সকালে পৌঁছালাম মীরসরাই। সতেজ হওয়ার জন্য বাস থামানো হলো একটি ফিলিং স্টেশনে। সেখানে নাশতা সেরে ট্রেইলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হলো। সকাল ৯টার দিকে আমরা পৌঁছালাম গাইডের বাড়িতে। যারা সোনাইছড়ি ট্রেইলে যান তারা হোটেল হিসেবেও ব্যবহার করে থাকেন এই বাড়ি। সেখানে ব্যাগ রেখে সবাই ট্রেকিংয়ের জন্য প্রস্তুত। যদিও ৩৫ জনের বিশাল দল বলে রওনা দিতে প্রায় ঘণ্টাখানেক লাগলো।
কিছুক্ষণ গাড়ির পথ শেষে শুরু হলো পদযাত্রা। বাকিটা হেঁটেই যেতে হবে। পাঁচ মিনিট পর এলো ঝিরি পথ। স্বচ্ছ জল আর নিচে ছোট ছোট পাথর ওপর থেকে দেখতে দারুণ লেগেছে। ঝিরি ধরেই ট্রেইল শেষ করতে হবে। পথটি ক্রমে সাপের মতো প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে পাহাড়ে ঢুকে পড়েছে। শীতকালেও ঝিরিতে এত পানি দেখে অবাক লাগলো।
আরও সামনে যেতেই খালি পায়ে হাঁটা কষ্টসাধ্য করে তুললো পিচ্ছিল পাথর। ভাগ্যিস পায়ে ট্রেকিং স্যান্ডেল ছিল। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম খাঁড়া একটি ঢালে। গাইড এগিয়ে যাচ্ছেন। পিছু পিছু আমরাও পাহাড় বেয়ে উঠতে লাগলাম। খাঁড়া বেয়ে উঠতে উঠতে কিছুটা ক্লান্তি ভর করলো। পাহাড়ের ওপরে চোখে পড়ে সমতল পথ।
পাহাড় ছেড়ে আমরা আবারও ঝিরি পথ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। দু’দিকেই কালো পাথুরে দেয়াল উপরে উঠে গেছে। সেই কালো দেয়াল থেকে যেন সৌন্দর্যের আভা ছড়াচ্ছে। একটু পরপরই আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়াচ্ছে বিশাল বিশাল পাথরের বোল্ডার। সেগুলোর বিশালতার কারণে কখনও কখনও হামাগুঁড়ি দিয়ে পার হতে হয়েছে।
পথ যত এগোচ্ছে ততই মুগ্ধতা বাড়ছে। একইসঙ্গে মাথার ওপরে সূর্যের আলোর তেজও বেড়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। আমরা অগ্রজ দল একটু হাঁটলেই দেখি পেছনের দল অনেক পেছনে পড়ে যায়। তাই একটু পরপর জিরানোর সুযোগ মিললো।
বিভিন্নজনের লেখায় পড়েছিলাম, সোনাইছড়ি ট্রেইল নাকি অনেক ভয়ঙ্কর। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কষ্ট হয়নি। অন্যদের কাছে হয়তো এই সহজ ট্রেইলই অনেক কঠিন। তবে অনেক জায়গায় ট্রেইলের পাথরগুলো ভয়ানক পিচ্ছিল। আমার ট্রেকিং স্যান্ডেলও কয়েকবার পিছলে গিয়েছিল।
এদিকটায় পানি কম, পাথরগুলোও ছোট ছোট। সবার জন্যই পথচলা সহজ হয়ে গেলো। হাঁটার গতি বাড়লো আপনাআপনি। তখন এক গাইড জানালেন, পথ আর বেশি বাকি নেই। তাই অন্যদের পেছনে ফেলে একাই তার সঙ্গী হলাম। ট্রেইলের এদিকটায় দেখার মতো তেমন কিছু নেই।
টানা মিনিট দশেক হাঁটার পর গাইড জানালেন, শেষ মাথায় চলে এসেছি। সামনে তাকিয়ে দেখি পাহাড় বেয়ে নেমে এসেছে একটি ঝরনাধারা। খুবই অল্প পানি পড়ছে নিচে। বৃষ্টি হলে হয়তো এই ঝরনা হয়ে ওঠে রূপবতী!
কিন্তু তখন বাঁধলো আরেক বিপত্তি। শুকনো পাতায় কিছুতেই আগুন ধরে না। শেষ পর্যন্ত কাগজে আগুন ধরিয়ে ক্যাম্প ফায়ার করতে সক্ষম হই। বাতাসে ধোঁয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে চারদিকে। সেখানে সবাই মিলে অনেকক্ষণ গল্প করে ফিরতি পথ ধরলাম। ফেরাটা অবশ্য পাহাড়ের ওপর দিয়ে সংক্ষিপ্ত পথে।
ছবি: বিল্লাহ মামুন