ট্রাভেলগ

অবহেলিত সিরাজউদ্দৌলা, যত্নে আছে মীর জাফরের কবর

 

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সমাধিবাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। স্বাধীনতা রক্ষায় যুদ্ধ করে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হন, প্রাণ হারান আঁততায়ীর হাতে। এসবের পেছনে মূল কলকাঠি নাড়েন তার সিপাহসালার বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর। মৃত্যুর পরেও বীর নবাবের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হচ্ছে না। চরম অবহেলা ও অযত্নে রয়েছে তার সমাধিস্থল। অন্যদিকে ব্রিটিশদের সঙ্গে আঁতাত করা মীর জাফর, তার তিন স্ত্রী ও বংশধরদের কবরস্থান বেশ সংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের অবহেলার কারণেই এমন বৈষম্য চোখে পড়ছে।

সিরাজউদ্দৌলার সমাধিইতিহাসের ঘৃণিত ব্যক্তি মীর জাফর ১৭৫৭ সালে ইংরেজদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করে ক্ষমতায় আসেন। তার মৃত্যুর পর তিন স্ত্রী ও ১১০০ বংশধরকে মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদে কবর দেওয়া হয়। তার কবরস্থানটি অত্যন্ত সুরক্ষিত। দর্শনার্থীদের ভারতীয় ১৫ রুপি টিকিট কেটে সেখানে প্রবেশ করতে হয়। ফটকটি যথেষ্ট সুরক্ষিত। সেখানে পারিবারিকভাবে সার্বক্ষণিক দেখভাল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে লোকজন। 

সিরাজউদ্দৌলার স্বজনদের সমাধিঅন্যদিকে সিরাজউদ্দৌলা ও তার নানা আলীবর্দি খাঁসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সমাধিস্থল অনেকটাই অবহেলিত ও অরক্ষিত অবস্থায় দেখা গেলো। দেখাশোনার কোনও লোকজন না থাকায় সেখানে প্রবেশের দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। দেয়ালের পলেস্তার খসে শ্রীহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সিরাজউদ্দৌলার সমাধি দেখতে যাওয়ার জন্য ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। এখনও নৌকায় ভাগীরথী নদী পার হয়ে সেখানে যেতে হয়।

সিরাজউদ্দৌলার সমাধিস্থলের প্রধান ফটকতবে সিরাজের সমাধিস্থলে প্রবেশে কোনও টিকিট কাটতে হয় না। সেখানকার গাইডদের ৪০ থেকে ১০০ টাকা দিয়েই বিস্তারিত ইতিহাস জানতে পারেন দর্শনার্থীরা।

শুধু তাই নয়, মুর্শিদাবাদের জাফরাগঞ্জে সিরাজউদ্দৌলাকে যে স্থানে হত্যা করা হয়, সেটিরও বেহাল অবস্থা। সেখানকার প্রধান ফটক পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। কোনও তত্ত্বাবধায়ক বা নিরাপত্তারক্ষী নেই। শুধু একটি সাইনবোর্ডে ‘প্রবেশ নিষেধ’ লেখার মধ্যেই যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ।

মীর জাফরের কবর অবশ্য সিরাজউদ্দৌলা যে স্থান থেকে সৈন্যবাহিনী নিয়ে পলাশির প্রান্তরে ইংরেজদের পরাস্ত করার যাত্রা শুরু করেছিলেন, ঐতিহাসিক সেই মতিঝিল পার্ক একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করেছে ভারত সরকার। সেখানে ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনা উপস্থাপনের পাশাপাশি সুরের মূর্ছনার মাধ্যমে পলাশির যুদ্ধ ও সেই ইতিহাসের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে।

মীর জাফর ও তার বংশধরদের কবরস্থানের প্রধান ফটকবাংলাদেশ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ঐতিহাসিক এসব স্থান দেখতে গেছেন শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র। তিনি সিরাজের সমাধি ও মীর জাফরের কবরস্থানের দুই ধরনের ব্যবস্থাপনা দেখে হতাশা প্রকাশ করেন। এখানকার ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি সিরাজউদ্দৌলার সমাধি! বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। বাংলার একজন বীরসেনার সমাধিস্থলের এমন দুরবস্থা দেখে হতবাক আমরা। আর বেঈমান মীর জাফরের কবর কতো সুন্দর করে রাখা হয়েছে। সিরাজের সমাধিস্থলের দরজা খোলা, গরু-ছাগল সবই প্রবেশ করছে। যেন দেখার কেউ নেই।’

মীর জাফর ও তার বংশধরদের কবর স্থানীয় এক ভ্যানচালক কথায়, ‘শুনেছিলাম সিরাজের কবরের সামনের নদীতে একটি সেতু হবে। মাপ-জোখও হয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। টিকিট সিস্টেমও নেই। এ কারণে মানুষের আগ্রহও নেই।’

সাজ্জাদ নামে একজন গাইড বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুনেছিলাম সিরাজের সমাধি পরিদর্শনে টিকিট ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হবে। কিন্তু এখনও কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। আমরা যারা গাইড হিসেবে কাজ করি, তারাই এর দেখাশোনা করছি।’
ছবি: লেখক