এশিয়ার এ বছরের সেরা ১৪টি নতুন হোটেল

পুরো পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি লোকসংখ্যা আছে এশিয়ায়। বিশাল আকৃতির অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে আকাশপথে যাতায়াত করা যাত্রীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বিশ্বের অন্য যেকোনও অংশের তুলনায় এশিয়া আন্তর্জাতিক পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ করে থাকে।

বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর পর্যটন খাত থেকে মোট আয়ের পরিমাণ ৩ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর বেশিরভাগই আসে হোটেল খাত থেকে। ভ্রমণপিপাসুদের কথা মাথায় রেখে এশিয়ায় তৈরি হচ্ছে বেশকিছু নতুন হোটেল ও রিসোর্ট। এছাড়া সংস্কারের পর পুনরায় চালু হচ্ছে কয়েকটি। সেগুলোর মধ্যে সেরা ১৪টি সম্পর্কে জেনে নিন একঝলকে।

Raffles Hotel, Singaporeর‌্যাফেলস হোটেল সিঙ্গাপুর
এশিয়ায় হসপিটালিটির অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড র‌্যাফেলস। সিঙ্গাপুরে তাদের একটি হোটেল ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ হয়। এরপর সেটি আগাগোড়া ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। ডাইনিং সাজাতে বিখ্যাত শেফ অ্যালো ডুকাসের কনসেপ্ট নিয়েছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। র‌্যাফেলস স্পা ছাড়াও এখানে মিলবে ২৪ ঘণ্টার ওয়েটার সেবা। অতিথিরা এলেই সিঙ্গাপুর স্লিং ককটেল পরিবেশন করা হবে। হিস্ট্রি গ্যালারিতে উঠে আসবে ১৮৮৭ সালে গড়ে ওঠা হোটেলটির ঐতিহ্য। এ বছরের মাঝামাঝি আবারও চালু হবে র‌্যাফেলস হোটেল সিঙ্গাপুর।
The Barracks Hotel, Singaporeদ্য ব্যারাকস হোটেল
সিঙ্গাপুরের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী ভবনকে দারুণভাবে সংস্কার করে সাজানো হচ্ছে বিলাসবহুল দ্য ব্যারাকস হোটেল। ১৯০৪ সালে সেনা ঘাঁটি ছিল এটি। দেশটির দক্ষিণ উপকূল সেনতোসা দ্বীপে অবস্থিত এই হোটেলে থাকবে ৪০টি কক্ষ ও স্যুট। এখানকার পুল বেশ আকর্ষণীয়। 
Capella Bangkokক্যাপেলা ব্যাংকক

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক হলো হোটেলের শহর। যেকোনও শ্রেণিপেশার মানুষের সাধ্যের হোটেল পাওয়া যায় এখানে। এ তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে চাও প্রায়া নদীর তীরে অবস্থিত ক্যাপেলা ব্যাংকক। এতে রয়েছে ১০০টি অতিথি কক্ষ ও অত্যাধুনিক ভিলা। ২০১৯ সালে শুরু হতে যাচ্ছে ১০০ কক্ষের হোটেলটি। এখানে ৯ হাজার বর্গফুটের অরাইগা স্পা ও পুলে দারুণ সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে। হোটেলটির রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে একটি বিখ্যাত আর্জেন্টাইন শেফ মাওরো কোলাগ্রেকোর।



Rosewood Bangkokরোজউড ব্যাংকক

থাইল্যান্ডের রাজধানীতে অবস্থিত ১৫৯ কক্ষের হোটেল রোজউড ব্যাংকক। এতে আছে পুল স্কাই ভিলা, বিশাল ছাদ, স্বতন্ত্র পুল, রেস্তোরাঁ, বার ও রোজউড স্পা।
Rosewood Bangkok1হোটেলটির সবচেয়ে উঁচু তলা থেকে দেখা যায় পুরো শহর।
Four Seasons Bangkok at Chao Phraya Riverফোর সিজনস হোটেল ব্যাংকক

থাইল্যান্ডের রাজধানীর চাও প্রায়া নদীর পাশে ৯ একর জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে ফোর সিজনস হোটেল ব্যাংকক। এর ২৯৯টি রুম থেকে দেখা যাবে নয়নাভিরাম সবুজ পরিবেশ। ইতালিয়ান, ফরাসি ও চাইনিজ খাবারের তিনটি পৃথক রেস্তোরাঁ মিলবে এখানে। এছাড়া আছে লাতিন আমেরিকান অনুপ্রাণিত সামাজিক ক্লাব ও বার। ২০১৯ সালের শেষ ভাগে চালু হবে এটি। 
Waldorf Astoria Maldivesওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া মালদ্বীপ ইতাফুশি

চোখধাঁধানো দ্বীপ ও সৈকতের জন্য মালদ্বীপের জুড়ি নেই। এর মধ্যে সাউথ মালে অ্যাটল দ্বীপে গড়ে উঠেছে ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া মালদ্বীপ ইতাফুশি। এতে ভিলার সংখ্যা ১২১টি। প্রতিটিতে একটি করে পুল রয়েছে। স্বচ্ছ নীল জলে গা ভেজানোর সময় সাগরের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। রিসোর্টটিতে খাবারের রেস্তোরাঁ ১০টি। এর মধ্যে একটি রেস্তোরাঁ বানানো হয়েছে গাছের ওপর! নিঃসন্দেহে এটি ইনস্টাগ্রামের জন্য জুতসই ছবি তোলার স্পট। ওয়াটার স্পোর্টস আর স্পা তো আছেই। এর উদ্বোধন হবে এ বছরের এপ্রিলে। মালদ্বীপের অন্যান্য রিসোর্টের মতো ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া মালদ্বীপ ইতাফুশিতে যেতে সামুদ্রিক বিমান লাগবে না। মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইয়টে আধঘণ্টা লাগবে। 
Lelewatu Sumba Island Indonesiaলেলেওয়াতু রিসোর্ট সুম্বা
ইন্দোনেশিয়ার সুম্বা দ্বীপের হয়তো বালি কিংবা লম্বকের মতো পরিচিতি নেই। তবে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এটি কাঙ্ক্ষিত জায়গা। সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, নির্জন সৈকত ও দেশটির সেরা সার্ফিং স্পট মিলবে এখানে। এসব পুঁজি করে এ বছরের শেষের দিকে চালু হবে ১০ একর জায়গায় গড়ে ওঠা লেলেওয়াতু রিসোর্ট সুম্বা। এতে থাকছে মাত্র ২৭টি ভিলা। প্রতিটিই স্থানীয় উপকরণ, হস্তশিল্প ও কারিগর দিয়ে তৈরি হয়েছে। পাহাড়ের কোলে এই রিসোর্ট থেকে চোখে পড়বে হ্রদ ও ভারত মহাসাগর। ফলে সূর্যাস্তে অপূর্ব ছবি তোলা যাবে।
Art Series Hotel Brisbaneহাওয়ার্ড স্মিথ হোয়ার্ভস
অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে স্টোরি ব্রিজের ঠিক নিচে প্রায় ৬ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে তৈরি হয়েছে হোটেলটি। মার্চে চালু হবে এটি। আর্ট সিরিজ হোটেল ব্র্যান্ডের এই হোটেলে আছে ১৬৬টি কক্ষ। ছয় তলা বিশিষ্ট হাওয়ার্ড স্মিথ হোয়ার্ভসের ছাদে পুল থেকে দেখা যাবে ব্রিসবেন নদী। 
Mandarin Oriental Wangfujing, Beijingমান্ডারিন ওরিয়েন্টাল ওয়াংফুজিং
বিলাসবহুল হসপিটালিটি ব্র্যান্ড মান্ডারিন ওরিয়েন্টাল চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে প্রথম হোটেল চালু করছে। এর নাম রাখা হয়েছে মান্ডারিন ওরিয়েন্টাল ওয়াংফুজিং। এতে রয়েছে ৭৪টি কক্ষ ও স্যুট। এখান থেকে চোখে পড়বে প্যালেস মিউজিয়াম। এটি মূলত ঐতিহাসিক চীন সাম্রাজ্যের প্রাসাদ। হোটেলের ছাদবাগানে পাওয়া যাবে শত বছরের ঐতিহ্য। ক্যাফে জি’তে এশিয়ান খাবার আর জনপ্রিয় মান্ডারিন গ্রিল+বারের শাখা আছে এখানে। 
সেন্ট রেজিস
হংকংয়ের ব্যস্ত নগরী ওয়ান চাইয়ে সেন্ট রেজিস ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছে ১২৯টি স্যুট বিশিষ্ট হোটেলটি। এটি সাজিয়েছেন হংকংয়ের স্বনামধন্য ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আন্দ্রে ফু। এই হোটেল দেখা যাবে পর্যটকদের আকর্ষণ ভিক্টোরিয়া হারবার ও কাওলুন বে। এছাড়া আছে একটি পুল, উন্মুক্ত ছাদ, বার ও একটি করে চাইনিজ ও ফরাসি রেস্তোরাঁ। কর্মীদের সেবায় মিলবে ১৯০৪ সালে নিউ ইয়র্কে সেন্ট রেজিস হোটেলের ছায়া। এ বছরের মাঝামাঝি চালু হবে হোটেলটি। 
Rosewood Hong Kongরোজউড হংকং
দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোর দিক দিয়ে হংকংয়ের সব হোটেলকে ছাড়িয়ে যাবে রোজউড হংকং। এর গড়ে তুলেছে নিউ ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানটি। জলের ওপর গড়ে ওঠা ৪৩ তলার সুউচ্চ হোটেলটি কাওলুনের কেনাকাটার স্বর্গ সিম সা সইয়ের প্রাণকেন্দ্রে ভিক্টোরিয়া ডকসাইডে অবস্থিত।
Rosewood Hong Kong1আগামী ১৭ মার্চ এর উদ্বোধন হবে। এতে রয়েছে ৩২২টি কক্ষ। এগুলোর দৈর্ঘ্য ৫৭০ বর্গফুট থেকে শুরু। এছাড়া আছে কমপক্ষে ৯৯০ বর্গফুট দৈর্ঘ্যের ৯১টি স্যুট। এছাড়া থাকছে স্পা, পুল, জিম, বাগান ও আটটি রেস্তোরাঁ। 
Hoshinoya Guguan, Taiwanহোসিনয়া গুগুয়ান
জাপান ভিত্তিক ব্র্যান্ড হোসিনয়া গুগুয়ান আসন্ন গ্রীষ্মে তাইওয়ানে নিজেদের প্রথম রিসোর্ট চালু করতে যাচ্ছে। পাহাড়ঘেরা শান্ত উপত্যকায় এটি অবস্থিত। এর অভ্যর্থনা এলাকা অত্যাধুনিক। সেখানে পৌঁছাতে হলে অতিথিদের প্রথমে পাড়ি দিতে হবে একটি মনোরম বাঁশবাগান।

The Chedi Mumbai, Indiaদ্য চেডি মুম্বাই

ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় শহর মুম্বাইয়ের পোওয়াই অঞ্চলে অবস্থিত ৩১২ কক্ষের হোটেল দ্য চেডি মুম্বাই। এখানে রয়েছে দিনভর খাবারের জায়গা জাপানিজ রেস্তোরাঁ দ্য ভেজেটারিয়ান। স্পা তো আছেই।

The PuXuan Hotel and Spa, Beijingদ্য পুচুয়ান হোটেল অ্যান্ড স্পা

চীনের বেইজিংয়ের প্রাণেকেন্দ্রে গড়ে ওঠা ১১৬ কক্ষের বিলাসবহুল হোটেলটি চালু হয়েছে এই ফেব্রুয়ারিতে। এখানকার কক্ষ থেকে চোখে পড়বে প্যালেস মিউজিয়াম। এটি মূলত ঐতিহাসিক চীন সাম্রাজ্যের প্রাসাদ। এছাড়া সৌজন্য হিসেবে আছে মিনি বার। এর আঙ্গিকে চীনা শিল্প-সংস্কৃতি ও স্থানীয় ঐতিহ্যের প্রতিফলন রয়েছে। 

সূত্র: সিএনএন