বাংলাদেশে প্রতি বছরের আগস্টে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়। চলে এপ্রিল পর্যন্ত। এর মধ্যে নভেম্বর থেকে মার্চে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম চোখে পড়ে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৫০০ জন পর্যটক সেন্টমার্টিন দ্বীপে যায়। বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপ্রেমী এই দ্বীপের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের মাধ্যম জাহাজ ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। কিন্তু জাহাজ ও ট্রলারগুলো তেল ও বর্জ্য পদার্থ সমুদ্রে ফেলছে। সামুদ্রিক বাস্তুবিদ্যার দূষণে চলক হিসেবে কাজ করছে এগুলো। একইভাবে পর্যটক ও স্থানীয়রা ব্যবহৃত পণ্যের উচ্ছিষ্ট অংশ তথা অপচনশীল দ্রব্য (প্লাস্টিকের উপকরণ, প্লাস্টিক ক্যান ইত্যাদি) ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে সমুদ্রের পানিতে ফেলে পরিবেশকে দূষিত করছে। প্রবাল হচ্ছে দ্বীপপুঞ্জের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, প্লাস্টিক ও তেল দূষণের কারণে এর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
পর্যটনে তিন ধরনের প্রভাব (অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত) বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন। অগোছালো পর্যটনের প্রভাবগুলো একইসঙ্গে ইতিবাচক, নেতিবাচক বা উভয়ই হতে পারে।
সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক সমস্যাটি হলো দ্বীপে পাওয়া মাছগুলো এখন ক্ষতিকর ভারী ধাতব পদার্থের কারণে দূষিত হচ্ছে। আর কোরাল ব্লিচিং এখন দ্বীপের সাধারণ ঘটনা। সামগ্রিকভাবে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির জন্য টেকসই পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। ১৯৫০ সালের গোড়ার দিকে শুরু হয়েছিল পর্যটন শিল্প। এখন এই খাত থেকে প্রায় একহাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হচ্ছে। এর মাধ্যমে ৭০ কোটিরও বেশি মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে।
থাইল্যান্ড ২০১৮ সালে পর্যটন থেকে আয় করে ৫ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার যা ১৯৬০ সালে ছিল ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। ভারত পর্যটন থেকে ২০১৮ সালে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করে যেখানে বাংলাদেশ ২০১৭ সালে আয় করে ৩৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের দুটি সমুদ্র সৈকত (এর মধ্যে একটি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত) থাকা সত্ত্বেও পর্যটন শিল্প থেকে আমাদের আয় খুবই অল্প। যদিও স্থানীয়দের কাছে পর্যটনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একটি প্রবন্ধে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেরিন সায়েন্সেসের মো. শিমুল ভূঁইয়া ও মো. শফিকুল ইসলাম এবং ফিশারিজ ও কক্সবাজারের বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ।
প্রাবন্ধিকদের মন্তব্য, ‘পর্যটন পরিবেশের ক্ষতি করবে না তেমন টেকসই পর্যটনকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে প্রথমে। অন্যথায় কালের স্রোতে বিলীন হয়ে যাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এর সুষ্ঠু ও অর্থবহ ব্যবস্থাপনার জন্য এখনই দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সর্বোপরি দেশের সাধারণ নাগরিককে পর্যটনের ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। দ্বীপের পরিবেশ যেন নষ্ট না হয় সেজন্য নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আশেপাশের মানুষকে সচেতন করতে হবে।’