পর্যটন মৌসুমের শুরু থেকেই গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ভিড় করছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ভ্রমণপ্রেমী। ফলে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা এখানে দেখা যায় আনন্দময় পরিবেশ। দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বনভোজন হয়ে থাকে এখানে। পর্যটক সমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাহাড়ের বুক জুড়ে নতুনভাবে তৈরি হয়েছে সুদীর্ঘ পায়ে হাঁটা পথ। লেকের পাড় ধরে পাহাড় ছুঁয়ে হেঁটে যাওয়ার অনুভূতি অন্যরকম। এভাবে পর্যটকরা যাচ্ছেন এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পড়ন্ত বিকালে পাহাড়ের লেকে ডিঙি নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ান অনেকে। পাশাপাশি কফিতে চুমুক দিয়ে আড্ডা আর গানে মেতে উঠছেন ভ্রমণপিপাসুরা। বিভিন্ন জায়গায় বসে কিংবা দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে ছবি ও সেলফি তোলা তো চলছেই!
১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অবকাশ কেন্দ্রটি তৈরি হয়। শেরপুর জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের প্রায় ৯০ একর পাহাড়ি এলাকা জুড়ে এর অবস্থান। পাহাড়, বনানী, ঝরনা, হ্রদ ছাড়াও অবকাশ কেন্দ্রটিতে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেশকিছু স্থাপনা ও ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে।
গজনীর প্রবেশমুখে দেখা যায় মৎস্যকন্যা (জলপরী)। এছাড়া আছে ডাইনাসোরের প্রতিকৃতি, ড্রাগন টানেল, দণ্ডায়মান জিরাফ, পদ্ম সিঁড়ি, লেক ভিউ পেন্টাগন, হাতির প্রতিকৃতি, স্মৃতিসৌধ, গারো মা ভিলেজ, কৃত্রিম জলপ্রপাত, কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিফলক অন্যতম। এর মধ্যে গারো মা ভিলেজে লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। এখানে মাশরুম ছাতার নিচে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্তজোড়া ধান ক্ষেত ও পাহাড়ি জনপদের ভিন্ন জীবনমান উপভোগ করা যায়। এছাড়া পাহাড়-টিলার অপরূপ দৃশ্য উপভোগের জন্য ওয়াচ টাওয়ার বানানো হয়েছে। ছোট পরিসরের চিড়িয়াখানায় রয়েছে মেছো বাঘ, অজগর সাপ, হরিণ, ভাল্লুকসহ প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রাণী।
শিশু দর্শনার্থীদের জন্য চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্কের পাশাপাশি রয়েছে শিশু কর্নার। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) পর্যটন কেন্দ্রটি ঘুরে চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্কে সকাল থেকেই শিশুদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। ছোট্ট সোনামনিদের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে শিশু পার্ক। বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা। সন্তানদের হাসিখুশি মুখ স্বাভাবিকভাবেই প্রশান্তি এনে দিয়েছে অভিভাবকদের।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, ‘গজনী অবকাশে আগের চেয়ে দর্শনার্থীর সমাগম বেড়েছে। এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকায় নিরাপত্তাজনিত কোনও সমস্যা নেই। পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারেন সেজন্য সাদা পোশাকে আইন-শৃক্সখলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।’
আরও পড়ুন–
শেরপুরের পর্যটন কেন্দ্রগুলো দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর
গাজী বংশের শেষ জমিদারের নামে শেরপুর