নবাবগঞ্জের আশুরার বিলে অতিথি পাখির কলরব

আশুরার বিলে পাখিদিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার আশুরার বিলে আবারও ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। ফলে এই জায়গা হয়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন। শত শত পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে চারপাশ। দর্শনার্থীরা এখন এই কোলাহল উপভোগ করছেন।

নবাবগঞ্জ বিট কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এখানকার বিশাল শালবনের আয়তন প্রায় ১ হাজার ৪০০ একর। এর মধ্যে ৬০০ একর জায়গায় বিস্তৃত আশুরার বিল। বন ও বিলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে নির্মিত ৯০০ মিটার দীর্ঘ ইংরেজি ‘জেড’ আকৃতির শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কাঠের সেতু। এর সুবাদে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বিল ও বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা সহজ হয়েছে।

পর্যটনের সম্ভাবনা থাকায় ২০১০ সালে সরকার জায়গাটিকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। একইসঙ্গে বিলটি বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মৎস্যের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিলে সবসময় পানি ধরে রাখতে একটি রাবার ক্রসড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বিলে নানান ধরনের ফুল ফোটে। আশুরার বিলে ইতোমধ্যে শত শত অতিথি পাখি এসেছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য দর্শনার্থী কাঠের সেতু, বিল ও বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি অতিথি পাখির কলতানে মুগ্ধ হচ্ছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আশুরার বিলের ভিডিও দেখে ভালো লাগে রবিউল ইসলাম ও আয়েশা খাতুনের। দিনাজপুর থেকে আসা এই দম্পতি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আশুরার বিল দেখতে দিনাজপুর থেকে এসেছি আমরা। এখানে এসে আমাদের খুবই ভালো লাগছে। বিশাল বিল আর দুই ধারে বনের প্রকৃতি অপূর্ব। এর সঙ্গে কাঠের সেতু বনের মাঝখানে সেতুবন্ধনের কাজ করছে। বিকালের পর থেকে প্রচুর অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দ মনোমুগ্ধকর। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে পেরে আমরা খুশি।’

স্থানীয় তরুণ রুবেল, সাজু ও বিনোদের চোখে, অতিথি পাখির সুবাদে আশুরার বিল ও জাতীয় উদ্যানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে বিল ও বনের মাঝে কাঠের সেতু তৈরির ফলে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। অতিথি পাখি যেন কেউ শিকার বা বিরক্ত করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

আশুরার বিলনবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পারুল বেগম ও কুশদহ ইউপি চেয়ারম্যান সায়েম সবুজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নবাবগঞ্জের জাতীয় উদ্যান ও আশুরার বিল ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় স্থান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান যোগদানের পর তিনি ও দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য মিলে এই জায়গা দখলমুক্ত করেন। তাদের উদ্যোগে এখানে দীর্ঘস্থায়ীভাবে পানি থাকছে। তাই বিলে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটছে, দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ থাকছে। এছাড়া সমাগম হয় অতিথি পাখির। ফলে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন।’

সদ্য বিদায়ী নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুরো বিল একসময় পানিতে ভরে থাকতো, শাপলা ও পদ্ম ফুল ফুটতো। তাই এখানকার অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র ছিল আশুরার বিল ও জাতীয় উদ্যান। মানুষ এখানে বনভোজন করতে আসতো, অবসর কাটাতো। কিন্তু দখলের পর বিল অনেকটা ভরাট হয়ে গেলে সেখানে ধান চাষ শুরু হয়। এ কারণে এখানকার শাপলা, পদ্ম ও দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হতে থাকে। স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে বিল দখলমুক্ত করে এর জলাশয় উন্মুক্ত করার পর চিত্রটা বদলেছে। এখন অতিথি পাখির সুবাদে পর্যটক সমাগম হচ্ছে। বিলে যত মাছ ও উদ্ভিদ আছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’

আশুরার বিলে ভ্রমণপ্রেমীরাইউএনও আরও জানান, কেউ যেন পাখি ও মাছ শিকার করতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।

বনবিভাগের নবাবগঞ্জ বিট কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার আশাব্যঞ্জক কণ্ঠে শোনালেন, ‘আশুরার বিল দখলমুক্ত করার পর এখানে জলজ উদ্ভিদ জন্মানো ও নানান প্রজাতির প্রচুর পাখি সত্যি চোখে পড়ার মতো। এখানে যেসব পাখি রয়েছে সেগুলোর খাদ্যের জন্য বনবিভাগ ইতোমধ্যে বিভিন্ন ফলের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে লটকন, ডেওয়া, ডুমুরসহ দেশীয় প্রজাতির প্রায় ৭২ হাজার চারা রোপণ করবো, যাতে এসব ফল পাখি সহজেই খাবার হিসেবে গ্রহণ করে নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে পারে।’