ভোরবেলা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেন ধরলাম। শহর ছেড়ে ট্রেন চলছে। যতই সামনে এগোচ্ছি ততই সবুজের সমারোহ চোখে পড়ছে। দুপুরে গিয়ে পৌঁছালাম গন্তব্যে। চারপাশে সারি সারি চা বাগান।
আমরা গিয়েছিলাম মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে। ইউনিয়ন হলেও এলাকাটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে আছে বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্কুল, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা, স্যাটেলাইট চ্যানেলের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা আর চা শ্রমিকদের জন্য ডানকান ব্রাদার্স ফাউন্ডেশনের বেশ উন্নত একটি হাসপাতাল।
এছাড়া এই ইউনিয়নে সুইস ভ্যালি নামের একটি রিসোর্টের নাম শুনেছি। এতে থাকার জন্য ছয়টি সুন্দর কটেজে রয়েছে ১১টি কক্ষ। প্রতিটি কটেজ আলাদা। বিভিন্ন ধরনের বাঁশ ও কাঠের সমন্বয়ে তৈরি কটেজগুলো বেশ সুন্দর।
আগেই জেনেছি, সুইস ভ্যালি রিসোর্টে খোলা জায়গায় রাতের খাবারের ব্যবস্থা আছে। বিশেষ করে বারবিকিউ’র ব্যবস্থা আছে জেনে খুবই ভালো লাগলো। সেই সঙ্গে স্থানীয় আয়োজন বা গানের ব্যবস্থা।
আমরা যেদিন গিয়েছি সেদিনই আকাশ ভেঙে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা গেলো। তার আগেই রিসোর্টের এক কোণে ১ হাজার ৯৫৯ বর্গফুটের সুইমিং পুলে গিয়ে নামলাম আমরা। আমার সাড়ে তিন বছর বয়সী ছেলে নুহান নেহাদ পুলে নেমে খুবই খুশি। নীল স্বচ্ছ পানি দেখে সে বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে লাফিয়ে পড়তে চায়! সুইমিং পুল তার খুব পছন্দের। যেখানেই পায় খুশিতে ডগমগ হয়ে যায়!
পরদিন সকালে উঠেই পুরো সুইস ভ্যালি ঘুরে দেখলাম। কটেজগুলোর সামনে মাটি কেটে কেটে সুন্দরভাবে পথ তৈরি করা। একটি টিলার ওপরে আছে বসার জায়গা। কটেজের একপাশে রয়েছে সুন্দর একটি লেক।
এককথায় সুইস ভ্যালি রিসোর্ট চমৎকার একটি জায়গা। রিসোর্টের কর্মীরা যেকোনও প্রয়োজনে সহায়তা করেন। মূল ফটকে সবসময়ই প্রহরী থাকেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চা-বাগান শমশেরনগরেই অবস্থিত। এখানে এসে চা শ্রমিকদের জীবনযাপন, খাশিয়া গ্রাম, মণিপুরি গ্রাম, মাধপুর লেক, লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্ট, মাগুরছাড়া গ্যাসফিল্ড, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, ছোট চিড়িয়াখানা, সাত রঙের চা, বাইক্কা বিল, হাকালুকি হাওর, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত উপভোগ করা যায় চাইলেই।
ঢাকা থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরত্বে সুইস ভ্যালি রিসোর্ট। চাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। রিসোর্টে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে নিয়মিত ট্রেন ছাড়ে। এগুলো হলো পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনি এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেস।
শমসেরনগর রেলস্টেশন থেকে রিসোর্টের দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। ট্রেনে করে যেতে চাইলে শমসেরনগর স্টেশন বা ভানুগাছি স্টেশনে নামতে হবে। বাসে গেলে শ্রীমঙ্গল যেতে হবে। এরপর সিএনজির মাধ্যমে রিসোর্টে যাওয়া যায়। বিমানে চড়ে যেতে চাইলে সিলেট বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে রিসোর্টে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আগে থেকে রিসোর্টে যোগাযোগ করলে গাড়ি মিলে যেতে পারে।
ছবি: লেখক