিংবা সাংস্কৃতিক বা লোকজ ঐতিহ্যে বাংলাদেশের জেলাগুলো স্বতন্ত্রমণ্ডিত। প্রতিটি জেলার নামকরণের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাস। প্রতিটি স্থানের নামকরণের ক্ষেত্রে কিছু জনশ্রুতি রয়েছে। এসব ঘটনা ভ্রমণপিপাসু উৎসুক মনকে আকর্ষণ করে। তাই বাংলা ট্রিবিউন জার্নিতে ধারাবাহিকভাবে জানানো হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সগোপালগঞ্জ জেলা
মধুমতির কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে গোপালগঞ্জ জেলার সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক অবকাঠামো। সুলতানি ও মোগল যুগে হিন্দু রাজারা এই অঞ্চল শাসন করতেন। জেলা শহরটির অনেক প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। অতীতের রাজগঞ্জ বাজারই এখনকার গোপালগঞ্জ। প্রায় শতাব্দীকাল আগে শহর বলতে যা বোঝায় সেসবের কিছুই এখানে ছিল না। শুধু একটি ছোট্ট বাজার হিসেবে এর পরিচিতি ছিল।

কলকাতার জ্ঞানবাজার নিবাসী প্রীতিরাম দাস ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে অনুর্বর অসমতল মাকিমপুর পরগনার জমিদারি তৎসময়ে ১৯ হাজার টাকায় কেনেন। তার দ্বিতীয় পুত্র রাজচন্দ্র দাস ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ এপ্রিল জেলের মেয়ে রাসমনিকে বিয়ে করেন। জমিদার রাজচন্দ্র তার স্ত্রী রানি রাসমনি ও তিন মেয়েকে রেখে ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুন মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মারা যান। জমিদার রাজচন্দ্র আর রাসমনির কোনও পুত্রসন্তান ছিল না। চারকন্যার মধ্যে প্রথম কন্যা পদ্মমনির বিয়ে হয় রামচন্দ্রের সঙ্গে। মহেন্দ্রনাথ, গনেশচন্দ্র, সৌদামিনী, সুভদ্রা, বলরাম, কালী ও সতীনাথ নামে সাতটি সন্তান জন্ম নেয় তাদের।

প্রথম পুত্র মহেন্দ্রনাথ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে জীবিত বয়োজ্যেষ্ঠ পুত্র গনেশ জমিদার হন। গনেশের একমাত্র পুত্র নবগোপাল ছিলেন রানি রাসমনির অনেক স্নেহের। তার নামের ‘গোপাল’ ও রাজগঞ্জের ‘গঞ্জ’ মিলিয়ে গোপালগঞ্জ নামকরণ হয়। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর জেলার মহকুমা থেকে গোপালগঞ্জ জেলা সৃষ্টি হয়।

গোপালগঞ্জের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স, ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি, কবি সুকান্তের পৈতৃক ভিটা, সদর উপজেলায় জয় বাংলা পুকুর ৭১-এর বধ্যভূমি, অনন্যা চন্দ্র ঘাট, বর্ণি বাওড়, টুঙ্গিপাড়াস্থ বাগানবাড়ি ও কোটালীপাড়া উপজেলাধীন বর্ষাপাড়ার লাল শাপলার বিল, জমিদার গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়ি, উলপুর জমিদার বাড়ি।