জনশ্রুতি প্রচলিত আছে, সোনাবিবির মসজিদের পাশে গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের বেগম কুশুম বিবির বাসস্থান ছিল। বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো-ছিটানো ইট ও কঙ্করের প্রাচুর্য দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, একটি রাজকীয় প্রশাসনিক স্থান তথা আন্তঃপ্রাদেশিক অঞ্চল থাকায় এই স্থান অতীতে নগর সভ্যতার সুবাদে উন্নত ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধ্বংসপ্রাপ্ত সোনাবিবির মসজিদের চার কোণের তিনটি পিলারসহ কিছু অংশ আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। ২০০৪ সালে এই ঐতিহাসিক স্থাপনার ওপরেই নির্মিত হয়েছে কুশুম্বা সোনা মসজিদ হাফেজিয়া মাদ্রাসা। এটি তৈরি করতে গিয়ে মসজিদটির প্রাচীন কিছু নিদর্শন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদের প্রবেশ দরজার একটি পাথরের চৌকাঠ এখনও থাকলেও অন্য অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত ইট-পাথরের সঙ্গে পূর্ব দিকে পড়ে আছে।
শামস উদ্দীন আহম্মদ রচিত ও রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘ওঠ’ গ্রন্থের ১৫৫ পৃষ্ঠায় লিখিত একটি তথ্য রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজশাহী জেলা পরিষদের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সুরেন্দ্র মোহন চৌধুরী সোনাদীঘির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত সোনাবিবির মসজিদের ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি শিলালিপি আবিষ্কার করেন। এতে জানা যায়, ১৪৯৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর তথা আরবী ৯০৪ হিজরীর ১৩ জমাদিউল আউয়ালে নির্মিত হয়েছিল সোনাবিবির মসজিদ।
‘রিয়াজ-উস-সালাতীন’ থেকে সুখময় মুখোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন, ‘হোসেন শাহ তার পিতা আশরাফ আল হোসেন ও ভ্রাতা ইউসুফের সঙ্গে সুদূর তুর্কমেনিস্তানের তারমুজ শহর থেকে রাঢ়ের চাঁদপুর মৌজায় বসতি স্থাপন করেন। সেখানকার কাজী তাদের দুই ভাইকে শিক্ষা দেন। তারা উচ্চবংশ মর্যাদার কথা জেনে নিজের কন্যার সঙ্গে বিয়ে দেন। এরপর আলাউদ্দিন হোসেন শাহ গৌড়ের সুলতান হন।’
লেখক আশরাফুল ইসলাম পলাশ কিছু তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কুশুম বিবি ও সোনাবিবির সম্পর্কে সঠিক কোনও বিবরণ লিপিবদ্ধ না থাকলেও বিতর্ক আছে। তবে কুশুম বিবি ও সোনাবিবি নামে যে কেউ সুদূর অতীতে ছিলেন তা ধারণা করা যায়। কারণ অনেকেই মনে করেন কুসুম বিবির মৌজার নাম কুশুম্বা হয়েছে।’
জনশ্রুতি রয়েছে, গৌড়ের বেগম কুশুম বিবি নির্বাসিতা হয়ে মান্দা এলাকায় বিপুল ধনরত্নসহ বনবাসে আসেন। তিনি কুশুম্বার অদূরে ধনতলা নামক স্থানে তাঁবু স্থাপন করেন। এর কয়েকদিন পর সোনার মৃত্যু হয়।
এই ইউএনও মনে করেন, মসজিদটি সুলতানি আমলের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হতে পারে। তাই ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে যোগাযোগ করেছেন তিনি। ঐতিহাসিক স্থানটি সংরক্ষণে তার মতো স্থানীয় সুশীল সমাজের অনেকেই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।