পর্যটকদের আকর্ষণ মাটিরাঙার শতবর্ষী বটগাছ

মাটিরাঙার শতবর্ষী বটগাছপর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার শতবর্ষী বটগাছ। সর্পিল রাস্তা বেয়ে পাহাড়ের ওপরে প্রায় এক একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এটি। বটগাছের জন্যই এই এলাকার নামকরণ হয়েছে বটতলী। আশেপাশের দশ গ্রামের বাসিন্দাদের পাশাপাশি বটগাছটি দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকে আসে। দিনে দিনে এই সংখ্যা বাড়ছে।

বটগাছটির বয়স নিয়ে ধারণা নেই বটতলীর বাসিন্দাদের। এছাড়া কে বা কারা এটি রোপণ করেছে তাও জানা নেই কারও। গ্রামের বয়োবৃদ্ধা আমিনা বেগমের দাবি, এর বয়স প্রায় ২০০ বছরের ওপরে।

শতবর্ষী বটগাছ বটতলী গ্রামের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। কালের পরিক্রমায় এটিকে ঘিরে নানান কাহিনি ছড়িয়েছে। গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ আবুল কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বটগাছটি অনেকের কাছে ভূত-প্রেতের জন্য একসময় আতঙ্কের ছিল। তবে এখন তা কেটে গেছে। মহালছড়ি উপজেলার ইসলামপুরের বাসিন্দা ফারুখ হোসেনের ধারণা, মায়েরা সোনামণিদের ঘুম পাড়াতে এসব গল্প বলতো।

মাটিরাঙার শতবর্ষী বটগাছস্থানীয় পাহাড়িরা বিশেষ করে ত্রিপুরা ও চাকমারা এই গাছের নিচে পূজা করে বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে আরোগ্যের প্রত্যাশা রাখে। বাঙালিরাও বিপদ থেকে রক্ষা পেতে মানত করে এখানে।

মনোমোহন ত্রিপুরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সনাতন ধর্মালম্বীরা বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে বটগাছটিতে ফুল দিয়ে পূজা করে। তাদের বিশ্বাস, গাছটির ভেতর একটি বড় সাপ থাকে। অমাবস্যা পূর্ণিমার রাতে সে বের হয়। এরপর ঘুরে-ফিরে ভোর হওয়ার আগে আবারও বটগাছের ভেতরে ফিরে যায়। তবে এ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কোনও ঘটনা নেই।’

গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বাবু বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে পহেলা বৈশাখে এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে আশেপাশের দশ গ্রাম থেকে মানুষ আসে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ নানান বয়সীরা মেলায় আনন্দে মাতে।

মাটিরাঙার শতবর্ষী বটগাছমাটিরাঙা উপজেলার সাংবাদিক মুজিবুর রহমানের মন্তব্য, পাহাড়ঘেরা এমন বটগাছ খুঁজে পাওয়া বিরল। তিনি মনে করেন, শতবর্ষী বটগাছ খাগড়াছড়ির একটি ঐতিহ্য। তার অভিমত, এটি সংরক্ষণ করলে ও আশেপাশের এলাকায় প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করলে বিপুল পর্যটক সমাগম হতে পারে।

পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে এই বটগাছের বর্ণনা শুনে দেখতে এসেছেন মাটিরাঙা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাস চাকমা। এত বড় বটগাছ কখনও দেখেননি উল্লেখ করেন তিনি। ভ্রমণপিপাসুদের মাটিরাঙা উপজেলার বটতলীতে অবস্থিত শতবর্ষী বটগাছ দেখতে আসার অনুরোধ করেছেন এই রাজনীতিবিদ।

ইতোমধ্যে বটগাছটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি স্কুল, একটি মাদ্রাসা ও কয়েকটি ছোট দোকান। এ কারণে এর বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলতে হয়েছে। পাশের রাস্তা চওড়া করতে গিয়েও বটগাছের বিভিন্ন অংশ কাটতে হয়েছে।

মাটিরাঙার শতবর্ষী বটগাছ২০১৪ সালে প্রথম মাটিরাঙা উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন বটগাছটি রক্ষা করতে এগিয়ে আসে। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডক্টর মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বটগাছের চারপাশে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প হাতে নিয়ে আংশিক বাস্তবায়ন করেন।

পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখ করে মাটিরাঙা পৌরসভার মেয়র সামছুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঐতিহ্যবাহী বটগাছটি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি আমরা। পর্যটকদের বসার জন্য বেঞ্চ ও গোলঘর তৈরি করা হয়েছে। খাবারের দোকানপাট রয়েছে এখানে।’

পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য দুই বছর আগে রাস্তার উন্নয়ন করা হয়েছে বলে জানান মেয়র।

মাটিরাঙার শতবর্ষী বটগাছবটগাছ দর্শন ছাড়াও পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি, সবুজ পাহাড় ও ঝিরঝিরে বাতাস উপভোগ করেন ভ্রমণপ্রেমীরা।

স্থানীয়দের চাওয়া— শুধু মাটিরাঙা উপজেলা পরিষদ নয়, শতবর্ষী এই বটগাছটিকে ঐতিহ্যের অংশ করতে এগিয়ে আসবে পর্যটন মন্ত্রণালয়।