শহীদ সিরাজ লেক মূলত টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত একটি কোয়ারি। ১৯৪০ সাল থেকে এখানে চুনাপাথর সংগ্রহ করে সিলেটের ছাতক উপজেলার সুরমা নদীর তীরে আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট কোম্পানির কারখানায় পাঠানো হতো। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এই কোয়ারির সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
মেঘালয় পাহাড়, সবুজ বনানী, উঁচু-নিচু টিলা এখানকার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। বর্ষাকালে লেকের পানি কিছুটা ঘোলাটে হলেও শীত মৌসুমে তা নীলাভ বর্ণ ধারণ করে। লেকের এই রূপ পর্যটকদের বিমোহিত করে।
সম্প্রতি এলাকাটির খুব কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে একটি শিমুল বাগান। এর ওপর দিয়েই বয়ে গেছে মোহনীয় যাদুকাটা নদী। লেক, পাহাড়, নদী আর হাওরের এই মিতালী পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেয় দারুণ ভালোলাগায়! দিগন্তে মেশা সবুজ ধানের মাঠকে মনে হবে প্রকৃতির সাজানো মনোরম আঙিনা।
১৯৫২ সালে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সিরাজুল ইসলাম। মকতুল হোসেন ও গফুরুন্নেছা দম্পতির ছেলে। তার ছোট দুই বোন ছিল। ১৯৭১ সালে সিরাজ ছিলেন ঊনিশ বছরের টগবগে তরুণ। তখন পড়তেন কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের বিএ প্রথম বর্ষে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে অস্ত্র হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গ্রামের কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। ছেলের এমন সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না সিরাজের বাবা-মা।
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে একদিন বাড়ির সামনে দিয়ে ইটনা সদরের দিকে চলে যাওয়া পথে হাঁটা শুরু করেন সিরাজ। তার বাবা দৌড়ে এসে সেই সড়কে দাঁড়িয়ে ছেলের চলে যাওয়া দেখছিলেন। যতক্ষণ প্রিয় পুত্র সিরুকে দেখা যায় ততক্ষণ তিনি সেখানেই নিশ্চল দাঁড়িয়েছিলেন। পরে দৃষ্টিসীমায় সিরু মিলিয়ে যাওয়ার পর তিনি ধপ করে মাটিতে বসে পড়েন। হয়তো তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এটাই ছিল সিরাজকে তার শেষ দেখা। ১৯৭১ সালের আগস্টে সাচনা বাজার দখল করতে গিয়ে আরও সাত মুক্তিসেনার সঙ্গে প্রাণ হারান বীরযোদ্ধা সিরাজ।
ঢাকা থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়। এরপর মোটরসাইকেল বা সিএনজিতে চড়ে (জনপ্রতি ১০০ টাকা) তাহিরপুর উপজেলা অথবা লাউড়েরগড় যেতে হয়। কেউ চাইলে পায়ে হেঁটে লাউড়েরগড় যেতে পারেন। সেখান থেকে হেঁটে এগোলেই যাদুকাটা নদী ও বারেক টিলা। এরপর মোটরসাইকেল ভাড়া করে সীমান্ত দিয়ে টেকেরঘাট, ভাড়া জনপ্রতি ৭০-৮০ টাকা। বর্ষায় তাহিরপুর থেকে নৌকায় যাওয়ার ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। এজন্য সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। শুষ্ক মৌসুমে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেলে চড়ে টেকেরঘাট যাওয়া যায়।
ছবি: লেখক